সাজেদা আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি, বঙ্গনিউজ :
সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য়ের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিনে।
বড়দিন উপলক্ষে মধ্যনগরের খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের মধ্যে দুইদিনব্যাপী ছিল নানা আয়োজন। গীর্জাগুলোকে ফুল দিয়ে আকর্ষণীয় নানান রঙে সাজানো হয়েছিল। গির্জায় গির্জায় করা হয় আলোকসজ্জা।
এ উপলক্ষে গত ২৪ ডিসেম্বর(মঙ্গলবার) বিকাল ৫টায়
কায়তাকোনা রোমান ক্যাথলিক চার্চের ফাদার ঢেনিস দারুর পরিচালনায় তিন মণ্ডলীর(তিনটি সমাজ) প্রার্থনা সভার মধ্যদিয়ে দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়।
উপজেলার ৮টি চার্চের মধ্যে রোমান ক্যাথলিক, গারো ব্যাপ্টিস্ট, সেভেন এ্যাডভেন্টিস ও হ্যালিলুইয়া চার্চে
দুইদিনব্যাপী ব্যাপক অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল প্রার্থনা, নগর কীর্তন, আলোচনা সভা, প্রীতিভোজ,পানাহার।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বড়দিন উপলক্ষে মধ্যনগরের সীমান্তবর্তী
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের গ্রামগুলো লাল নীল বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হয়। এছাড়া ক্রিসমাস ট্রি, ধর্মীয় প্রার্থনা, বাইবেল পাঠ, যিশুর জন্মের সে গোশালাও তৈরি করা হয়। গির্জাগুলোতে সাজানো হয়েছিল নানান সাজে। আর ঘরের উপরে টাঙানো হয়েছিল রঙিন কাগজে বানানো তারা চিহ্নিত আলোকসজ্জা। বসতবাড়ির আঙ্গিনায়ও দেখা গেছে নানা রঙের কারুকাজ। খ্রীস্টান পল্লীর প্রতিটি যুবক যুবতী ও শিশুরা মেতেছিল বড়দিনের আনন্দে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,মধ্যনগর উপজেলার কায়তাকোনা ও রেংচী পাড়া ৪টি মণ্ডলী রোমান ক্যাথলিক চার্চ, গারো ব্যাপ্টিস্ট চার্চ(জিবিসি), সেভেন এ্যাডভেন্টিস চার্চ, হ্যালিলুইয়া চার্চ, বাঙালভিটা ২টি মণ্ডলী গারো ব্যাপ্টিস্ট চার্চ(জিবিসি), রোমান ক্যাথলিক চার্চ, ইছামারী ১টি মণ্ডলী রোমান ক্যাথলিক চার্চ ও রামনাথপুর ১টি মন্ডলী রোমান ক্যাথলিক চার্চ
বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এসব চার্চ(গীর্জা) থেকে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত ৯টায় পৃথকভাবে বের করা হয় নগর কীর্তন। সারারাত ধরে চলেছে ধর্মীয় সংগীতানুষ্টান।
২৫ ডিসেম্বর (বুধবার) প্রতিটি চার্চে প্রার্থনার মধ্যদিয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শুরু হয়।এ দিন প্রার্থনার পর প্রীতি ভোজের আয়োজন ছিল। এরপর ধর্মীয় সঙ্গীতানুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও সবশেষে আগামী বছর বড়দিনের জন্য নির্বাচিত বাড়ীতে উপহার হিসেবে প্রোক লেগ মিট (শুকরের রান) নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যদিয়ে বড়দিনের উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে।
এ ছাড়াও বড়দিন উপলক্ষে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রয়াত ব্যক্তিদের সমাধিগুলোও বিভিন্ন উপাচার দিয়ে সাজানো হয়। পাড়ায় পাড়ায় বসছিলো মেলা।
কায়তাকোনা গারো ব্যাপ্টিস্ট কনভেনশন(জিবিসি) এর সভাপতি ও পাষ্টার(পুরোহিত) রথীন্দ্র ম্রং জানান, বড়দিন উপলক্ষে কায়তাকোনা গারো ব্যাপ্টিস্ট চার্চ(জিবিসি),রোমান ক্যাথলিক চার্চসহ বিভিন্ন গির্জায় প্রার্থনা, আলোচনা সভা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। আমরা সকলের শান্তি ও মঙ্গল কামনায় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয়ে অনুষ্ঠান চলেছে বুধবার বিকেল পর্যন্ত।
মধ্যনগরের গারো খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের সংগঠন ‘নেংরিমা’ এর সভাপতি লেবেন্দ্র নেংমিঞ্জা জানান, দিনটি সারা পৃথিবীর খ্রিষ্ট বিশ্বাসীদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং তাৎপর্যপূর্ণ। সারা বিশ্বের মতো প্রতিবছর মধ্যনগরের খ্রীস্টান পল্লীতেও যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় দিনটি উদ্যাপন করা হয়।খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে পৃথিবীতে যিশুর আগমন ঘটেছিল।
মধ্যনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) উজ্জ্বল রায় দ্বিতীয় দিন বুধবার বড়দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৮টি চার্চে ৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উৎসবের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে মধ্যনগর থানার ওসি তার পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছিল।
বড়দিনের উৎসব :