বঙ্গনিউজ : ব্যুরো অফিস,সিলেট ;:সুনামগঞ্জ হাওরবেষ্টিত দুর্গম মধ্যনগর থানায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করছেন, এমন অভিযোগে মধ্যনগর থানা পুলিশ সংগঠনটির ১৭ জন নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে গত বুধবার (২৭ নভেম্বর) একটি মামলা দায়ের করে।
অজ্ঞাতনামা আরো ১৫ জন । এটি সমালোচিত হচ্ছে উপজেলাজুড়ে। অভিযোগ উঠেছে মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সজীব রহমানের নির্দেশে থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক (এস আই) আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে এই মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন।
জানা গেছে, গত২৭ নভেম্বর (বুধবার) দুপুরে মামলার এজাহারে বর্ণিত ১ নং আসামী জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি কবির খানকে নিজ বাড়ি থেকে তুলে এনে ওই দিন সন্ধ্যায় মামলা দায়ের করে পরদিন এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ধর্মপাশা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩৫/৪০ জন নেতাকর্মী বুধবার মধ্যনগর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াসেভ আলভী তালুকদারের বাসার পেছনে তার অফিস কক্ষে জড়ো হন।
তারা দেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক সরকারি কার্যক্রমকে ব্যহত করার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করা ও দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং অন্তবর্তীকালীন সরকার পতনের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে মধ্যনগর উপজেলার বিভিন্ন রাস্তাঘাট, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সরকারি অফিসে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও ক্ষতিসাধনের জন্য গোপনে সমবেত হয়েছিলো এবং গোপন বৈঠক করে।
এজাহারে উল্লেখ, সংবাদ পেয়ে মামলার বাদী মধ্যনগর থানার এসআই আলমগীর হোসেন উক্ত বিষয়টি মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সজীব রহমানকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অবহিত করে ফোর্স নিয়ে বুধবার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে মধ্যনগর মধ্যবাজারে ওয়াসেভ আলভী তালুকদারের বাসার পিছনের অফিসে উপস্থিত হন। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যান্য আসামীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও আসামী কবির খানকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করা হয়।
কিন্তু গ্রেফতারকৃত কবির খানের পরিবারের সদস্যরা ও মাছুয়াকান্দা গ্রামের শতাধিক নারী-পুরুষ এ প্রতিবেদককে জানান, কবির খানকে তার নিজ বাড়ী থেকে দুপুর আনুৃমানিক সাড়ে বারোটার দিকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।
মধ্যনগর সদরের স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা জানান, এই মামলার অন্যতম আসামী ওয়াসিভ আলভী দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে অবস্থান করছেন এবং সম্প্রতি মধ্যনগরে বা গ্রামের বাড়িতে আসেননি।
ওয়াসিভ আলভীর বাসার সামনের মার্কেটে চাল ব্যবসায়ী লিটন সহ আশপাশের দোকানদাররা জানান বুধবার এই বাসায় পুলিশ প্রবেশ করতে কিংবা কোন অভিযান পরিচালনা করতে তারা দেখেননি।
মামলার ৪ নং আসামী এহসান বিন মর্তুজা মধ্যনগরের বাকাতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তার সহকর্মীরা ও বিদ্যালয়ের এসএমসি ‘র সভাপতি গোবর্ধন সরকার জানান তিনি বুধবার পুরো কর্মদিবস নিজ বিদ্যালয়েই কর্মরত ছিলেন।
মধ্যনগর বাজারের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ই আগষ্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর স্থানীয় বিএনপির হামলার শিকার হয়েছেন বাজারে আসা অনেক আওয়ামী লীগ কর্মী। মামলার এজাহারে বর্ণিত আসামীদের ৫ আগষ্টের পরে আজ পর্যন্ত মধ্যনগর বাজারে আসতে দেখা যায়নি।
মামলার বিষয়ে ওসি সজীব রহমান স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ‘আটককৃত আসামী ও এজাহারনামীয় পলাতক আসামী সহ অজ্ঞাতনামা আসামীরা বিশেষ ক্ষমতা আইনের অপরাধ করায় মামলা দায়ের হয়েছে। পলাতক সকল আসামী গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।’
ধর্মপাশা সার্কেল(ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) এ কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার আলী ফরিদ আহমেদ রবিবার দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি গত দুইদিন সিলেটে ছিলাম। এই মামলার বিষয়ে এখনও জানিনা। তবে মামলাটি আমার অফিসে তো আসবে। মামলায় কোন অসঙ্গতি ও মিথ্যাচার করা হয়েছে কি না বিষয়টি খতিয়ে দেখে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।’
স্থানীয়রা জানান, ওসি সজীব রহমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র এবং তিনি নিজেকে সাবেক ছাত্রদল ও যুবদল নেতা এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শামছুজ্জামান দুদুর ঘনিষ্ঠজন বলে দাবি করেন।
তবে ওসি সজীব রহমানকে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রসঙ্গে তার বক্তব্য জানতে চেয়ে গত শনিবার দুপুর ১২.১৩ মিনিটে তার সরকারী মোবাইল নম্বরের হোয়াটস এ্যাপে ফোন দিলে তিনি ‘এ বিষয়ে আপনার সাথে পরে কথা বলবো’ এটুকু বলেই ফোন কেটে দেন ।