বঙ্গনিউজ ডেস্কঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বা অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার এ রুল দেন। রিটে পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা ও সাংবিধানিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে সরকারের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিব এবং সংসদ সচিবালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের এ-সংক্রান্ত রুলের জবাব দিতে বলেন আদালত।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, রিটে উল্লেখ করা হয়েছে পঞ্চদশ সংশোধনী আমাদের সংবিধানের মূল কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তা বাতিল করে মূল কাঠামোকে আঘাত করেছে। এটা সংশোধনীর মধ্য দিয়ে দেশ ও জাতি গণতন্ত্রহীন হয়ে পড়েছিল।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেন। অন্য চারজন হলেন– ড. তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফয়েজ আহমেদ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের ১৩ বছর পর কেন আদালতে রিট করলেন– জবাবে রিটকারীদের একজন ড. বদিউল আলম মজুমদার সমকালকে বলেন, এতদিন প্রতিকার পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিল না। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসেছে তাই আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা পক্ষপাতদুষ্ট, প্রশাসন দলীয়করণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য পক্ষপাতদুষ্ট। তাদের সবার সহযোগিতায় বিগত নির্বাচনগুলো প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। একটা পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কলুষমুক্ত করা যাবে না। স্বচ্ছতা আনা যাবে না। এটা ভবিষ্যতে আর যেন না হয় সেজন্য রিট করেছি।
২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে এবং সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান করা হয়।
এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতার সাংবিধানিক স্বীকৃতি, জাতীয় সংসদে নারী সংরক্ষিত আসন ৪৫ থেকে ৫০-এ উন্নীত করা এবং সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়।
সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের পরে ৭(ক) ও ৭(খ) অনুচ্ছেদ সংযোজন করে সংবিধানবহির্ভূত পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পথ রুদ্ধ করা হয়। বিরোধী দল বিএনপির বর্জনের মধ্যে ২৯১-১ ভোটে বিলটি পাস হয়।
আদেশের পর আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে আছে একসঙ্গে অনেকগুলো অনুচ্ছেদে পরিবর্তন বা সংশোধনী আনতে হলে গণভোট করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী-সংক্রান্ত মামলার লিখিত সংক্ষিপ্ত আদেশে আপিল বিভাগ বলেছিলেন, পরবর্তী দুটি (দশম ও একাদশ) জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। কিন্তু সেই আদেশকে অমান্য করে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া হয়। ফলে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না করে দলীয় সরকারের অধীনে করা হয়। যে কারণে পঞ্চদশ সংশোধনী আপিল বিভাগের আদেশের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিপন্থি।