বন্যার্তদের সহায়তা দিতে টিএসসিতে মানুষের ঢল!

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » বন্যার্তদের সহায়তা দিতে টিএসসিতে মানুষের ঢল!
রবিবার ● ২৫ আগস্ট ২০২৪


 ফাইল ছবি

বঙ্গনিউজ ডেস্কঃ কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি ভর্তি করে নিয়ে এসেছেন শুকনা খাবার। কেউ রিকশা-ভ্যান বোঝাই করে নিয়ে আসছেন পানি, চাল, তেল, ডালসহ নানা ধরনের খাবার। কেউ আবার এসেছেন নগদ টাকা নিয়ে। বন্যার্ত মানুষের জন্য সবাই যে যার সাধ্যমতো সহায়তা নিয়ে হাজির হচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি)।

তৈরি হয়েছে মানবতার সেবায় দশে মিলে ঝাঁপিয়ে পড়ার এক অনন্য ছবি।
ধনী-গরিব-নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ এভাবেই অংশ নিচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ‘গণত্রাণ’ কার্যক্রমে। গতকাল শনিবার টিএসসিতে গিয়ে দেখা যায়, তৃতীয় দিনের মতো চলমান বিপুল কর্মযজ্ঞ। অতীতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রসংগঠনগুলো ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিলেও এবারের নজিরবিহীন ধরনের হঠাৎ ভয়াবহ বন্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মনে হচ্ছে ত্রাণ কার্যক্রমের পরিধিও যেন নজিরবিহীন।

টিএসসিজুড়ে সহায়তা দিতে আসা মানুষ, স্বেচ্ছাসেবীদের ব্যস্ততা—সব মিলিয়ে এলাহি কাণ্ড। গতকাল সকাল ৯টায় টিএসসির মূল ফটকের সামনে দেখা যায় জরুরি পণ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির হওয়া মানুষের ভিড়। খাবার, কাপড়, ওষুধ, শিশুদের জন্য গুঁড়া দুধ থেকে নারীদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন—সব কিছুই রয়েছে জমা পড়া পণ্যের তালিকায়। অনেককে নগদ অর্থ কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা দিতেও লম্বা লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায়।

রাজধানীর বাড্ডা থেকে গাড়ি ভর্তি কাপড়চোপড় ও স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে এসেছিলেন একটি তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা জাহিন ইসলাম। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘বন্যাকবলিত মানুষের জন্য আমাদের কম্পানি থেকে কাপড় পাঠানো হয়েছে। নারীদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন চেয়েও পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। আমাদের অফিস সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে।’

রিকশায় করে এক বস্তা চিড়া আর কয়েক কেজি গুড়, এক কার্টন স্যালাইন নিয়ে এসেছিলেন ঢাকা পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষার্থী রাইছুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘গতকাইল এখানে আইছিলাম ত্রাণ প্যাকেটে হেল্প করতে। আমাগো সেকশনের (লালবাগ) লোকজন কালকে ট্যাকা উঠায়া এডি কিনছে। সব জমা দিয়া আবার ত্রাণ প্যাকেট করমু।’

সারা দিনই এভাবে সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সহায়তা নিয়ে আসছিল। বিকেলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে দুই ট্রাক ত্রাণসামগ্রী টিএসসিতে প্রবেশ করতে দেখা যায়। দাতার সংখ্যা অনেক হওয়ায় ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় ছাত্রদের। একাধিক লাইন করে হাতে হাতে এসব ত্রাণ নিয়ে টিএসসির ভেতর নির্ধারিত স্থানে রাখা হয়। সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মাঠে অবতরণ করে। ওই হেলিকপ্টারে করে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া হয় বন্যাদুর্গত অঞ্চলে।

টিএসসির গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, সর্বত্র ত্রাণ ও জরুরি পণ্যের স্তূপ। কোথাও চাল-ডালের বস্তা, কোথাও থরে থরে সাজানো অসংখ্য পানি ও তেলের বোতল। জরুরি ওষুধ, টর্চলাইট ও নানা সরঞ্জাম রাখা হচ্ছে টিএসসির দোতলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা টিএসসির মাঠে বসে মধ্যরাত পর্যন্ত ত্রাণসামগ্রী প্যাকেট করছেন। প্যাকেট শেষে প্রতিদিন রাতেই সহায়তা নিয়ে বন্যাদুর্গত কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, সিলেট ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশে রওনা হচ্ছে ট্রাক।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহসমন্বয়ক মো. মহিউদ্দিন গতকাল বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘গত দুই দিনে আমরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অসাধারণ সাড়া পেয়েছি। মানুষ তাদের সাধ্য অনুযায়ী যে যা পারছে দান করছে। আজ (শনিবার) ভোররাত পর্যন্ত আমরা ২৫ ট্রাক ত্রাণসামগ্রী পাঠাতে পেরেছি। এরই মধ্যে টিএসসির ক্যাফেটেরিয়া, গেমস রুম ও বারান্দাগুলো ত্রাণসামগ্রীতে ভরে গেছে। আজ রাতে ডজনখানেক ট্রাক বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকায় রওনা হবে।’

ত্রাণসামগ্রীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষ নগদ অর্থ সহায়তাও দিচ্ছেন জানিয়ে সহসমন্বয়ক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘গত দুই দিনে আমরা এক কোটি ৪২ লাখ টাকার বেশি পেয়েছি। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠব।’

আজ থেকে ‘গণরান্না কর্মসূচি’

শুকনা খাবারের পাশাপাশি বন্যার্তদের রান্না করা খাবার বিতরণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ লক্ষ্যে আজ রবিবার থেকে ‘গণরান্না কর্মসূচি’ পালন করা হবে বলে জানান প্ল্যাটফরমের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। অন্যদিকে চলমান ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচিও অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে ‘গণরান্না কর্মসূচি’র পরিকল্পনার বিষয়ে জানান হাসনাত আব্দুল্লাহ। এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য সবাইকে রান্নার উপকরণ দেওয়ার অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি।

হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্টে লেখা হয়েছে : ‘আগামীকাল (রবিবার) থেকে বন্যাকবলিত এলাকায় গণরান্না কর্মসূচির পরিকল্পনা করছি। আপনারা শুকনা খাবারের পাশাপাশি চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ, লবণ, মসলা নিয়ে আসুন।’

সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ত্রাণ সংগ্রহের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো এর সঠিক বণ্টন নিশ্চিত করা। অন্যথায় আমাদের মূল যে উদ্দেশ্য, তা সফল হবে না। জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ বিতরণ করতে হবে। অন্যথায় একই এলাকায় একাধিকবার ত্রাণ চলে যাবে। অন্যদিকে অনেকের কাছে পৌঁছাবেই না।’

বাংলাদেশ সময়: ১১:০২:৪৭ ● ৮২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ