বঙ্গনিউজ ডেস্ক: ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী ‘ফ্যাসিবাদী’ সরকারের ষড়যন্ত্র প্রতিহতে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ দিয়ে দেশকে নির্বাচনমুখী করার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দলটির দাবি, রোডম্যাপ ঘোষিত হলে দেশে বিদ্যমান অস্থিরতা কেটে যাবে। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মানুষের মন জয়ের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছে বিএনপি। ইতিবাচক কাজে মানুষকে ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে তাদের ভোটে বিজয়ী হয়ে আগামীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে চান তারা। এ লক্ষ্যে নানামুখী কার্যক্রমে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি জনগণ পছন্দ করে না, এমন কর্মকাণ্ড পরিহার করছে বিএনপি।
দলটির লক্ষ্য, প্রচলিত রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনা। যাতে করে মানুষ বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে যেটা করেছে, বিএনপি সেটা করবে না। ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে মানুষের পাশে থেকে রাজনীতিতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায় তারা। এর অংশ হিসেবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় শুরু থেকেই ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করে দলটি। অভিযোগ পেলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ পর্যন্ত দেড় হাজারের অধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি। এমনকি সংগঠনের অনেকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে দলটি। কিন্তু মেয়াদের তিন মাসেও সরকার নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে স্পষ্ট কিছু না জানানোয় চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে তারা। দলটি মনে করছে, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন হলেও তারা বসে নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করতে তারা নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এর মধ্য দিয়ে তারা নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে চায়। তাই ‘পতিত’ ফ্যাসিবাদী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবিতে ক্রমেই সোচ্চার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এ লক্ষ্যে তারা এখন থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে।
বিএনপি এ-ও মনে করছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সহজ হবে না। মানুষের মন জয় করে তাদের ভোট নিতে হবে। তাই এখন থেকেই ইতিবাচক কাজের মধ্য দিয়ে জনগণের মন জয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে দলটি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এরই মধ্যে সংগঠনের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বত্র এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইতিবাচক কাজের মধ্য দিয়ে মানুষকে ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে তাদের ভোটে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় যেতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলসহ অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলো সারা দেশে কাজ করছে। এক-দেড় মাস ধরে এ তিনটি সংগঠনের সারা দেশে যৌথ ক্যাম্পেইন চলছে। সেখানে তারেক রহমানের এই বার্তা নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। দেশব্যাপী ‘ধানের শীষ’ সংবলিত লিফলেট বিতরণের মধ্য দিয়ে মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ও করেন তারা।
জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান কালবেলাকে বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের জনগণের মতামত নিয়ে, জনগণের মন জয় করে রাজনীতি করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক দল সচেষ্ট রয়েছে। সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০ হাজার পরিবারের মধ্যে বিপুল পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। অনেক মুমূর্ষু রোগীর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংগঠনের কেউ শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করলে দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া তারেক রহমানের নির্দেশে কেন্দ্রীয়ভাবে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে সব জেলা ও থানা পর্যায়ে কর্মিসভা ও গণসংযোগ করা হচ্ছে, যা এরই মধ্যে জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এভাবেই আমরা জনসম্পৃক্ত কর্মসূচির মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করব।
নানামুখী কর্মকাণ্ডে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মন জয়ে কাজ করছে ছাত্রদল। এ প্রসঙ্গে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, বিএনপি সবসময়ই জনগণের মতামতকে মূল্যায়ন করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোকে মানুষের মন জয়ের লক্ষ্যে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপির অন্যতম সহযোগী সংগঠন হিসেবে ছাত্রদল একগুচ্ছ ডায়নামিক কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে তারেক রহমানের সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আগামীর বাংলাদেশ গড়ার প্রক্রিয়ায় সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মতামত সংগ্রহ করতে সমগ্র দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলের এই কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে সাড়া দিয়েছেন।
তিনি বলেন, পরিবেশগত সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে এর আগে তারা দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসগুলোতে ব্যাপকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এমনকি ছাত্রদল ক্যাম্পাসগুলোতে অন্য সংগঠনের কর্মসূচির পরও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। রাজনীতি সচেতন ছাত্রছাত্রীদের সংগঠন হিসেবে ছাত্রদল দেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করেছে। ভর্তিচ্ছুদের সুবিধার কথা চিন্তা করে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা পেছানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লিখিতভাবে অনুরোধ করেছে এবং ছাত্রদলের অনুরোধকে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভর্তি পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ফ্যাসিবাদী সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও আতঙ্কের পরিবেশের বিলোপ ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ নির্মাণে ছাত্রদল বদ্ধপরিকর। ভবিষ্যতেও ছাত্রদলের এ ধরনের ছাত্রবান্ধব ও সৃজনশীল কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে আমরা সংকল্পবদ্ধ।
মানবিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বন্যায় দুর্গত মানুষের পাশে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে দাঁড়ানোর পাশাপাশি বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন প্রক্রিয়াও চালাচ্ছে বিএনপি। বীজ-সার নিয়ে অনেক জায়গায় কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে দলটি। এ ছাড়া জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও ড্যাবের উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় মেডিকেল ক্যাম্প করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দেড় হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবী নিয়োজিত করে ঢাকায় শান্তিপূর্ণভাবে বিপ্লব ও সংহতি দিবসের শোভাযাত্রা করেছে বিএনপি। শোভাযাত্রা শেষে নেতাকর্মীরা নিজেরা রাস্তাঘাট পরিষ্কারও করেছেন। এই কাজ ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এ ছাড়া তিন দিনের মধ্যে ঢাকা মহানগর থেকে দলীয় সব ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড সরিয়ে নিতে গত ৯ নভেম্বর নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া আগামীকাল বুধবারের মধ্যে দেশব্যাপী সব ব্যানার-ফেস্টুন-বিলবোর্ড অপসারণে রোববার নেতাকর্মীদের জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে যুবদল।
আগামী ২০ নভেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিন। তবে জন্মদিন নিয়ে কোনো অনুষ্ঠান পালন না করতে দল ও অঙ্গসংগঠনের সারা দেশের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে গতকাল বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল কালবেলাকে বলেন, বিএনপি প্রচলিত রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চায়। এ লক্ষ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তারা এরই মধ্যে কাজও শুরু করেছেন। ইতিবাচক ও মানবিক নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি জনগণ পছন্দ করে না, এমন কাজ তারা পরিহার করছেন। এরই মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলীয় কর্মসূচির ব্যানারে তার ছবি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। এটি নির্দেশনা দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং এর আগে বিএনপি-সমমনাদের আন্দোলনে আহত ও নিহতদের পরিবারগুলোর খোঁজ নিতে তারেক রহমান তার প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন। তাদেরকে আর্থিক সহায়তা করছেন এবং চাকরি-চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন তিনি।
আলাল আরও বলেন, এসব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণকে বোঝাতে চাচ্ছি যে, শুধু ক্ষমতার জন্য কিংবা পদ-পদবি তথা মন্ত্রী-এমপি হওয়ার জন্য আমরা নির্বাচনের কথা বলি না, রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর যেসব কাজ সেগুলোর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের মালিক জনগণের মনের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধনে কীভাবে আরও গভীরভাবে ঢোকা যায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। মানুষ যেটি নিয়ে বিরক্ত হয় কিংবা অস্বস্তিবোধ করে, আগামীতে আমাদের দ্বারা যে সেটার পুনরাবৃত্তি হবে না, বর্তমান কর্মকাণ্ড সেই অঙ্গীকারের প্রতিফলন।
বিএনপি জনস্বার্থে রাজনীতি করে জানিয়ে দলটির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, সাধারণ জনগণ কী চায়, তারা কী প্রত্যাশা করছে, জনগণের সেই চাওয়া ও প্রত্যাশা নিয়েই বিএনপি এগিয়ে যেতে চায়। একটা উন্নত-সমৃদ্ধ-সুন্দর ও শান্তিময় বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা লড়াই করে যাব।