বঙ্গ-নিউজ: গ্রেনফেল টাওয়ার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের অভিযোগের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এমপি রুশনারা আলী। রবিবার তিনি ভবন নিরাপত্তা ও ট্র্যাজেডিতে সরকারের পদক্ষেপ তদারকির দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭২ জনের মৃত্যুর পর রুশনারা আলী সেই দুর্যোগের সরকারি তদন্ত কার্যক্রম এবং ভবন নিরাপত্তার বিষয়টি দেখাশোনা করছিলেন। কিন্তু সানডে টাইমস পত্রিকার এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, এই দুর্যোগের তদন্ত কমিশনের তীব্র সমালোচিত একটি কোম্পানির একজন নির্বাহীর সহ-সভাপতিত্বে আয়োজিত এক সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন রুশনারা। এরপরই তার পদত্যাগের দাবি জানান গ্রেনফেল টাওয়ার ট্র্যাজেডির শিকার ব্যক্তিরা।
বিবিসি আরও জানায়, রবিবার মন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ না করলেও, রুশনারা আলী জানিয়েছেন, তিনি ‘ধারণার গুরুত্ব’ বুঝতে পারছেন বলে ভবন নিরাপত্তা বিষয়ক দায়িত্ব ত্যাগ করছেন।
প্রথম ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এমপি হিসেবে সংসদে নির্বাচিত হওয়া রুশনারা, জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে ফ্রাঙ্কো-ব্রিটিশ কলোক সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন।
বিবিসি জানিয়েছে, সেইন্ট-গোবেনের (সেলোটেক্সের মূল কোম্পানি) চেয়ারম্যান পিয়েরে-আন্দ্রে ডি চ্যালেন্ডার দীর্ঘদিন ধরে এই কলোক সম্মেলনের সহ-সভাপতি ছিলেন।
গত জানুয়ারি মাসে নির্বাচনের আগে কলোকের শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে ডি চ্যালেন্ডার আর সহ-সভাপতি ছিলেন না।
গ্রেনফেল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের সময় ডি চ্যালেন্ডার সেইন্ট গোবেনের দায়িত্বে ছিলেন। সেলোটেক্স ছিল গ্রেনফেল টাওয়ারের আবরণের ভেতরে ব্যবহৃত দাহ্য নিরোধক তৈরি করে এমন একটি কোম্পানি।
গ্রেনফেল তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, উচ্চভবনের জন্য সেলোটেক্সের তৈরি নিরোধক উপযোগী কিনা সে বিষয়ে ‘গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করার জন্য একটি অসাধু প্রকল্প’ চালু করেছিল সেলোটেক্স।
রবিবার এক বিবৃতিতে রুশনারা আলী বলেন, “মন্ত্রী ও গ্রেনফেল কমিউনিটির মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক এই বিভাগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রী হওয়ার আগে, আমি ফ্রাঙ্কো-ব্রিটিশ কলোকের ফরাসি প্রতিনিধিদলকে সেইন্ট গোবেনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি যে, ধারণার গুরুত্ব রয়েছে এবং তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, ভবন নিরাপত্তা বিষয়ক দায়িত্ব অন্য কোনও মন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা উচিত।’
‘ভবনগুলিকে নিরাপদ করার এবং অন্য আরেকটি ট্র্যাজেডি রোধ করার আমাদের লক্ষ্যগুলো আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এই কাজে সফল হওয়ার জন্য ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী এবং বাকি মন্ত্রিসভার সদস্যদের আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’
জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রুশনারা আলী তার লন্ডনের আসনে পুনঃনির্বাচিত হন। ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো বেথনাল গ্রিন ও বো আসনের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন এই লেবার পার্টির এমপি। ২০২৪ সালে আসনটি বিলুপ্ত হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখান থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। জুলাই মাসে তিনি নতুন বেথনাল গ্রিন এবং স্টেপনী আসন জয়লাভ করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন রুশনারা আলী। সাত বছর বয়সে তার পরিবার যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান।