প্রবল হতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » প্রবল হতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’
বৃহস্পতিবার ● ২৪ অক্টোবর ২০২৪


ফাইল ছবি

বঙ্গনিউজ ডেস্কঃ বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছিল গেল মঙ্গলবারই।  গতকাল বুধবার নিম্নচাপ থেকে দানা বেঁধেছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। এর প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকার আকাশ মেঘলা রয়েছে। অনেক স্থানেই দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি ঝরেছে। প্রবল শক্তি নিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি আজ বৃহস্পতিবার রাতে উপকূলে আঘাত হানতে পারে।  দুর্যোগের শঙ্কায় ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকায় দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। বিশেষ করে দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে ভয় বেশি।

‘দানা’ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসায় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর রয়েছে উত্তাল। ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় নেওয়া হয়েছে সতর্ক ব্যবস্থা। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নোয়াখালীর হাতিয়ার সঙ্গে জেলা সদরসহ সারাদেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনির সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। উপকূলে প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের যে গতি-প্রকৃতি, তাতে এর আছড়ে পড়ার সম্ভাব্য এলাকা ভারতের উড়িষ্যার উপকূল। এর প্রভাব পড়তে পারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশালের বিভিন্ন এলাকায়।

আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টির যে গতিবিধি, তাতে এটি ভারতের উড়িষ্যা উপকূলমুখী। ধামারা বন্দরের দিকেই এটি উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির অতিক্রম করার যে এলাকা, সেখান থেকে বাংলাদেশের উপকূল ডান দিকে। আর ডান দিকে থাকার কারণে বাংলাদেশের উপকূলে এর প্রভাব থাকবে কিছুটা বেশি। বাঁ দিকে থাকলে সাধারণত কম থাকে। দানা যদি উপকূল অতিক্রম করার জন্য দীর্ঘ সময় নেয়, তবে এর প্রভাবও দীর্ঘ সময় ধরে অনুভূত হবে। আবার বাতাসের গতিবেগ তখন কেমন আছে, এর ওপরও বাংলাদেশের উপকূলে এর সম্ভাব্য প্রভাব নির্ভর করবে।

তবে জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার ঘূর্ণিঝড়ের যে সম্ভাব্য গতিপথ দেখিয়েছে, তাতে ঘূর্ণিঝড়টি বৃহস্পতিবার দুপুরে উড়িষ্যার বালাসোর এলাকা দিয়ে উপকূলে উঠে আসতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গের একাধিক উপকূলবর্তী এলাকা থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বাসিন্দাদের। মোতায়েন করা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। দুই রাজ্যেই ত্রাণ শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ে পিএইচডি গবেষক আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ঘূর্ণিঝড় দানা উড়িষ্যা রাজ্যের পুরি ও পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপের মধ্যবর্তী উপকূলের ওপর দিয়ে বুধবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে শুক্রবার সকাল ৬টার মধ্যে তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসেবে স্থলভাগে আঘাত করতে পারে। তবে এর প্রভাব ভালোভাবে পড়বে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোতে।

সাইক্লোন-সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপের তালিকা অনুযায়ী, এ অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয় ‘দানা’। এটা কাতারের দেওয়া নাম, যার অর্থ অতি সুন্দর ও মূল্যবান মুক্তা। সর্বশেষ গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ বাংলাদেশ উপকূল ও পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে। ওই ঝড়ের তাণ্ডবে বাংলাদেশ ও ভারতে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়।

সরকারের প্রস্তুতি

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় উপকূলীয় এলাকার জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি সম্পর্কে আলোচনা এবং সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে। গতকাল জেলা প্রশাসকরা নিজ নিজ সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করেছেন। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে এবং প্রস্তুত রাখা হয়েছে সিপিপি ও রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবকদের।

খুলনায় ৬০৪ সাইক্লোন শেল্টার খোলাসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ভোলায় ৮৬৯ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি সভা হয়েছে। সভায় জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলায় ১৬২ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে।

প্রস্তুতি নেই সুন্দরবনে

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস ও অস্বাভাবিক জোয়ার হলে তা মোকাবিলার তেমন ব্যবস্থা নেই সুন্দরবনে।  সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, জলোচ্ছ্বাস ও উঁচু জোয়ারের সময় সুন্দরবনের ভেতরে বন্যপ্রাণীদের আশ্রয় নেওয়ার জন্য আরও উঁচু ঢিবি বা কেল্লা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া নোনাপানি ঢোকা ঠেকাতে বনের মধ্যে থাকা পুকুরগুলোর পাড় উঁচু করা জরুরি।

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবীর বলেন, প্রতিবার ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় উঁচু জোয়ারে বনের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়।

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ নিয়ে আতঙ্ক

খুলনার কয়রায় কয়েকটি স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয় নদনদীতে জোয়ারের পানি বাড়লে ঝুঁকিপূর্ণ ওই সব স্থানের বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে এলাকা। এমন শঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষ বাড়িঘর থেকে প্রয়োজনীয় মালপত্র সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে কচা নদীতীরবর্তী বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে যাওয়ায় অর্ধ লাখ বাসিন্দা ঝুঁকিতে আছে। তবে তাদের নিরাপদ স্থানে নিতে প্রস্তুত উপজেলা প্রশাসন।

বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৬:৪১ ● ১০৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ