বঙ্গনিউজ : ভারত আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায়। বুধবার (৮ জানুয়ারি) সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন।
এটি ছিল ভারত ও তালেবান সরকারের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার একটি বিশেষ পদক্ষেপ, যা বিশেষজ্ঞরা ভারতের পরিকল্পনার একটি বড় অংশ হিসেবে দেখছেন।
গত বছর থেকে ভারত তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে সর্বশেষ বৈঠকটিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, কারণ এটি ছিল তালেবান নেতাদের সঙ্গে ভারতের সবচেয়ে উচ্চপর্যায়ের প্রথম সরাসরি যোগাযোগ।
প্রসঙ্গত, ভারতের সরকার আফগানিস্তানে সহায়তা এবং অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘ ২০ বছরে ৩ বিলিয়ন (৩০০ কোটি) ডলার বিনিয়োগ করেছে। বৈঠক শেষে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি প্রকাশ করে, যেখানে আঞ্চলিক উন্নয়ন, বাণিজ্য, মানবিক সহযোগিতা, আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য খাতে সহায়তা প্রদান এবং শরণার্থী বিষয়ক উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করা হয়।
দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এই বৈঠকটি আফগানিস্তানের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত হতে পারে। গত মাসে আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলায় ৪৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত এটি তীব্রভাবে নিন্দা জানায়। এই ঘটনার কয়েকদিন পরই ভারতে তালেবান সরকারের প্রতিনিধির নিয়োগ এবং ভারতের আফগান কূটনীতি পরিবর্তনের সংকেত আসে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আফগানিস্তানে তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, ভারতের কৌশলগত অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আফগান সরকারকে সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করা। ভারত এখন আফগানিস্তানের অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখলেও, তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে ভারতের একাধিক বিশ্লেষক বলছেন, ভারত এবং তালেবানের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক অগ্রগতি। ভারতের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক কবির তানিজা বলেছেন, ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়েছে এবং এখন ভারত আফগানিস্তান ও আফগান সরকারকে এড়িয়ে চলা একটি বিকল্প সমাধান হিসেবে দেখছে না।
এ ছাড়া ভারতের পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ রাঘব শর্মা বলেন, ভারত অতীতে বিভিন্ন পর্যায়ে তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। তবে বর্তমানে যে গভীরতা এবং পর্যায়ে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি অনেকটাই অপ্রকাশিত ছিল।
তালেবানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে আফগান নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রদান। বিশেষ করে, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং পর্যটন খাতে ভারতের ভিসা সুবিধা চালু করলে আফগান নাগরিকদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ হয়ে দাঁড়াবে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সরকার আফগানদের জন্য মেডিকেল, স্টুডেন্ট এবং অন্যান্য ভিসা বন্ধ করে দিয়েছিল, যা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়। আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি এখন ভারতের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে, বিশেষ করে আফাগানিস্তানের যারা ভারতে চিকিৎসা, শিক্ষা বা অন্যান্য সেবা নিতে আসতে চান তাদের জন্য।
তবে ভারতের সাবধানী পদক্ষেপও গ্রহণ করতে হবে। ভারত সরকার তালেবানের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইছে না, কারণ এতে তাদের নীতিগত অবস্থানের চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আফগানিস্তানে নারীদের শিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যান্য মানবাধিকার ইস্যুতে ভারত অত্যন্ত সতর্ক এবং এই বিষয়ে তারা এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। এ বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ নীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের এ কৌশলগত পদক্ষেপগুলো আগামী দিনে তার আফগানিস্তানে স্বার্থকে আরও নিরাপদ করতে সাহায্য করবে। তবে, ভারতকে তালেবান ও আফগান সমাজ এবং তার নতুন বাস্তবতা সম্পর্কে আরও গভীর বোঝাপড়া গড়ে তুলতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে তারা আরও সফল হতে পারে।