বঙ্গনিউজ : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা বাতিলের প্রতিবাদ এবং এটি পুনর্বহালের দবি জানিয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রফিকুল ইসলাম সদর নামে এক কর্মচারী বলেছেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা উড়ে আসিনি। এখানে আমাদের বাপ-দাদাদের জমি আছে। যেকোনো মূল্যে আমরা আমাদের ৫ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা ফেরত চাই।’
সোমবার (৬ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে কর্মকর্তা, সহায়ক কর্মচারী, সাধারণ কর্মচারী, পরিবহন কর্মচারী সমিতির ব্যানারে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে এ দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্পের ডেপুটি রেজিস্টার মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কোটা আন্দোলন ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কারের আন্দোলন। তখন বলা হয়নি কোটা বন্ধ করতে হবে। বলা হয়েছিল কোটা সংস্কার করতে হবে। সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন জায়গায় কোটা ব্যবস্থা রয়েছে। তাই আমরা আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বাতিলের প্রতিবাদ জানাই এবং তা পুনরায় বহালের দাবি জানাই।’
বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবি। সেটি আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার। যতদিন আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার ফিরে না পাবো ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’ এসময় তিনি আগামীকাল বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
কর্মসূচিতে অফিসার্স সমিতির কোষাধ্যক্ষ মাসুদ রানা বলেন, ‘আমাদের যে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা সেটি অনেকদিন থেকেই চলে আসছে। আমাদের সন্তানরা যোগ্যতার ভিত্তিতে এখানে ভর্তি হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আবেদন করার যে যোগ্যতা তারা সেটি পূরণ করে। পাশাপাশি অন্য সব যোগ্যতা পূরণ করার পরেই তারা এখানে ভর্তি হয়। তাই আমরা আমাদের অধিকার পুনর্বহাল চাই।’
কর্মসূচিতে সঞ্চালনা করেন অফিসার্স সমিতির দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন। এসময় প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মসূচিতে অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাবিতে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সন্তানদের জন্য বরাদ্দকৃত পোষ্য কোটার হার পুনঃনির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে, গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ৪ শতাংশ পোষ্য কোটা ছিল। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নতুন প্রশাসন সেই কোটা ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশ করে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরপরই কয়েকজন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পোষ্য কোটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাতে ২০ সদস্যের একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে। তিন দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা থাকলেও প্রায় দেড় মাস পর এই নতুন সিদ্ধান্ত জানায় প্রশাসন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন শিক্ষার্থীরা। পোষ্য কোটা সার্বিকভাবে বাতিলসহ তিন দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করেন তারা। এসময় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে প্রায় ১২ ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলে প্রশাসন ভবনের তালা খুলে দেওয়া হয়।