তৈরি পোশাক রপ্তানির শীর্ষে ইয়াংওয়ান ও হা-মীম, অনন্তের চমক

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » তৈরি পোশাক রপ্তানির শীর্ষে ইয়াংওয়ান ও হা-মীম, অনন্তের চমক
সোমবার ● ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪


ফাইল ছবি

বঙ্গনিউজ ডেস্কঃ বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানির শীর্ষ স্থানটি বিদেশি উদ্যোক্তার দখলেই আছে।  শীর্ষ রপ্তানিকারকের তালিকায় এবারও শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কিহাক সাংয়ের মালিকানাধীন ইয়াংওয়ান করপোরেশনের।  দ্বিতীয় স্থানে আছে দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানি হা-মীম গ্রুপ।  দুই বছর ধরে এই দুই গ্রুপের রপ্তানি কমলেও তারা শীর্ষ স্থান দুটি ধরে রেখেছে।

বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সেরা দশে জায়গা করে নেওয়া বাকি আট শিল্পগোষ্ঠী হলো মণ্ডল গ্রুপ, অনন্ত গ্রুপ, ডিবিএল গ্রুপ, প্যাসিফিক গ্রুপ, পলমল গ্রুপ, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ, বেক্সিমকো ও স্কয়ার গ্রুপ। এই আট অবস্থানে এক-দুই বছরের ব্যবধানে কেউ এগিয়েছে, কেউ পিছিয়েছে, কেউবা আবার ছিটকে পড়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রথম আলো তৈরি পোশাক শিল্পের শীর্ষ ১০ শিল্পগোষ্ঠীর এই তালিকা তৈরি করেছে। এনবিআরের হিসাব থেকে স্থানীয় রপ্তানি ও নমুনা রপ্তানি বাদ দিয়ে প্রকৃত রপ্তানির হিসাব নেওয়া হয়েছে।

এনবিআর থেকে প্রাপ্ত গত তিন অর্থবছরের রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এক বা দুই বছরের ব্যবধানে সেরা দশে স্থান পাওয়া ১০ গ্রুপের সম্মিলিত রপ্তানি কমেছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সেরা দশের সম্মিলিত রপ্তানি ছিল প্রায় ৪৮৬ কোটি ডলারের, পরের বছর তা কমে ৪৬৮ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। আর সর্বশেষ গত অর্থবছরে এই ১০ প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৫৯ কোটি ডলার।

শীর্ষ গ্রুপগুলোর রপ্তানি কমার প্রভাব সামগ্রিকভাবে তৈরি পোশাক রপ্তানিতেও পড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরকে দেশের পোশাক রপ্তানিতে সোনালি সময় বলা যায়। ওই অর্থবছর রপ্তানি হয় ৪ হাজার ৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। পরের বছর রপ্তানি ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ কমে যায়। বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আরও সোয়া ১ শতাংশ কমে ৩ হাজার ৬৮৮ কোটি ডলারে দাঁড়ায়।

রপ্তানি চালান শুল্কায়নের পর মাশুল আদায় হলে এনবিআরের হিসাবে ওঠে। এনবিআরের রপ্তানির তথ্যে আগের অর্থবছরের চালানও রয়েছে, যেগুলোর রপ্তানি মাশুল পরিশোধ হয়েছে গত অর্থবছরে। প্রতিবছর কমবেশি দেড় শ কোটি ডলারের পুরোনো রপ্তানির তথ্য থাকে, যেগুলোও হিসাবে নেওয়া হয়েছে। কারণ, গত অর্থবছরে রপ্তানি হওয়া কিছুসংখ্যক চালানের মাশুল পরিশোধ না হওয়ায় তা চলতি অর্থবছরের হিসাবে আসবে।

বিলিয়ন ডলারে নেই ইয়াংওয়ান
বাংলাদেশে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রপ্তানিতে প্রথম বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছিল দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়াংওয়ান গ্রুপ। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রচ্ছন্ন রপ্তানি ছাড়া ৯৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি করে। বিদায়ী অর্থবছরে তাদের রপ্তানি ১৮ শতাংশ কমলেও শীর্ষ অবস্থানেই রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার এই গ্রুপ।

গত অর্থবছর ইয়াংওয়ান ৮০ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। তৈরি পোশাকের বাইরে ব্যাগ, জুতা ও পোশাকশিল্পের কাঁচামালসহ নানা পণ্য রপ্তানি করে ইয়াংওয়ান। গত অর্থবছরে তৈরি পোশাকের বাইরে প্রায় ১৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি, যেখানে প্রচ্ছন্ন রপ্তানিও রয়েছে।

গত অর্থবছরে বিশ্বের ৫২টি দেশে রপ্তানি হয় ইয়াংওয়ানের তৈরি পোশাক। গত অর্থবছর ইয়াংওয়ান ৩ কোটি ৪৩ লাখ পিস তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশ থেকে উচ্চমূল্যের পোশাক রপ্তানি করে তারা। বিশ্বখ্যাত জার্মান ব্র্যান্ড অ্যাডিডাসকে ধরে রেখেছে ইয়াংওয়ানই।

বাংলাদেশে প্রথম বেসরকারি রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের সূচনাও হয় ইয়াংওয়ানের হাত ধরে। এই রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে ইয়াংওয়ানের কারখানার সংখ্যা বাড়ছে। গ্রুপটি শতভাগ পুনঃপ্রক্রিয়াজাত পলিয়েস্টার সুতা থেকে বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি করে রপ্তানি করছে। অ্যাডিডাস, রালফ লরেনের মতো বিশ্বখ্যাত ক্রেতারা নিচ্ছে এসব পোশাক।

হা-মীমের রপ্তানি কমেছে
দেশীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক হা-মীম গ্রুপ। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে গ্রুপটি ৬৬ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে সামগ্রিকভাবে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থান দখল করেছিল। দুই বছরের ব্যবধানে তাদের রপ্তানি কমেছে ১২ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরে গ্রুপটি রপ্তানি করেছে ৫৮ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক। রপ্তানি কমলেও দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানেই রয়েছে হা-মীম।

বিশ্বের ৬৩টি দেশে পোশাক রপ্তানি করে হা-মীম। তবে তাদের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। গত অর্থবছর গ্রুপটি ৪৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রে, যা তাদের মোট রপ্তানির ৭৪ শতাংশ। তাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য প্যান্ট।
হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের তৈরি পোশাকের মূল বাজার যুক্তরাষ্ট্র। গত অর্থবছর সেখানে তৈরি পোশাকের বিক্রির পাশাপাশি মূল্যও কমে যায়। সে কারণে আমাদেরও রপ্তানির পরিমাণ কমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ঘুরে দাঁড়ালে আমাদের গ্রুপের রপ্তানি আবার বাড়বে বলে আশা রাখি।’

অর্ধবিলিয়ন ডলার ছাড়াল মণ্ডলের রপ্তানি
মণ্ডল গ্রুপের তৈরি পোশাকের রপ্তানির তালিকায় নতুন নতুন দেশ যুক্ত হচ্ছে। দুই বছর আগে ৬৭টি দেশে পোশাক রপ্তানি করেছিল গ্রুপটি। এখন তা ৭১টি দেশে উন্নীত হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে রপ্তানি বাড়ছে মণ্ডল গ্রুপের। গত অর্থবছরে গ্রুপটির রপ্তানি ৫ শতাংশ বেড়ে ৫০ কোটি ৫০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়েছে। দুই বছর আগে তা ছিল ৪৭ কোটি ৮৮ লাখ ডলার।

মণ্ডলের রপ্তানি তালিকায় টি-শার্টই বেশি। মোট রপ্তানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ টি-শার্ট। গত অর্থবছরে গ্রুপটি ২৩ কোটি ৬৯ লাখ পিস পোশাক রপ্তানি করেছে। রপ্তানির প্রধান গন্তব্য ইউরোপের দেশগুলো।

মণ্ডল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল মজিদ মণ্ডল। বর্তমানে তাঁর ছেলে আবদুল মমিন মণ্ডল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

অনন্ত গ্রুপের বড় চমক
বিদায়ী অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চমক দেখিয়েছে অনন্ত গ্রুপ। প্রথমবারের মতো রপ্তানির শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে গ্রুপটি। প্রথমবারই একলাফে চতুর্থ স্থান দখলে নিয়েছে তারা। অনন্তের ছয়টি তৈরি পোশাক কারখানা গত অর্থবছরে রপ্তানি করেছে ৪৬ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। এই রপ্তানি তার আগের বছরের তুলনায় ৯৬ শতাংশ বেশি।

গত অর্থবছরে বিশ্বের ৬৩টি দেশে প্রায় সাড়ে আট কোটি তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে অনন্ত গ্রুপ।  তাদের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে গ্যাপ, মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, লেভি স্ট্রস, ওল্ড নেভি, পিভিএইচ, এইচঅ্যান্ডএমের মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড। গ্রুপটি স্যুট, সোয়েটার, নারীদের অন্তর্বাসের পাশাপাশি সাধারণ পোশাকও রপ্তানি করছে।

১৯৯১ সালে শিল্পপতি হুমায়ুন জহীরের হাত ধরে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের নিজস্ব ভবনে যাত্রা শুরু হয়েছিল অনন্ত অ্যাপারেলসের। ১৯৯৩ সালে আততায়ীর হাতে হুমায়ুন জহীর নিহত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহার জহীর। বর্তমানে তিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান। বড় ছেলে শরীফ জহীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ছোট ছেলে আসিফ জহীর উপব্যবস্থাপনা পরিচালক।

বর্তমানে আদমজী ইপিজেড, গাজীপুর, কাঁচপুর ও চট্টগ্রাম ইপিজেডে মোট সাতটি কারখানা রয়েছে অনন্ত গ্রুপের। তাদের কর্মিসংখ্যা এখন ২৬ হাজার।

জানতে চাইলে অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার পরে ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায় পোশাকশিল্পে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। সে সময় কৌশল হিসেবে আমরা নতুন নতুন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান যুক্ত করেছি। বৈচিত্র্যময় পণ্য রপ্তানি ও উচ্চ দামের পোশাকে নজর দিয়েছি। এ কারণে রপ্তানি বেড়েছে। আমাদের সামনে লক্ষ্য হলো, পোশাকের কাঁচামাল দেশে উৎপাদন করা। এ জন্য নরসিংদীতে আমরা দেশে প্রথম শতভাগ সিনথেটিক কাপড় তৈরির কারখানায় বিনিয়োগ করেছি। এক বছরের মধ্যে কারখানাটি তৈরি হলে রপ্তানিতে মূল্য সংযোজনও বাড়বে।’

১৯ কোটি পিস পোশাক রপ্তানি ডিবিএলের
দুই বছর আগে ডিবিএল গ্রুপের রপ্তানি ছিল অর্ধবিলিয়ন ডলার। সেবার তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে ছিল শিল্পগোষ্ঠীটি। গত অর্থবছর তারা ৪৬ কোটি ১৭ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে পঞ্চম অবস্থানে জায়গা করে নেয়।

ইউরোপ-আমেরিকা থেকে শুরু করে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার ৫৮টি দেশে পোশাক রপ্তানি করছে গ্রুপটি। গত অর্থবছরে ১৮ কোটি ৭৯ লাখ পিস পোশাক রপ্তানি করেছে গ্রুপটি। সেই হিসাবে প্রতিদিন ডিবিএলের কারখানায় তৈরি হচ্ছে পাঁচ লাখ পিসের বেশি পোশাক। ডিবিএলের বড় দুই ক্রেতা সিঅ্যান্ডএ ও এইচঅ্যান্ডএম।

১৯৯১ সালে ঢাকার ১০২ গ্রিন রোডে ছোট কারখানা দিয়ে দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড বা ডিবিএল গ্রুপের যাত্রা শুরু। ডিবিএল গ্রুপ গড়ে তুলেছেন চার ভাই—আবদুল ওয়াহেদ, এম এ জব্বার, এম এ রহিম ও এম এ কাদের। পোশাক দিয়ে শুরু হলেও সিরামিক টাইলস, তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ ও ড্রেজিং ব্যবসায় নাম লিখিয়েছে ডিবিএল।

জানতে চাইলে ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আগামী এক-দুই বছর নতুন কোনো বিনিয়োগে যাব না। বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোকে শক্তিশালী করার দিকেই বেশি নজর দেব। বিশেষ করে অপচয় হ্রাস, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও তদারকি ব্যবস্থা শক্ত করাই মূল লক্ষ্য।’

প্যাসিফিকের পোশাকের গড় মূল্য ৯.৩৬ ডলার
রপ্তানিতে ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা চট্টগ্রামের প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের রপ্তানি সামান্য বেড়েছে। গত অর্থবছর গ্রুপটি ৪০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা এক বছর আগের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। এ সময়ে গ্রুপটি ৪৭ দেশে ৪ কোটি ৩১ লাখ পিস পোশাক রপ্তানি করেছে। প্যাসিফিকের পোশাকের বড় ক্রেতা জাপানের বহুজাতিক খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ইউনিক্লো। তাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য ডেনিম পোশাক।

চার দশক আগে এনজেডএন ফ্যাশন দিয়ে তৈরি পোশাকশিল্পে যাত্রা শুরু করেছিলেন প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের প্রয়াত উদ্যোক্তা মো. নাসির উদ্দিন। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশে জিনস রপ্তানি শুরু হয়। বর্তমানে তাঁদের কারখানার সংখ্যা ৯।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ওভেন পোশাক রপ্তানি করে আসছিল প্যাসিফিক জিনস গ্রুপ। তারপর তাদের রপ্তানি তালিকায় যুক্ত হয় নিট পোশাক। যদিও গ্রুপটির রপ্তানি পোশাকের সিংহভাগই ডেনিম। বাংলাদেশের বেশির ভাগ কারখানা সস্তা পোশাক উৎপাদন করলেও প্যাসিফিকের পোশাকের গড় রপ্তানি মূল্য বেশি। গত অর্থবছরে গ্রুপটির প্রতিটি পোশাক গড়ে ৯ ডলার ৩৬ সেন্টে রপ্তানি হয়েছে।

জানতে চাইলে প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ডেনিম পোশাকের পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় পোশাক তৈরিতে ঝুঁকছি। আবার পোশাকের পরিমাণ বাড়ানোর চেয়ে উচ্চমান ও উচ্চমূল্যের পোশাকের দিকে নজর দিচ্ছি। এতে পোশাকের পরিমাণ খুব বেশি না বাড়লেও মূল্য সংযোজন বাড়বে।’

পলমলের পোশাক রপ্তানি ৬৭ দেশে
সপ্তম অবস্থানে থাকা পলমল গ্রুপের রপ্তানি দুই বছর ধরে কমছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে গ্রুপটি ৪৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। ধারাবাহিকভাবে কমে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা ৩৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলারে নেমে আসে।

গত অর্থবছরে গ্রুপটি ১৪ কোটি পিস পোশাক রপ্তানি করেছে বিশ্বের ৬৭ দেশে। গ্রুপটি মূলত নিট পোশাক রপ্তানি করে। নিট পোশাকের মধ্যে রয়েছে টি-শার্ট, পোলো, শর্টস ইত্যাদি। গ্রুপটির পোশাকের শীর্ষ দুই ক্রেতা ওল্ড নেভি ও ওয়াল-মার্ট।
চার দশক আগে উদ্যোক্তা নূরুল হক সিকদারের হাতে যাত্রা শুরু হয় পলমল গ্রুপের। বর্তমানে তাঁর ছেলে নাফিস সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
স্ট্যান্ডার্ডের রপ্তানি কমেছে

দুই বছর আগে ৪৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে পঞ্চম শীর্ষ অবস্থানে ছিল স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ। তবে দুই বছর ধরে রপ্তানি কমে গ্রুপটি অষ্টম অবস্থানে নেমেছে। গত অর্থবছরে গ্রুপটি রপ্তানি করেছে ৩৬ কোটি ২৮ লাখ ডলার।

স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ মূলত ওভেন পোশাক রপ্তানি করে। ওভেনে তাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য ট্রাউজার প্যান্ট। গত অর্থবছরে ৩২টি দেশে সোয়া পাঁচ কোটি পিস তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে গ্রুপটি। তাদের পোশাকের প্রধান ক্রেতার তালিকায় রয়েছে মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, গ্যাপ, আমেরিকান ইগল ইত্যাদি।

চার দশক আগে দুই প্রকৌশলী বন্ধু মোশাররফ হোসেন ও আতিকুর রহমানের হাত ধরে পোশাক খাতে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এখন দ্বিতীয় প্রজন্মও যুক্ত হয়েছে গ্রুপটির নেতৃত্বে।

জানতে চাইলে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাপানের একটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়ার কারণে আমাদের রপ্তানি কমে গেছে। তবে আমরা নতুন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান খুঁজছি। সেই সঙ্গে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’

তিন বছরের মধ্যে কম রপ্তানি বেক্সিমকোর
বেক্সিমকো গ্রুপের রপ্তানি গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম ছিল গত অর্থবছরে। গ্রুপটি গত অর্থবছর রপ্তানি করেছে ৩১ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের পোশাক। রপ্তানি কমায় অষ্টম থেকে নবম স্থানে নেমে গেছে গ্রুপটি।

গ্রুপটির ১১টি প্রতিষ্ঠান গত অর্থবছরে ৩৯ দেশে সাড়ে ৭ কোটি পোশাক রপ্তানি করেছে। তাদের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ইন্ডিটেক্স। বেক্সিমকোর বৈচিত্র্যময় পোশাকের তালিকায় রয়েছে আইসোলেশন গাউন ও কাভার গাউন। গত অর্থবছর যুক্তরাষ্ট্রে ২ কোটি ১২ লাখ আইসোলেশন গাউন রপ্তানি করেছে।

বেক্সিমকোর মালিকানায় রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সরকার পতনের পর তিনি এখন কারাগারে।

পোশাকেও স্কয়ারের ঝলক
তৈরি পোশাক খাতে কচ্ছপ গতিতে এগোচ্ছে স্কয়ার গ্রুপ। গত পাঁচ বছরে সব সময়ই প্রবৃদ্ধিতে থেকেছে গ্রুপটি। সর্বশেষ এক বছরের ব্যবধানে গ্রুপটির রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২ শতাংশ। গত অর্থবছরে গ্রুপটি রপ্তানি করেছে ৩০ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক। এর ফলে শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই শিল্পগোষ্ঠী।

১৯৫৮ সালে চার বন্ধুর হাত ধরে স্কয়ারের যাত্রা শুরু হয়। মূল কান্ডারি ছিলেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। তাঁর প্রয়াণের পর সন্তানেরাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের অন্যতম পুরোনো এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে। যুক্ত হয়েছেন নাতি-নাতনিরা। ওষুধ দিয়ে শুরু করলেও স্কয়ার গ্রুপের ব্যবসা বর্তমানে স্বাস্থ্যসেবা, ভোগ্যপণ্য, বস্ত্র ও তৈরি পোশাক, মিডিয়া, টিভি ও তথ্যপ্রযুক্তি, নিরাপত্তাসেবা, ব্যাংক ও ইনস্যুরেন্স, হেলিকপ্টার ও কৃষিপণ্যে বিস্তৃত।

বর্তমানে স্কয়ার গ্রুপের তৈরি পোশাক ৫৫ দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এই তালিকায় আছে হুগো বস, রালফ লরেন, মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, পুমার মতো বিশ্বখ্যাত ক্রেতারাও।
জানতে চাইলে স্কয়ার টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান তপন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তৈরি পোশাকে আমাদের আরও বিনিয়োগের পরিকল্পনা আছে। কারণ, চাহিদা অনেক। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও তারপরের ঘটনার প্রভাব তৈরি পোশাক খাতের জন্য বড় ধাক্কা। শ্রমিকদের নিরাপত্তা, কারখানার সুরক্ষা ও ক্রয়াদেশের পণ্য সময়মতো পাওয়া নিয়ে বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে আগামী মৌসুমের ২৫ শতাংশ ক্রয়াদেশ অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ের কারখানায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ভালো লক্ষণ নয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আমাদের দেশের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’

বাংলাদেশ সময়: ১০:৪৯:২৮ ● ৮৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ