বঙ্গনিউজ : বাংলাদেশ থেকে চুরি হয়ে বিদেশে পাচারকৃত বিপুল পরিমাণ অর্থ পুনরুদ্ধারে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লেগার্ডের সহায়তা কামনা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনের মাঝে এক বিশেষ বৈঠকে তিনি এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
বৈঠকের সময় অধ্যাপক ইউনূস ক্রিস্টিন লেগার্ডকে জানান, বিগত সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে অন্তত ১৭ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
ড. ইউনূস আরও উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ১৫ বছরে প্রতি বছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে পাচার হয়েছে। ইউনূস বলেন, ‘এটি ছিল এক বিশাল ডাকাতি।’
এছাড়াও ড. ইউনূস বৈঠকে তুলে ধরেন, কীভাবে ধনী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী প্রথমে দেশের ব্যাংকগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় এবং পরে সেসব ব্যাংক থেকে বিপুল ঋণ গ্রহণ করে যা তারা কখনোই পরিশোধ করেনি। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লেগার্ড, যিনি এর আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, ড. ইউনূসের এই আহ্বানকে সমর্থন জানান। তিনি সুপারিশ করেন যে, বাংলাদেশ চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার এবং তা দেশে ফিরিয়ে নিতে আইএমএফ-এর সাহায্য নিতে পারে। লেগার্ড বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের এই পদক্ষেপ একটি ইতিবাচক উদাহরণ। যা দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।’
বৈঠকে জুলাই আগস্ট মাসের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কার উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা হয়। লেগার্ড বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন এবং তরুণ প্রজন্মের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি উল্লেখ করেন, দেশের অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করতে হলে দক্ষ তরুণদের নেতৃত্বে উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনা করতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং জেনেভায় বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের রাষ্ট্রদূত তারেক মো. আরিফুল ইসলাম। বৈঠকের সময় তারা সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টা, অর্থ পাচার রোধে গৃহীত পদক্ষেপ, এবং একটি স্বচ্ছ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করার বিষয়টি লেগার্ডের সামনে উপস্থাপন করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বৈঠকে আরও জানান, অন্তর্বর্তী সরকার একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে বদ্ধপরিকর। এর অংশ হিসেবে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার ও দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে তা পুনরায় বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা লেগার্ডকে বলেন, ‘আমরা শুধু নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই না, আমরা একটি পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
ক্রিস্টিন লেগার্ড বৈঠকে বাংলাদেশের তরুণ সমাজের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তাদের উন্নয়নে বিনিয়োগের আহ্বান জানান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বাংলাদেশের জন্য আরও সমর্থন কামনা করেন।