সুনামগঞ্জসহ সিলেট যেকোনো সময় ৮ মাত্রার বেশী ভূমিকম্প

Home Page » সারাদেশ » সুনামগঞ্জসহ সিলেট যেকোনো সময় ৮ মাত্রার বেশী ভূমিকম্প
বৃহস্পতিবার ● ৬ মার্চ ২০২৫


ফাইল ছবি

ব্যুরো চীফ, সিলেট বঙ্গনিউজ :

ভূমিকম্পের ‘ডেঞ্জার জোন’ সুনামগঞ্জ ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রুবাঈয়্যাৎ কবীর গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

রুবাঈয়্যাৎ কবীর বলেন, বুধবার বেলা ১১টা ৩৬ মিনিটে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। উৎপত্তিস্থল ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা। ঢাকা থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ৪৪৯ কিলোমিটার। উৎপত্তিস্থলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৬।

এটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হিসেবে বিবেচিত বলে জানান রুবাঈয়্যাৎ কবীর।

তবে ভূমিকম্পে কোনো ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে গত ১০ দিনে ৪ বার দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হলো।

এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি( মঙ্গলবার) রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সকাল ৬টা ৪০ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ১। এটি মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প ছিল। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশা–সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরই এই ভূমিকম্পের উৎসস্থল। ফলে বেশি প্রভাব পড়েছে উপকূলের জেলাগুলোতে। বাংলাদেশ থেকে উৎপত্তিস্থল ছিল ৫০১ কিলোমিটার দূরে।

এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি(বুধবার) দিবাগত রাত ২টা ৫৫ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে সিলেট ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ভারতের আসাম রাজ্যের মরিগাঁও। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৩। এটি মাঝারি মাপের ভূমিকম্প হিসেবে বিবেচিত হয়।

একদিনের ব্যবধানে ২৭ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে দেশের সর্বোত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে।বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩ টা ৬ মিনিটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে সেখানে।

এরআগে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের তিন তারিখ

শুক্রবার সকালেও সিলেটসহ দেশের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল। এর উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এবং কাছাকাছি এলাকায় ২৮টি ভূমিকম্প হয়। ২০২৩ সালে এর সংখ্যা ছিল ৪১। গত বছর তা বেড়ে হয় ৫৪।এটি ছিল আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এভাবে ছোট বা মাঝারি ভূমিকম্পের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াটা বড় ভূমিকম্পের পূর্বলক্ষণ বলে মনে করছেন ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞরা। ঐতিহাসিক ভূমিকম্পের পরম্পরা বিশ্লেষণ এবং দিন দিন সংখ্যা বৃদ্ধির কারণেই এমনটা মনে করছেন তাঁরা। ভূমিকম্পের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা বেড়ে গেলেও তাকে মোকাবিলায় যথাযথ প্রস্তুতির অভাব আছে বলেই তাঁরা মনে করেন। এখনো ভূমিকম্পের প্রস্তুতি ভূমিকম্প-পরবর্তী সম্ভাব্য উদ্ধার প্রস্তুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এর জন্য নাগরিক শিক্ষা ও মহড়া—উভয়েরই অভাব আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একসময় পৃথিবীর সব স্থলভাগ একত্রে ছিল। পৃথিবীর উপরিভাগের প্লেটগুলো ধীরে ধীরে আলাদা হয়ে গেছে। এই প্লেটগুলোকেই বিজ্ঞানীরা বলেন টেকটোনিক প্লেট। এগুলো একে অপরের সঙ্গে পাশাপাশি লেগে থাকে। কোনো কারণে এগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হলেই তৈরি হয় শক্তি। এই শক্তি সিসমিক তরঙ্গ আকারে ছড়িয়ে পড়ে। যদি তরঙ্গ শক্তিশালী হয়, তাহলে সেটি পৃথিবীর উপরিতলে এসে পৌঁছায়। আর সেখানে পৌঁছানোর পর শক্তি অটুট থাকলে সেটা ভূত্বককে কাঁপিয়ে তোলে। এই কাঁপুনিই ভূমিকম্প। এই প্লেটের নানা ভূগর্ভস্থ চ্যুতি আছে। সেগুলোই ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত।

ভূতত্ত্ববিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অবজারভেটরির সাবেক পরিচালক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ট আলাদা আলাদা বিট বা প্লেট টেকটোনিক দিয়ে তৈরি হয়েছে, যা নিচের নরম পদার্থের ওপরে ভাসছে। সারা পৃথিবীতে এরকম বড় সাতটি প্লেট এবং অসংখ্য ছোট ছোট সাব-প্লেট রয়েছে।

এগুলো যখন সরে যায় বা নড়াচড়া করতে থাকে বা একটি অন্যদিকে ধাক্কা দিতে থাকে, তখন ভূ-তত্ত্বের মাঝে ইলাস্টিক এনার্জি শক্তি সঞ্চিত হতে থাকে। সেটা যখন শিলার ধারণ ক্ষমতার পেরিয়ে যায়, তখন সেই শক্তি কোন বিদ্যমান বা নতুন ফাটল দিয়ে বেরিয়ে আসে। তখন ভূ-পৃষ্টে কম্পন তৈরি হয়, সেটাই হচ্ছে ভূমিকম্প।

ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি প্লেট থাকার কারণে এসব এলাকা ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভু-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার আরও বলেন, উত্তরে তিব্বত সাব-প্লেট, ইন্ডিয়ান প্লেট এবং দক্ষিণে বার্মা সাব-প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। ফলে সিলেট-সুনামগঞ্জ হয়ে, কিশোরগঞ্জ চট্টগ্রাম হয়ে একেবারে দক্ষিণ সুমাত্রা পর্যন্ত চলে গেছে।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুই যুগ ধরে এ নিয়ে গবেষণা করেছে। সেখানে দেখা গেছে, ইন্ডিয়া প্লেট ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে দীর্ঘসময় ধরে কোন ভূমিকম্পের শক্তি বের হয়নি। ফলে সেখানে ৪০০ থেকে হাজার বছর ধরে শক্তি জমা হয়ে রয়েছে।ইন্ডিয়া প্লেট পূর্ব দিকে বার্মা প্লেটের নীচে তলিয়ে যাচ্ছে আর বার্মা প্লেট পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে সেখানে যে পরিমাণ শক্তি জমা হচ্ছে, তাতে আট মাত্রার অধিক ভূমিকম্প হতে পারে।

অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতারের মতে, এটা যেমন একবারে হতে পারে, আবার কয়েকবারেও হতে পারে। তবে যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। সাধারণত এ ধরনের ক্ষেত্রে সাত বা আট মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে থাকে। কিন্তু কবে বা কখন সেটা হবে, তা এখনো বিজ্ঞানীদের এখনো ধারণা নেই। আট মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি তুরস্কের চেয়ে ভয়াবহ মাত্রায় হবে।

গবেষকগন বাংলাদেশকে ভূকম্পনের তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জোন হিসেবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা।ওই এলাকার সুনামগঞ্জ, সিলেটের জাফলং অংশে ডাউকি ফল্টের পূর্বপ্রান্তে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন। এসব ফল্টে ভূমিকম্প হলে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে বড় ধরনের
রাসেল
রাসেল আহমদ
ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বা বিপদের মাত্রা অনেক বেশি বলে গবেষকগণ আশঙ্কা করছেন।এরপর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু কিছু স্থান যেমন: সিলেট, রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার উল্লেখযোগ্য। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এবং পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সর্বাপেক্ষা কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত।

জানা যায়,দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা সিলেটে ভূমিকম্পের অতীত রেকর্ড ভয়াবহ। এই অঞ্চলে ১৮৯৭ সালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। যেখানে রিকটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৭। আর কেন্দ্র ছিল মেঘালয়। ১৯১৮ সালের ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৬ যার উৎপত্তি ছিল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। ১৯২৩ সালের ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১ যার উৎপত্তি মেঘালয় রাজ্যে। ১৯৩০ সালের ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১ এবং ১৮৬৯ সালের ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫। এছাড়া সিলেট অঞ্চলে ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯৯ সালে কিছু ভূমিকম্পে হয় যার মাত্রা ৬ পর্যন্ত ছিল।

বাংলাদেশে সর্বশেষ ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে মধুপুর ফল্টে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। ১৮৮৫ সালে ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জে ৭.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের ইতিহাস রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩:২৮:২৬ ● ৪৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ