‘মৃতপ্রায়’ ব্যাংক বন্ধ করে দিতে হবে

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » ‘মৃতপ্রায়’ ব্যাংক বন্ধ করে দিতে হবে
মঙ্গলবার ● ১৩ আগস্ট ২০২৪


 ফাইল ছবি

বঙ্গনিউজ ডেস্কঃ রাজনৈতিকভাবে লাইসেন্স পাওয়া তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের কিছু ব্যাংক মৃতপ্রায়। এদের চলৎশক্তি নেই। এদের জনগণের করের টাকা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। এতে শুধু অর্থের অপচয় হচ্ছে। এসব ব্যাংক স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ করে দিতে হবে। এ ছাড়া কিছু ব্যাংকের পারফরম্যান্স খারাপ। আরেকটু ধাক্কা লাগলেই মরে যাবে। এগুলোর পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করে পরিচালনার চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ‘ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা আনা, শিগগির কী করতে হবে’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন মত দিয়েছে। গতকাল সোমবার ঢাকার ধানমন্ডিতে সংস্থার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। অন্যদের মধ্যে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান এবং গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বক্তব্য দেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।

সিপিডি বলেছে, এস আলম গ্রুপের হাতেই সাতটি ব্যাংক। এ শিল্পগোষ্ঠী একাই ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। এক সময় ইসলামী ব্যাংক ভালো ব্যাংক ছিল। দখলের পর মুমূর্ষু হয়ে গেছে। এ ছাড়া একক গ্রাহকের জন্য ঋণসীমা নীতি লঙ্ঘন করে জনতা ব্যাংক এননটেক্স গ্রুপকে দিয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। এভাবে একক গোষ্ঠী যদি এত বেশি ঋণ পায়, অন্য গ্রাহকরা কী পাবে?
সিপিডির মতে, ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে ২৪টি বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে প্রায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য অনেক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। ব্যাংক একীভূতকরণ প্রসঙ্গে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর একীভূত হওয়ার পূর্বশর্ত হলো অডিট করে আর্থিক অবস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে দেখা।
এর পর জোর করে নয় বরং ব্যাংকগুলোর ইচ্ছায় একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকার পরিবর্তন হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের গভর্নরকে লুকিয়ে থাকতে হবে কেন। যদি একজন কর্মকর্তা সৎ হন এবং যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন, তাহলে তাঁর কোনো ধরনের ভয় থাকার কথা নয়। যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁকে হয়রানি করা হয়, তাহলে তিনি অভিযোগ জানাতে পারতেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তাঁর নৈতিক সাহসই নেই। যাদের নৈতিক শক্তি হারিয়ে গেছে, তাদের নিয়োগই হয়েছে বিশেষ গোষ্ঠীর সুপারিশে এবং তারা ওই গোষ্ঠীর জন্য কাজ করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা নিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, এমন নয় যে, তাদের স্বাধীনতা নেই; তারা এটি ব্যবহার করছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংক বরং বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন করেছে। দুই বছর ধরে দেশের মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে। দরকার ছিল সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেওয়া। কিন্তু বিশেষ ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর যাতে সুবিধা হয়, সে জন্য সুদহার বাড়ায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি নিয়ে এখনও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ করার জন্য সিআইডি ৭৯ বার সময় নিয়েছে। সিপিডি চায়, তদন্ত প্রতিবেদন উন্মুক্ত করা দেওয়া হোক।

তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছরে যারা গভর্নর ছিলেন, তাদের তৈরি অনেক নীতি ব্যাংকিং বিধিবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য অনেক নিয়মে ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন, যার ফলে বিশেষ গোষ্ঠীকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিটি ঘটনা তদন্ত হওয়া উচিত। এর সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।
সিপিডি বলেছে, ২০০৯ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। বারবার পুনঃতপশিল করার কারণে ঋণখেলাপির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, যা বন্ধ করতে হবে।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংস্কারের পাশাপাশি জবাবদিহি নিশ্চিতে ব্যাংক খাতের ওপর শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। যেসব দুর্নীতি হয়েছে, সেগুলো প্রকাশ করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সামনের দিকে যাওয়ার জন্য ব্যাংক কমিশন গঠন করে এ খাতে সংস্কার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পরমার্শ নিতে হবে। রাজনীতিবিদ এবং বিত্তশালীদের অশুভ আঁতাতের মাধ্যমে ব্যাংককে ব্যবহার করার দুষ্টচক্র ভাঙতে কমিশন ভালো পরামর্শ দিতে পারবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বাতিলের দাবি জানিয়ে সিপিডি বলেছে, এ বিভাগের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। এ বিভাগের কোনো প্রয়োজন নেই। সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে হবে। তবে যদি রাজনৈতিক সংস্কার না হয় বা সদিচ্ছা না থাকে, তাহলে প্রতিষ্ঠান সংস্কার সম্ভব হয় না।

বাংলাদেশ সময়: ৮:৫৫:১৫ ● ৬৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ