বঙ্গনিউজ ডেস্কঃ একদিকে টানা চার দিনের ছুটি, অন্যদিকে পাহাড়ের তিন জেলায় পর্যটকদের ‘যেতে মানা’- এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিগত দুই মাসের পর্যটন ব্যবসার ভাটা কাটিয়ে উঠতে চান কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার থেকে সরকারি ছুটি শুরু হলেও বুধবারই কক্সাবাজারের হোটেল-মোটেলে দলবেঁধে আসতে শুরু করেছেন ভ্রমণপিপাসুরা। ব্যবসায়ীদের আশা, এই চার দিনে অন্তত এক লাখ পর্যটক আসবেন সমুদ্রসৈকতের শহরে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এরই মধ্যে শহরের হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ ও রিসোর্টের ৮০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতে ১১ ও ১২ অক্টোবর কোনো কক্ষ খালি নেই।
তারা জানান, জুলাই-অগাস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে পর্যটকরা ঘুরতে বের হয়নি। এর মধ্যে সরকার পরিবর্তনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভেঙে পড়ায় অনেকটা পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছিল সমুদ্রসৈকত। তবে শেষ সেপ্টেম্বর থেকে ধীরে ধীরে পর্যটক আসা শুরু করেছে।
বুধবার থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে ১৭ অক্টোবর রয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান।
ভ্রমণপিপাসুদের বরাবরই পছন্দ কক্সবাজার। তাই কর্মজীবনের অবসাদ দূর করতে সুযোগ পেলেই মানুষ ছুটে আসেন দেশের প্রধান এই পর্যটনকেন্দ্রে। এবারও শারদীয় দুর্গোৎসবের ছুটিতে পাহাড়-সমুদ্রের নির্মল প্রকৃতি দেখতে দেশের নানাপ্রান্ত থেকে কক্সবাজারমুখী হচ্ছেন পর্যটকরা।
গত মঙ্গলবার থেকে পাহাড়ের তিন জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুসাহিত করেছে জেলা প্রশাসন। যাদের পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তারাও কক্সবাজার আসবেন বলে প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
পর্যটকদের যাতায়াত সুবিধার জন্য বৃহস্পতিবার থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে বিশেষ একটি ট্রেন চলাচল করবে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
বুধবার শহরের পর্যটন জোনের কলাতলী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘদিনের মন্দাভাব কাটিয়ে হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ এবং ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে সেজে ওঠেছে। শহরের রাস্তাঘাট ও ফুটপাত পরিষ্কার-পরিছন্নতার কাজ চলছে।
কয়েকদিন ধরে জেলা প্রশাসন ও যৌথবাহিনী পর্যটন এলাকার ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করতে অভিযান চালিয়েছে। পর্যটকদের ভ্রমণ ও সমুদ্র সৈকতে ১৩ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জন নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মোহাম্মদ হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, মধ্য অক্টোবর থেকেই মূলত পর্যটন মাস ধরা হয়। দীর্ঘদিন দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পর্যটক কম ছিল। এবার দুর্গাপূজার ছুটিতে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটবে।
বৃহস্পতিবার থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত শহরের তারকামানের হোটেলগুলোতে পর্যটকের চাপ বেশি থাকবে বলে জানান বাহাদুর।
সুগন্ধা সৈকতের সেইলর ইকো রিসোর্টের পরিচালক জিকু পাল বলেন, তাদের ১০টি কক্ষের সবকটি ১১ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বুকিং রয়েছে।
শহরের সমুদ্র সৈকতের তারকামানের হোটেল কক্স টুডের কক্ষ আছে ২৪৫টি। শুক্র ও শনিবারের জন্য তাদের সব কক্ষ বুকিং আছে বলে জানিয়েছেন সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ।
তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে আশা করি পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে।”
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবুল কালাম বলেন, টানা ছুটিতে পর্যটক সমাগম ও সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে পর্যটন এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটকদের সেবা ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকবে। পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিত কঠোর নজরদারির মাধ্যমে কাজ করবে।