বঙ্গ-নিউজ: পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে নতুন করে সংঘাত উস্কে উঠেছে। দেশটির আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী ও বহিরাগত শ্রমিকদের টার্গেট করে হামলা-সহিসংতা বাড়িয়েছে বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। সোমবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় তাদের দফায় দফায় হামলা-সংঘর্ষ ও পাল্টা হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৭৪ জন। খবর বিবিসি ও আল জাজিরার।
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানে রবিবার রাতে ও সোমবার সকালে অন্তত ছয় দফা সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। বেলুচিস্তান ও পাঞ্জাবের সীমান্তে মুসাখেল জেলার রারাশাম এলাকায় সবচেয়ে মারাত্মক হামলাটি হয়েছে রবিবার রাতে।
পুলিশ বলছে, বেলুচিস্তান প্রদেশের প্রবেশমুখের সড়কে গাড়ি থামিয়ে অন্তত ২৩ জনকে টেনে নামায় সন্ত্রাসীরা। তাদের পরিচয়পত্র দেখে পাঞ্জাবের অভিবাসী শ্রমিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য শনাক্ত হলেই তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
পাঞ্জাবের প্রাদেশিক রাজধানী কোয়েটার দক্ষিণ সীমান্তবর্তী বেলুচিস্তানের কালাত জেলায় সশস্ত্র যোদ্ধারা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালায়। এতে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে।
কোয়েটার দক্ষিণ-পূর্বে বোলান জেলায় সোমবার ভোরে পাঞ্জাবের চার নাগরিকসহ ছয়জনকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও পাঞ্জাবের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় সামরিক বাহিনীর আরো পাঁচজন কর্মীসহ ১৪ জন নিহত হয়েছে সন্ত্রাসী হামলায়।
পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বলেছে, এসব হামলার ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ২১ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।
সর্বশেষ এমন দফায় দফায় হামলার দায় স্বীকার করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। একটি বিবৃতিতে বিএলএ বলেছে, তারা পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং প্রদেশজুড়ে হাইওয়ে নিয়ন্ত্রণ করছে।
বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার জন্য কয়েক দশক ধরে বিএলএসহ সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রীয় রয়েছে। তবে গত কয়েক বছরের মধ্যে সম্প্রতি তাদের সহিংসতার মাত্রা বেড়েছে। এই বছরে এসে তারা বেসামরিক নাগরিক, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী, দেশি-বিদেশি শ্রমিক ও রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে হামলা বাড়িয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, গত বছরের মে মাসে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বড় ধরনের হামলা হয়েছিল, কিন্তু গত দুইদিনের ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণ। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলার ধরন এই বার্তাও দিচ্ছে যে বেলুচিস্তানে বহিরাগতরা নিরাপদ নয়।
এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও পাক ইনস্টিটিউট অব পিস স্টাডিজের (পিআইপিএস) পরিচালক মুহম্মদ আমির রানা বলেন, পাঞ্জাবের কাছে মহাসড়ক অবরুদ্ধ, রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা পাঞ্জাবে বা কাছাকাছি সংঘাতকে প্রসারিত করার ক্ষমতা প্রদর্শন করছে।
বেলুচিস্তানসহ আশপাশের অঞ্চলে পাঞ্জাব থেকে কর্মী কিংবা উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত চীনা নাগরিকদেরও লক্ষ্যবস্তু করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।
ওয়াশিংটন, ডিসিতে অবস্থিত বেলুচিস্তান বিশেষজ্ঞ মালিক সিরাজ আকবর বলেন, বেলুচ জাতীয়তাবাদীরা চীনা ছাড়াও নির্দিষ্ট গোষ্ঠী যেমন নিরাপত্তা বাহিনী, পাঞ্জাবি শ্রমিক এবং উন্নয়ন প্রকল্পে জড়িত শ্রমিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য হল দেশি-বিদেশি শ্রমিকদের বেলুচিস্তানে আসতে নিরুৎসাহিত করা।