জীবনের জয়ধ্বনি - মোঃ শামীম রেজা

Home Page » সাহিত্য » জীবনের জয়ধ্বনি - মোঃ শামীম রেজা
শুক্রবার ● ১৬ আগস্ট ২০২৪


 জীবনের জয়ধ্বনি

জীবন কী?

শিলাবৃষ্টির পর থেকে যাওয়া আমের মুকুল। ঝরে যাওয়া আমের মুকুলের দিকে মানুষের সর্তক দৃষ্টি অল্পই। টিকে থাকা মুকুলের প্রতিই আশা–ভরসা। এই মুকুল হতে কড়ি হবে, কড়ি থেকে ফল। তারপর পরিপক্ক হয়ে নতির বাণী প্রচার করবে। ঝরে গেলে মনুষ্য চক্ষু মিলিয়া দেখে না কিন্তু টিকে থাকলে আজ হোক বা কাল হোক প্রশংসায় আর ভালোবাসায় পঞ্চমুখ করবেই।

মোতাহের হোসেন চৌধুরী “জীবন ও বৃক্ষ ” প্রবন্ধে জীবনকে বৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করলেও রবীন্দ্রনাথ নদীর গতিতে জীবনের সাদৃশ্য দেখতে পান। তার
মতে জীবনের বেদনা নদীর গতিতেই উপলব্ধি হয়।
নদীর গতি সহজ নয়। অনেক বাঁধা তাঁকে ডিঙাতে হয়।

মায়ের তলপেট ভেদ করে যেদিন দুনিয়ার আলো বাতাসের মোহ পেয়েছেন শিশু সেদিন থেকেই সূর্য মামার মতো দায়িত্ব বেড়ে গেছে। সূর্য মামার দায়িত্ব কি?
পূর্ব দিক থেকে উদিত হয়ে পশ্চিমে অস্ত যাবার আগে পৃথিবীর বুক আলোকিত করা। তোমার বেলায়ও তাই– মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে পৌঁছানোর আগে শান্তির বাণী প্রচার করা।
এই শান্তির বাণী প্রচার করতে হলে তোমাকে আগে দুঃখের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। নিজের সুখের আগে অন্যর সুখ নিয়ে ভাবতে হবে। কেননা–”সুখে থাকাই জীবনের চরম স্বার্থকতা নয় বরং কাউকে সুখে রাখতে পারাটাই হলো জীবনের সবচেয়ে বড় স্বার্থকতা”।
এইযে নিজে সুখী না হয়ে অন্যকে সুখে রাখবার মন–মানসিকতা। এখানেই সুখের বীজ নিহিত। এটাই আত্নার বলী, আত্নার শান্তি।

কেউ তোমারে গালি ছুঁড়লে তুমি তারে ভাই বলো–এতে তুমি যে শান্তি পাবে, প্রতিশোধে সেই শান্তি পাবে না। মনে রেখো ক্ষমাই পরম ধর্ম। ক্ষমাতেই জীবনের প্রকৃত সুন্দর উৎজীবিত হয়।

প্রতিশোধের মোহে নিজেকে দগ্ধ না করে চোখ বন্ধ করে ক্ষমা করে দিলে আত্না শান্তি পায়। আত্নার শান্তির সাথে সাথে রবের সন্তুষ্টিও অর্জিত হয়।
[এক ঢিলে দুই পাখির মারার মতো]

দুনিয়া হয় যদি অন্ধকার, তুমি হবে সেখানকার জোনাকি পোকা। জোনাকি পোকার কাজ কি? অন্ধকারকে আলোকিত করা। অনুরূপভাবে– মনুষ্যের কাজ হবে দুনিয়াকে আলোকিত করা। এটাই হওয়া উচিত।

দুনিয়াকে আলোকিত করার আগে নিজেকে আলোকিত করতে হবে। প্রশ্ন থাকতে পারে নিজেকে আলোকিত করতে কি দরকার?
সহজ উত্তর – বই। বইকে প্রেমিকা ভেবে আঁকড়িয়ে ধরো। মনে রেখো–

বই হলো আলোর উৎস। তাই বইকেই রপ্ত করতে হবে। তার জন্য দরকার তিনটি জিনিস। ১. সাধনা ২. ইচ্ছেশক্তি ৩. পরিশ্রম।

অতঃপর বইয়ের শুকনো পাতায় চোখ রাখতে হবে– ধর্মীয় বইয়ের পাশাপাশি লুৎফর রহমানের “মহৎ জীবন”, “ধর্ম জীবন”, “যুবক জীবন”, মহাত্মা গান্ধীর “আমার ধর্ম” সহ বিভিন্ন বইয়ের জ্ঞান রপ্ত করতে হবে।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনকে গীতার উপদেশ দিয়েছিলেন কৃষ্ণ। আর মুসলিম বিশ্বকে পথ দেখাতে কুরআন নিয়ে অর্বতীর্ণ হয়েছিলেন মোহাম্মদ (স.)। তাদের উপদেশগুলো রপ্ত করে জীবনের আদ্যপ্রান্তের কাজে লাগাতে হবে।

শিক্ষার আলো অন্তরে থাকলে– হ্যারি পটারের গল্পের মতোই জাদু কাজ করে। শক্তি যোগায়। সক্রেটিস প্লেটোকে, প্লেটো এরিস্টটকে এবং এরিস্টটল আলেকজান্ডার দি গেটকে শিক্ষা দিয়েছিলেন – শক্তিকে বাঁচাতেই। যাতে সুপ্ত জ্ঞান যুগ যুগ ধরে মানবের মনে বাঁচে, শক্তি যোগায়।

শিক্ষার শক্তি মূহুর্তে অগ্নুৎপাতের থেকে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে ভেঙে দিতে পারে মিথ্যার দেয়ালকে, তৈরী করতে পারে হৃদয় গহ্বরে প্রস্ফুটিত পদ্মের মতোই সুন্দর বাগান।

বার্নার্ড রাসেলের হ্যাপিনেস অফ সোসাইটিতে বলেছেন– এ্যা হ্যাপি ম্যান হু নো’স হিমসেল্ফ। [একজন সুখী মানুষ নিজের সম্পর্কে জানে]

মনুষ্যকে তার অন্তর আত্না সম্পর্কে জানতে হবে তার জন্য নজরুলের সত্যকে সম্মুখে রাখতে হবে। একমাত্র সত্যই মুক্তির পথ বাতলে দেয়– সুখের কাঠি হাতে তুলে দেয়।

তুমি বিদ্রোহী হও–সেটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তুমি কৃপণ হও– অপচয়ের বিরুদ্ধে। তুমি নিরস হও– অবৈধ প্রেমের বিরুদ্ধে। এতে তোমার মাথা নত করে আনবে না বরং উচ্চ করবে।

তারপর নজরুলের মতোই রণতূর্য নিয়ে পথে বের হও– অভাবগ্রস্থ মানুষকে সাহায্য করো, দু চারটি গাছ রোপণ করো, প্রকৃতিকে অনুভব করো।

তোমার অন্তর আত্নায় এক ধরনের সুখ অনুভূত হবে। যা দক্ষিণা বাতাসের দোল খাওয়া সোনালী ধান ক্ষেতের মতোই সুন্দরের মতোই সুন্দর ।

যে সুন্দর আওয়াজ তুলবে – জীবনকে করবে রঙিন।

মোঃ শামীম রেজা

মোঃ শামীম রেজা

শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪:৩৬:০৪ ● ৪৯৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ