ধন্যবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার অনুরোধ

Home Page » প্রথমপাতা » ধন্যবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার অনুরোধ
শনিবার ● ১৭ আগস্ট ২০২৪


ফাইল ছবি

বঙ্গনিউজ ডেস্কঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘যেখানে যখন পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আসবে, তখনই তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে ছাত্রসমাজকে সরে যেতে হবে। আপনাদের অবশ্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্লাসে ফিরতে হবে।’

গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। আধাঘণ্টার একক সংবাদ সম্মেলনে ১৫ আগস্ট ঘিরে ঘটে যাওয়া নানা প্রশ্নের উত্তর দেন সারজিস আলম।

শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থী ভাইবোনেরা জাতির সংকটে যা করেছে, তার জন্য তাদের ধন্যবাদ।
এখন তাদের পড়ার টেবিল ফিরতে হবে। আমরা যদি দেশকে এগিয়ে নিতে চাই, তাহলে আমাদের শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম প্রয়োজন, একটি ইন্টেলেকচুয়াল তরুণ প্রজন্ম প্রয়োজন।’

‘বিবস্ত্র করা ও গায়ে হাত তোলা মানবাধিকার লঙ্ঘন’

১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে এক ব্যক্তিকে বিবস্ত্র করার বিষয়ে সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘মানুষকে বিবস্ত্র করা বা গায়ে হাত তোলার মতো ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এগুলো কোনোভাবেই আইনসংগত নয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে যা করা প্রয়োজন, একটি প্রেশার গ্রুপ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তা করবে। আমাদের যে দুইজন ছাত্র প্রতিনিধি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আছেন, তাদের মাধ্যমে যেভাবে বিচার নিশ্চিত করা যায়, আমরা সেটি করব।’

তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশে অসংখ্য আলেম-ওলামাকে কান ধরে ওঠবস করিয়েছে। তেমনই যদি কেউ করে, সেটা আমরা সমর্থন করব না। আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট বার্তা, ১৫ আগস্টে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে কেউ ফুল দিয়ে যদি তাঁর শোক জানাতে চায়, আমরা তাঁকে বাধা দিতে পারি না।’

বাংলাদেশের ইতিহাসে যাদের অবদান অনস্বীকার্য তাদের স্মরণ করতে হবে উল্লেখ করে সারজিস বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের যতটুকু সম্মান প্রাপ্য তা তাঁকে দিতে হবে, একইভাবে জিয়াউর রহমানের যে সম্মান প্রাপ্য তাঁকে তা দিতে হবে। তাঁর কাজের সমালোচনা আপনি করতে পারেন, তবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে নয়।’ তিনি বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে যখন যে ক্ষমতায় এসেছে, তখন শুধু তার সুপ্রিম মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে, বাকিদের শ্রদ্ধা জানানো দূরের কথা, উল্টো ছোট করা হয়েছে। যাঁর যতটুকু সম্মান প্রাপ্য, ইতিহাসে যে জায়গাটুকু তারা ধারণ করেন, তা তাদের দেওয়া হয়নি।’
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ধানমন্ডি ৩২-এ গিয়েছিলেন এবং তাঁর গাড়িতে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে জানিয়ে সমন্বয়ক সারজিস বলেন, ‘তিনি ওই রাজনৈতিক আদর্শ বিশ্বাস করেন, তাই তিনি সেখানে ফুল নিয়ে যেতে পারেন, আমরা তাঁকে বাধা দিতে পারি না। বরং আমরা যদি মনে করি, তিনি যে রাজনৈতিক আদর্শ বিশ্বাস করেন, যে ব্যক্তিকে অনুসরণ করেন তিনি অনুসরণযোগ্য নন, তাহলে আমরা তাঁকে বয়কট করতে পারি।’ হোস্টেলে গিয়ে সার্চ করা, আবাসিক হোটেলে যাওয়া বা একজন অধ্যাপককে জোর করে নামিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমর্থন করে না বলে উল্লেখ করে সারজিস বলেন, ‘আমরা কোনো অথরিটি নই।’

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী, যারা আগে ছাত্রলীগ-যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ছিল, তারা নতুনরূপ ধারণ করেছে এবং ভুয়া আন্দোলনকারী ও সমন্বয়ক হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘তারা বিভিন্ন কমিটি তৈরি করছে। তবে আমরা ৫ আগস্টের পর কোনো কমিটি দিইনি। অসংখ্য ভুয়া সমন্বয়ক তৈরি হয়েছে। তারা হয়তো ব্যক্তিগত স্বার্থে অথবা রাজনৈতিক সিদ্ধি সাধন বা দেশকে অস্থিতিশীল করতে এসব করছে।’
সারজিস আরও বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি, উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে একটি কমিটি হয়েছে; যারা মসজিদ কমিটিকে পদত্যাগ করতে বলেছে। অথচ আমরা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক কমিটি দিয়েছি। ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কিছু মানুষ এমন কাজ করছে, যা অপ্রত্যাশিত।’

‘১৫ আগস্ট শোক দিবস পালন উচিত নয়’
১৫ আগস্ট রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক দিবস পালন করা উচিত নয় মন্তব্য করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘শুধু আমাদের নয়, রাষ্ট্রীয়ভাবে এই শোক পালন করা উচিত নয়। সিঙ্গেল কয়েকজন মেজর বা আর্মি অফিসার ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘটাতে পারত না, বরং এটা সামগ্রিক ক্ষোভ ছিল এবং সবার যে নীরবতা তা সমর্থনের লক্ষণ।’ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশে মিষ্টি বিতরণ হয় উল্লেখ করে সারজিস বলেন, ‘১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের ঘটনা দেখেন, তখন স্বৈরাচারের চরম মাত্রা ছিল। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখতে পাই, যা হয়েছে এক জায়গা থেকে হয়েছে, সাধারণ মানুষের প্রতিফলন ছিল না। সাধারণ মানুষ বিচার পায়নি, বরং বিচার ধানমন্ডি ৩২সহ কয়েকটি ঠিকানা থেকে সারাদেশে যেত। ওই সময় ওটি (১৫ আগস্টের ঘটনা) সামগ্রিক বিপ্লবের ফল ছিল আসলে।’
তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে যেসব আওয়ামী নেতার ওপর অত্যাচার হয়েছে, ধরে নিলাম তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, তাদের নামে মামলা হয়েছে। এটার জন্য শোক পালন করব? যদি না করি, তাহলে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের জন্যও আমরা শোক পালন করব না।’

সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সারজিস বলেন, ‘জনবিস্ফোরণের পর সবাই সবার জায়গা থেকে কথা বলছে। কিন্তু যদি ১৬ বছর সবাই কথা বলত, তাহলে এ পর্যায়ে যেত না। ফলে দায় নিতে হলে সবাইকে নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ডিবি হেফাজতে আমাদের ছয় দিন আটকে রাখা হয়েছে; আমরা অনেক সংবাদ সম্মেলন করেছি, প্রচলিত গণমাধ্যমে ঠিকভাবে আসেনি। সে দায় আপনাদের ওপর বর্তায়। আমরা কর্মসূচি দিয়েছি, বিভিন্ন মানুষ তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে বা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ তাদের অস্থিতিশীল উদ্দেশ্য নিয়ে এতে এসেছে। সংখ্যালঘু বিষয়েও এমন অস্থিতিশীলতা আমরা দেখেছি।’

বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৯:১৩ ● ৮১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ