বঙ্গনিউজঃ সেই ১৯১৬; ফুটবলের সাদা-কালো যুগের শুরুতে সবচেয়ে আলো ছড়ানো এক প্রতিযোগিতা ছিল এই কোপা আমেরিকা। তখন অবশ্য লোকে চিনতেন সাউথ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপ নামে। প্রথম আসরটা হয় আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আইয়ার্সে। সেবার চার দলের টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে। মজার ব্যাপার হলো, ১৯৩০ সালে যাত্রা করা বিশ্বকাপেরও প্রথম ট্রফি এই উরুগুয়ের হাতে ওঠে।
ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার প্রতিযোগিতা ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থও’ কিছু রং নেয় কোপা থেকে। এর পর তো ইউরোর পথচলা। সময়ের ব্যবধানে চলতে থাকা ফুটবল দ্বৈরথগুলোর মধ্যে তবু কোপার গুরুত্ব বা ঐতিহ্য বাকি দুই টুর্নামেন্টের চেয়ে একটুও কমেনি। বরং সবচেয়ে বুড়ো হওয়ার পরও দিনকে দিন এই প্রতিযোগিতায় যোগ হচ্ছে বাড়তি সব উন্মাদনা।
শত বছর ধরে চলতে থাকা যে যুদ্ধে সবাই বিজয় ছিনিয়ে আনতে চায়। এবার দুই দর্শকনন্দিত দল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার বাইরেও চমক দেখিয়েছে আরও কয়েকটি দল। প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া উরুগুয়েও স্বপ্ন দেখেছিল। শেষ পর্যন্ত যদিও তারা সেমি থেকে বিদায় নেয়। ইতিহাস আর সুন্দরের পসরা সাজানো এই কোপা আমেরিকার ফুটবল হয়তো বদলেছে তার রূপ। পেলে, রোনালদো, কাফু, ম্যারাডোনা, বাতিস্তুতাদের সময় পেরিয়ে আসা কোপায় লেগেছে নতুন এক প্রজন্মের ছোঁয়া। তবু পুরোনোকে ভোলা মুশকিল।
সোমবার সকালের ফাইনালে আর্জেন্টিনা নামবে কলম্বিয়ার বিপক্ষে। সেখানেও নতুনের সঙ্গে পুরোনো ছায়া হয়ে আছে। সেটা ইতিহাস বলি কিংবা পরিসংখ্যান বা দলের ভেতরের টক্কর। দু’দলে এবার দারুণ সব তারকা। যেখানে আবার সবচেয়ে অভিজ্ঞ হামেস রদ্রিগেজ ও লিওনেল মেসি। তাদের দু’জনের গল্পটা দুই রকম হলেও এবারের ফাইনালে তাদের স্বপ্নটা এক। দু’জনই চান ট্রফিটা জিততে।
এটা ঠিক, মেসির সঙ্গে হামেসের তুলনা চলে না। কারণ মেসি যতটা না ফুটবলে সফল, হামেস সেই তুলনায় অনেকটাই ব্যর্থ। বলা যায়, নিজেকে হারিয়ে আবার নতুন করে আবিষ্কার করার চেষ্টা করছেন তিনি। কেউ হয়তো ভাবেনওনি হামেস আবার ফিরবেন। তাও এমন দাপুটে পারফর্ম দিয়ে। কোপায় কলম্বিয়ার এতদূর আসার পেছনে হামেসের অবদান অনেকখানি। তাঁর নেতৃত্বে কলম্বিয়া তো শেষ ২৮ ম্যাচের একটিও হারেনি। আবার ব্যক্তিগতভাবে তিনিও দারুণ উজ্জ্বল। চলমান কোপায় এক গোলের সঙ্গে ছয় গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন হামেস।
মনে হচ্ছে, ২০১৪ সালের হামেসকে ফিরে পেল কলম্বিয়া। সেবার ব্রাজিলের মাটিতে একাই গোলমুখ কাঁপিয়েছিলেন। সবচেয়ে বেশি গোল করে গোল্ডেন বুটও জেতেন। এর পরই রিয়াল রেকর্ড ফি দিয়ে তাঁকে দলে ভেড়ায়। সেখানে আশানুরূপ পারফর্ম করতে না পারায় ছাড়তে হয় মাদ্রিদ। সেখান থেকে বায়ার্ন মিউনিখ, এভারটন হয়ে আবার হারিয়ে যাওয়া। কিন্তু কোপার মতো মঞ্চে যে কলম্বিয়ার আশার প্রদীপ হয়ে দেখা দেবেন, কে জানত? এবার ফাইনালে তাঁর আসল রূপটা দেখার অপেক্ষা। সেট পিস থেকে বল বানিয়ে দেওয়ার নিখুঁত এক কারিগর তিনি। তাঁর পার্সিং জাদুও মুগ্ধতা ছড়িয়েছে এরই মধ্যে। তবে হামেসের সঙ্গে আসল লড়াইটা হবে মেসির। আগের ছন্দে না থাকলেও সেমিতে গোল করে আবার নিজেকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ পাচ্ছেন লিও।