বঙ্গ-নিউজ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, চীন সরকার বাংলাদেশকে চারটি প্যাকেজের আওতায় ২০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা) সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।
গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘১০ জুলাই চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে, তিনি অনুদান, সুদমুক্ত ঋণ, রেয়াতি ঋণ এবং বাণিজ্যিক ঋণ - এই চারটি ক্ষেত্রে সহায়তার কথা উল্লেখ করেছেন। এই চারটি প্যাকেজের আওতায়, চীন বাংলাদেশকে ২০০ কোটি ডলার প্রদানে সম্মত হয়েছে।’
কোটা ব্যবস্থা নিয়ে আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কিছুই করার নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি তার চীন সফরের ফলাফল নিয়ে আজ গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
কোটা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, `যারা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা আইন মানে না, আদালতকে সম্মান করে না, সংবিধান বোঝে না, সরকার কীভাবে চলে তাও বোঝে না।’
তিনি আরও বলেন, `হ্যাঁ, তারা মেধাবী। কিন্তু এসব বিষয়েও তাদের ধারণা থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালত কোটা সংক্রান্ত মামলায় আন্দোলনকারীদের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু তারা রাস্তায় আন্দোলনের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি চান বলে মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টি আদালতে গেছে এবং আদালত রায় দিয়েছে, তাই আমার এখন সেই রায়ের বিরুদ্ধে যাওয়ার কোনো অধিকার নেই। সংবিধানও আমাকে তা করতে দেয় না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আদালতে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এখানে আমাদের কিছু করার নেই। এটাই বাস্তবতা। তাদেরকেও এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। অন্যথায়, আমাদের কিছু করার নেই এবং তারা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবে (কোন ফলাফল ছাড়াই)।’
প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করলে কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু পুলিশের উপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর করলে আইন নিজের গতিতে চলবে।’
প্রধানমন্ত্রী তার সফরকে ‘বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘গবেষণা, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বর্ধিত যোগাযোগ এবং সহযোগিতা বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং একটি আধুনিক, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এই সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই পররাষ্ট্রনীতির নীতি মেনে বাংলাদেশ তার দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, জলবায়ু পরিবর্তন, ফিলিস্তিন সংকট, মানবাধিকার, টেকসই উন্নয়ন এবং জাতিসংঘের মতো বৈশ্বিক বাস্তবতা বিবেচনা করে, বাংলাদেশ ও চীন পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে।’
প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ইস্যুটি উত্থাপন করে এই সংকট সমাধানে চীনের সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি জানান, চীনের রাষ্ট্রপতি রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের মানবিক সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং তাদের প্রত্যাবাসনে সহায়তা করার জন্য চীনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ ও চীন একে অপরকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
চীনের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক ‘একীভূত কৌশলগত সহযোগী অংশীদারিত্ব’-এর পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।