বঙ্গনিউজ ডেস্কঃ র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তিন শতাধিক ভেজালবিরোধী অভিযান চালিয়ে ব্যাপক প্রশংসিত মো. সারওয়ার আলম অবশেষে উপসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এ পদোন্নতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি। লিখেছেন, তিনবার বঞ্চিত হওয়ার পর আজ উপসচিব পদে পদোন্নতি পেলাম। আলহামদুলিল্লাহ্। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর যিনি সর্বোত্তম ফয়সালাকারী।’
সারওয়ার আলম ২৭তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। ২০২১ সালের ৭ মার্চ প্রশাসনে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি পান ৩৫৮ কর্মকর্তা। পদোন্নতির ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য ছিল বিসিএসের ২৭তম ব্যাচ। এ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের ২৪০ জনকে (ইকোনমিক ক্যাডার বিলুপ্ত হওয়ায় প্রশাসন ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া কর্মকর্তাসহ) পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু সে সময় মো. সারোয়ার আলমের নাম পদোন্নতির তালিকায় ছিল না।
এ নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন তিনি। একে ‘অসদাচরণ’ হিসেবে উল্লেখ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তাকে লঘুদণ্ড হিসেবে তিরস্কার করা হয়েছে। তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন, চাকরি জীবনে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়েছেন তাদের বেশিরভাগই চাকরি জীবনে পদে পদে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হয়েছেন এবং এ দেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটাই অন্যায়।
সারওয়ার আলমকে দণ্ড দেওয়ার আদেশে বলা হয়, সারওয়ার আলম তার ফেসবুক আইডিতে ‘চাকরিজীবনে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়েছেন তাদের বেশির ভাগ চাকরিজীবনে পদে পদে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হয়েছেন এবং এ দেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটাই অন্যায়’ বলে মন্তব্য করেন। একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে সরকার ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ ধরনের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করার মাধ্যমে তিনি অকর্মকর্তাসুলভ আচরণ করেছেন। এতে জনপ্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। এরপর এ বিষয়ে তদন্ত হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আদেশে বলা হয়, পর্যালোচনায় দেখা যায়, সারওয়ার আলম তার ফেসবুকে আইডিতে সেই মন্তব্যটি করেছেন বলে স্বীকার করেছেন এবং অসদাচরণের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ জন্য তাকে ‘তিরস্কার’ সূচক লঘুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে অসাধারণভাবে কাজ করে চলা সারোয়ার আলমকে ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে বদলি করা হয়।
বিভিন্ন ক্লাবে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালিয়ে আলোচনায় আসেন সারওয়ার আলম। করোনা মহামারির মধ্যে কয়েকটি হাসপাতালে ভুয়া করোনা টেস্টের বিরুদ্ধে অভিযান করেও প্রশংসা পান। সর্বশেষ সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে আবারও আলোচনায় আসেন এই নির্বাহী হাকিম। ওই বাসা থেকে মাদক, অস্ত্র-গুলি ও অবৈধ ওয়াকিটকি উদ্ধারের পর তিনি হাজী সেলিমের ছেলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইরফান সেলিমকে দেড় বছরের কারাদণ্ড দেন।
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মঙ্গলবার সারোয়ার আলমসহ উপসচিব পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়েছেন ১১৭ কর্মকর্তা, যারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলেন।