“ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত রোধে চাই ব্লাসফেমি আইন” - মোহাম্মদ দিদার হোসাইন

Home Page » ফিচার » “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত রোধে চাই ব্লাসফেমি আইন” - মোহাম্মদ দিদার হোসাইন
শনিবার ● ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪


ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত রোধে চাই ব্লাসফেমি আইন

বাংলাদেশে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত যেন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। ধর্মীয় সহাবস্থানে বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তবুও বার বার ধর্মীয় ইস্যুকে কেন্দ্র করে শান্ত জনপদে হিংসার আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করেছে সাম্রাজ্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী অপশক্তি এবং তাদের দোসররা। এদেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান প্রধান ধর্মীয় জনগোষ্ঠী হলেও বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মধ্যে স্বতন্ত্র আচার ও ধর্ম বিশ্বাস লক্ষ্য করা যায়। সংখ্যাগত দিক বিবেচনায় মুসলিম জনগোষ্ঠী সংখ্যা গরিষ্ঠ, দ্বিতীয় অবস্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী। সামাজিক বলয়ে আন্তঃধর্মীয় সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকলেও রাজনৈতিক কুটচালে ধর্মীয় চেতনার অপব্যবহার জাতীয় সংহতিতে বিভাজনের কালো ছায়া ফেলেছে। বিশেষতঃ বিগত দুই দশকের কর্তৃত্ববাদী ও বাগাড়ম্বরপূর্ণ শাসনের প্রভাবে সমাজকাঠামো কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার কিছু খন্ডচিত্র মাঝে মাঝে প্রকাশিত হয়েছে। জঙ্গীবাদের জুজু, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কল্পিত ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠী ফায়দা হাসিল করেছে নৃশংসভাবে। মানুষের ন্যায্য ও গণতান্ত্রিক দাবী চাপা পড়েছে কথিত সাম্প্রদায়িকতা আর জঙ্গীবাদের কল্পকাহিনীর নীচে। সকল ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করার অধিকার যেমন সকল নাগরিকের রয়েছে ঠিক তেমনি সকল ধর্মাবলম্বীদের নিজ নিজ ধর্ম অবমাননামুক্ত থাকবে এই নিশ্চয়তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এদেশে হাতেগোণা কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনায় সনাতন কিংবা বৌদ্ধ ধর্মানুভূতিতে আঘাতের ঘটনা ঘটলেও মুসলিমদের ধর্মানুভূতিতে আঘাতের ঘটনা ঘটেছে বহুগুণ বেশি। শাহবাগের কথিত গণজাগরণ মঞ্চ হতে ইসলামোফোব যেন সংগঠিত এক আনুষ্ঠানিক মাত্রা পেয়েছিল। বিকৃত মস্তিষ্কের এক ব্লগারকে সেসময় দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ! আখ্যা দেয়া হয়েছিল। সেসময় এদেশের সচেতন জনগণ ব্লাসফেমী আইনের দাবীতে সোচ্চার হয়েছিল। কিন্তু সেই দাবী অধরাই থেকে যায়। সেসময় ধর্মের নবী বা অবতারের বিরুদ্ধে কটুক্তি গুরুতর অপরাধ গণ্য না হলেও রাজনৈতিক নেতা বা সরকার প্রধানের গঠনমূলক সমালোচনাও ছিল গর্হিত অপরাধ! যাহোক এই ভূ-খন্ডে শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সহাবস্থানের জন্য যেকোন ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত দেয়া সমান অপরাধ গণ্যে কঠোর ব্লাসফেমী আইন সময়ের দাবী। আমাদের বিদ্যমান আইনে ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য কিংবা ধর্মানুভুতিতে আঘাতের যে শাস্তি বিদ্যমান রয়েছে তা নমনীয় ও শিথিল প্রকৃতির। যে কারণে সাধারণ জনগণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বুঝে না বুঝে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। এছাড়াও বিদ্যমান আইনে ধর্মীয় উস্কানিমূলক অপরাধ প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর কর্মপন্থা না থাকায় অপরাধের পুনরাবৃত্তি ও মাত্রা বৃদ্ধির আশংকা রয়েছে। যদিও আইনই এধরণের সমস্যা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ নয় তবুও কার্যকর আইন সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। এছাড়াও জনসচেতনতামূলক সামাজিক পদক্ষেপ, শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভূক্তিকরণ ও সুস্থ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিকল্প হতে পারে।

মোহাম্মদ  দিদার হোসাইন -

লেখক ও বিচারক

বাংলাদেশ সময়: ২০:০৫:৩৮ ● ২৪২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ