বঙ্গনিউজ ডেস্ক : গত কয়েক বছরে ক্রীড়াজগতের বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। বিশেষত, রাশিয়ার ফুটবল দল এবং তাদের জাতীয় দলের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। ফিফা এবং উয়েফা রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অব্যাহত রেখেছে। এই নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার ক্রীড়াঙ্গনে হতাশা তৈরি করেছে এবং বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সম্প্রতি নিশ্চিত করা হয়েছে যে রাশিয়া ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারবে না। ২০২২ সালে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই রাশিয়ান ক্লাব ও জাতীয় দলকে ফিফা ও উয়েফার আয়োজিত প্রতিযোগিতায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক মঞ্চে রাশিয়ান খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণের সম্ভাবনাকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করা হলেও ইসরায়েলকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে সমান তালে। যা ক্রীড়াজগতে বিশেষ করে ফুটবলে নতুন বিতর্ক সামনে এনেছে।
রাশিয়ার এই নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে ইসরায়েলের পরিস্থিতি বেশ ভিন্ন। গাজায় ইসরায়েলের নির্মম আগ্রাসনের পরও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংগঠনগুলো ইসরায়েলি দল ও খেলোয়াড়দের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি, এমনকি একটি নিন্দা বার্তাও প্রকাশ করেনি। এই বৈষম্যমূলক অবস্থান ক্রীড়াজগতে ন্যায়বিচারের প্রশ্ন তুলেছে।
ফিলিস্তিন ফুটবল ফেডারেশন (পিএফএ) এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের মাধ্যমে ফিফার কাছে দাবি জানিয়েছে যে, ইসরায়েল ফিফার নিয়ম ভঙ্গ করেছে এবং তাদের সদস্যপদ অবিলম্বে স্থগিত করা উচিত। পিএফএ সভাপতি জিব্রিল রুজব ফিফা কংগ্রেসে বক্তব্য রাখেন এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এই গুরুতর অভিযোগ তোলেন।
রাশিয়া নিষিদ্ধ, ইসরায়েল নয়: ফুটবলে ন্যায়বিচারের প্রশ্নে নতুন বিতর্ক
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের অভিযোগ, তদন্তে ফিফা
ফিফা সভাপতি জিয়ানি ইনফান্তিনো এই বিষয়ে একটি স্বাধীন আইনি বিশেষজ্ঞ নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ফিফার বিধি এবং নীতিমালা সঠিকভাবে কার্যকর করতে এবং আন্তর্জাতিক ফুটবলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তবে ফিলিস্তিনের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উচ্চ পরিষদের সভাপতি জিব্রিল রুজব জানিয়েছেন, পিএফএ-র আবেদন প্রত্যাহারের জন্য ইসরায়েল হুমকি দিয়েছে। এসব হুমকি আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। পিএফএ দাবি করেছে, ইসরায়েলের আক্রমণ মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ফিফার বিধিমালার বিরোধী। গাজার ফুটবল অবকাঠামোর ব্যাপক ধ্বংসের ঘটনাও নথিভুক্ত করা হয়েছে।
সাধারণত স্পোর্টস আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষত, এমন সংকটপূর্ণ সময়ে ক্রীড়া শান্তি ও সংহতির একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা কিন্তু ইসরায়েলকে খেলতে দেওয়া ক্রীড়াঙ্গনে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রশ্ন তুলছে।
ফুটবল কেবল একটি খেলা নয়, এটি একটি সামাজিক আন্দোলন। এই প্রসঙ্গে, রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা এবং ইসরায়েলের প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংগঠনগুলোর অবস্থান ক্রীড়াজগতের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা সামনে এনেছে। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংগঠনগুলোর সিদ্ধান্তগুলোই এই বিষয়ে দিকনির্দেশক ভূমিকা পালন করবে।