চলতি হিসাবে ঘাটতি থাকা সাত ব্যাংকে বিশেষ সুবিধা বন্ধ

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » চলতি হিসাবে ঘাটতি থাকা সাত ব্যাংকে বিশেষ সুবিধা বন্ধ
বুধবার ● ১৪ আগস্ট ২০২৪


ফাইল ছবি

বঙ্গনিউজ ডেস্কঃ এস আলম গ্রুপের প্রভাবে সাতটি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলতি হিসাবে ঋণাত্মক রেখে বিনা বাধায় লেনদেন করছিল। তবে সরকার বদলের পর এসব ব্যাংকে গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। বিশেষ আনুকূল্যে লেনদেনের এ সুযোগ বন্ধ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতদিন এসব ব্যাংকের চেক অন্য ব্যাংকে জমা দিয়ে যে কোনো পরিমাণের টাকা উত্তোলন করা যেত। তবে আজ থেকে আর ১ কোটি টাকার বেশি চেক নগদায়ন না করতে সব ব্যাংকে নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানা গেছে। একাধিক ব্যাংকের এমডি সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগ থেকে সব ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশনার মাধ্যমে জানানো হয়, বুধবার থেকে ৯টি ব্যাংকের ১ কোটি টাকার বেশি অঙ্কের চেক নগদায়ন করা যাবে না। ব্যাংকগুলো হলো– ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী, বাংলাদেশ কমার্স ও ন্যাশনাল ব্যাংক। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ মে পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর সিআরআরসহ চলতি হিসাবে ঋণাত্মক রয়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া সমস্যাগ্রস্ত পদ্মা ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অবশ্য ব্যাংক দুটির চলতি হিসাবে কোনো ঘাটতি নেই। তবে ব্যাংক দুটি সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণ করতে পারে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক সমকালকে বলেন, ‘এ ধরনের নির্দেশনার বিষয়ে তাঁর জানা নেই। তবে অন্য একজন কর্মকর্তা সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মৌখিকভাবে এ রকম নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো ব্যাংকের চলতি হিসাব ঋণাত্মক থাকলে আরটিজিএস বা বিএসিএইচের মাধ্যমে চেক নিষ্পত্তি করা যায় না। যে কারণে এতদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ আনুকূল্য নিয়ে কৌশলে এসব ব্যাংকের চেক অন্য ব্যাংকে জমা দিয়ে নিষ্পত্তি করা হচ্ছিল। তবে এখন থেকে আর সেই সুযোগ দেওয়া হবে না।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমকালকে বলেন, চলতি হিসাব ঋণাত্মক রেখে লেনদেনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছিল মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা দিয়ে। গভর্নরের বিশেষ ক্ষমতাবলে এস আলম গ্রুপের কর্তৃত্বে থাকা সাতটি ব্যাংক ডিমান্ড প্রমিসরি (ডিপি) নোটের বিপরীতে এ সুযোগ পেয়ে আসছে। এখন হঠাৎ করে বন্ধের ফলে এসব ব্যাংক নতুন করে কোনো ঋণ দিতে পারবে না। অবশ্য আদায়ের বিপরীতে আমানতকারীর অর্থ ছাড়ে সমস্যা হবে না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় দুই বছর ধরে এসব ব্যাংক বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণ করতে পারছে না। ব্যাংকটির হাতে থাকা সব উপকরণ বন্ধক রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে ফেলেছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অন্য ব্যাংক থেকে ধারদেনা করার কোনো উপকরণ এসব ব্যাংকের হাতে নেই। আবার সিআরআর ও এসএলআর ঘাটতি হলে যে জরিমানা দিতে হয়, তাও পরিশোধের সুযোগ নেই। ঋণ বিতরণ বন্ধের নির্দেশ না দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে চলতি হিসাবে ঋণাত্মক রেখে লেনদেনের সুযোগ দিয়ে আসছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের নভেম্বরে ব্যাংকগুলোকে এ উপায়ে লেনদেন বন্ধের হুঁশিয়ারি করে চিঠি দেয়। চলতি হিসাবে ঘাটতি মেটাতে না পারলে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দেয়। এ বিষয়ে সমকালসহ কয়েকটি পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশ হলে তৎকালীন গভর্নরের নির্দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, এসব ব্যাংকের লেনদেন বন্ধের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এর পর ব্যাংকগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদন ভালো দেখাতে বছরের শেষ কর্মদিবস গত ২৮ ডিসেম্বর কোনো উপকরণ ছাড়াই বিশেষ ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাঁচ ইসলামীসহ মোট ৯টি ব্যাংকে ওই দিন দেওয়া হয় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর আগেও এই ঘাটতি যেন দেখাত না হয়, সেজন্য ২০২২ সালের শেষ কর্মদিবসেও পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককে ‘লেন্ডার অব দ্য লাস্ট রিসোর্ট’ হিসেবে ১৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সরকার বদলের পর গত সপ্তাহে এস আলম গ্রুপের ৮৪৮ কোটি টাকার বেনামি ঋণের চেক ফেরত দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক। যে কারণে ব্যাংকটি নতুন করে কোনো ঋণ ছাড় করছে না। এস আলম গ্রুপের বিশেষ সুবিধাভোগী কাউকে আর ব্যাংকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আবার ২০১৭ সাল থেকে গ্রুপটির নিয়োগ দেওয়া সব কর্মকর্তাকেও বের করে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় গত রোববার ব্যাংকটির সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ছয়জন এখন হাসপাতালে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াতপন্থিদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংক দখল করে নেয় এস আলম গ্রুপ। ওই সময় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ সব পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বাসা থেকে তুলে নিয়ে রাজধানীর র‍্যাডিসন ব্লু হোটেলে ব্যাংকের মালিকানা বদল করা হয়। গভীর রাত পর্যন্ত কর্মকর্তাদের বসিয়ে রেখে অনুমোদন দেন ওই সময়ের গভর্নর ফজলে কবির ও ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী। এভাবে মালিকানা বদল নিয়ে তখন নানা সমালোচনা হয়।

কোন ব্যাংকের কত ঋণাত্মক
ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ। ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ঘাটতি রয়েছে ১০ হাজার ৬১১ কোটি টাকা। পর্যায়ক্রমে– ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ঘাটতি ৭ হাজার ১২৮ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৪ হাজার ৪৮১ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকে ৩ হাজার ৪৭৯ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ২ হাজার ৭৯৪ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৭১২ কোটি এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঘাটতি ৩৯২ কোটি টাকা। এ ছাড়া আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাবে ১ কোটি এবং পদ্মা ব্যাংকের হিসাবে ৭৭ কোটি টাকা জমা আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১:২৫:২৯ ● ৬৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ