আশুরার তাৎপর্য ও আমল

Home Page » মুক্তমত » আশুরার তাৎপর্য ও আমল
মঙ্গলবার ● ১৬ জুলাই ২০২৪


 ফাইল ছবি

মহররম অর্থ সম্মান বা মর্যাদা। হিজরি সনে এমন চারটি মাস রয়েছে যেগুলোকে মানুষ সম্মান করত। সে মাসগুলোয় যুদ্ধ করা, হত্যা করা সম্পূর্ণ নিষেধ ছিল। মুসলমানদের সঙ্গে সঙ্গে কাফেররাও এ নীতি পালনে ছিল বদ্ধপরিকর।কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আল্লাহতায়ালার কাছে আল্লাহর কিতাবে অর্থাৎ লওহে মাহফুজে মাসের সংখ্যা হলো বারোটি; সেই দিন থেকে, যেদিন আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ। এটাই সহজ-সরল দ্বীনের দাবি। সুতরাং তোমরা এ মাসগুলোর ব্যাপারে নিজের প্রতি জুলুম করোনা’। (সূরা তাওবা ৩৬)।

সে চারটি মাসের একটি হলো মহররম। বিশেষ মর্যাদার কারণে তাকে এ নামে নামকরণ করা হয়েছে। কেননা, হাদিসে এ মাসকে আল্লাহর মাস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (তাফসিরে মাযহারি।)

মহররম মাস সম্মানিত হওয়ার কেন্দ্রবিন্দু হলো এ মাসের দশ তারিখ। এ দশ তারিখকে শরিয়তের পরিভাষায় আশুরা বলা হয়। পবিত্র আশুরা ইসলামের অন্যতম একটি ফজিলতপূর্ণ দিন। পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকেই এদিনে অনেক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। যেমন-আল্লাহতায়ালা এ দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। এদিনে নুহ (আ.)-এর প্লাবন সমাপ্ত হয়।

ইবরাহিম (আ.) জালিম বাদশাহ নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে চল্লিশ দিন পর নিরাপদে মুক্তি পান। ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান। আইয়ুব (আ.) রোগমুক্তি লাভ করেন। এই দিনে সুলায়মান (আ.) তার হারানো রাজত্ব ফিরে পান। ইয়াকুব (আ.) হারানো পুত্র ইউসুফ (আ.)-কে চল্লিশ বছর পর ফিরে পান। ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন এবং এদিনেই তাকে দুনিয়া থেকে আকাশে উঠিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়া এ মাসে বহু ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যার কারণে আদিকাল থেকেই মানুষ এ দিনটিকে বিশেষ সম্মান দিয়ে আসছে।

আশুরার রোজা

ইসলামপূর্ব যুগ থেকেই মানুষ এ দিনটিতে রোজা রাখত। তাদের জন্য এ দিনের রোজা ফরজ ছিল। ইসলাম আসার পর রমজানের রোজা ফরজ হলে তা সুন্নত হিসাবে গণ্য হয়। হাদিস শরিফে এমনটিই বর্ণিত হয়েছে। আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, জাহিলি যুগে আশুরার দিন কুরাইশরা ও নবি (সা.) সাওম পালন করতেন। যখন হিজরত করে মদিনায় আগমন করলেন তখন তিনি নিজেও আশুরার সাওম পালন করতেন এবং অন্যকেও তা পালনের নির্দেশ দিতেন।

যখন রমজানের সাওম ফরজ করা হলো তখন যার ইচ্ছা (আশুরা) সওম করতেন আর যার ইচ্ছা করতেন না। (সহিহ বোখারি, হাদিস নং ৩৮৩১)। অন্য হাদিসে আছে, ইবনু মাস‘ঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, তার কাছে আশ’আস (রা.) আসেন। এ সময় ইবনু মাস’ঊদ (রা.) পানাহার করছিলেন। তখন আশ‘আস (রা.) বললেন, ‘আজ তো আশুরা’।

তিনি বললেন, রমজানের (এর সওমের বিধান) অবতীর্ণ হওয়ার আগে আশুরার সওম পালন করা হতো। যখন রমজানের (এর সওমের বিধান) অবতীর্ণ হলো তখন তা পরিত্যাগ করা হয়েছে, এসো, তুমিও খাও। (সহিহ বুখারি, ৪৫০৩)। এ হাদিস দিয়ে বোঝা যায় আশুরার রোজা আগে ফরজ ছিল, কিন্তু এখন তা সুন্নত বা মুস্তাহাব।

আশুরার রোজা দুটি

হাদিস শরিফে রাসূল (সা.) আশুরার দুটি রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তার কারণ হলো-ইহুদিদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করা। এক হাদিসে আছে, ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে আশুরার আগে বা পরে আরও একদিন রোজা রাখ’। (মুসনাদে আহমদ, ১/২৪১)।

অন্য হাদিস আছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি, তাহলে ৯ তারিখেও অবশ্যই রোজা রাখব। (সহিহ মুসলিম : ১/৩৫৯)।

আশুরার রোজার ফজিলত

হাদিস শরিফে আশুরার দিন রোজা রাখার বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। এমনকি রমজানের পর এ রোজার ফজিলত বেশি বলা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, রমজান মাসের পর সর্বোত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা (আশুরার সাওম) এবং ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো রাত্রের সালাত (নাসায়ী, ১৬১৩)।

অন্য হাদিসে এসেছে, উবায়দুল্লাহ (রা.)-থেকে বর্ণিত ইবনে আব্বাস (রা.)-কে যখন আশুরার সাওম (রোজা) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল তখন তিনি তাকে বলতে শুনেছেন, নবি (সা.) রমজান মাসের ও আশুরার সাওম ব্যতীত অন্য কোনো দিনের সাওমকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। (নাসায়ী, হাদিস নং ২৩৭০)।

মতিউর রহমান

বাংলাদেশ সময়: ১০:১৯:৫১ ● ১৮৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ