বঙ্গনিউজঃ চলে গেলেন সিরাজগঞ্জের ব্যক্তিগত পাঠাগারের আবদুল বারী। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সিরাজগঞ্জের বাহিরগোলায় নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাদ জোহর শহরের রহমতগঞ্জ কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মরণোত্তর দেহদান করেছিলেন কিন্তু মেডিকেল কলেজ দেহ নেয়নি। তার প্রতিষ্ঠিত বিশাল পাঠাগারটি কেউ একদিন সচল করবেন, এই আশা করতেন তিনি। সিরাজগঞ্জের একটি প্রজন্মের কাছে আলো ছড়িয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের পর প্রথম শ্রেণির ঠিকাদারি ব্যবসায়ী জীবন ত্যাগ করে সমাজের অসংগতি, বৈষম্য নিয়ে ভাবতে শুরু করেন আবদুল বারি। নিজের জমানো টাকা দিয়ে গড়ে তোলেন ব্যক্তিগত পাঠাগার। আবদুল বারী ছিলেন মুক্তবুদ্ধি চর্চার ধারক, মুক্তচিন্তার মানুষ, সাহিত্য, সমাজ, ইতিহাসের বোদ্ধা পাঠক। বিনামূল্যে বই পড়তে দিতেন। শত শত পাঠক তৈরি হয় তার পাঠাগারে। বই পড়ার পর পাঠকদের সঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময় করতেন।
সপ্তাহে সপ্তাহে কবিতা পাঠের আসর, সাহিত্য আড্ডা বসত তার ব্যক্তিগত পাঠাগারে। প্রথাবিরোধী লিটল ম্যাগাজিন ও বই প্রকাশ করতেন। তার আলোচনায়, বিজ্ঞান মনস্ক কথাবার্তায় উৎসাহিত হয়ে কলেজ শিক্ষার্থীরা প্রগতিশীল রাজনীতিতে সক্রিয় হতেন। তিনি প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণির কোপানলে পড়েন। মিথ্যা মামলায় হয়রানি হতে হয়। ৮০ এর শুরুতে বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সঙ্গে যুক্ত হন।
দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেপথ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতেন আবদুল বারি। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে নানাভাবে সহযোগিতা করতেন। পাশাপাশি গড়ে তোলেন ‘সম্ভাবনা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী’ ‘নির্দেশন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী’ ইত্যাদি সংগঠন।
তিনি সত্য বলতে একটুও কুণ্ঠিত হতেন না। গোড়া লোকেরা বহুবার তাকে মারার হুমকি দিয়েছে। তার ব্যক্তিগত পাঠাগার তুলে যমুনা নদীতে নিক্ষেপ করার ভয় দেখিয়েছে। কিন্তু তাকে টলাতে পারেনি। তিনি সমাজতন্ত্রের প্রতি আস্থাবান ছিলেন। দেশের বহু খ্যাতিমান লেখক রাজনীতিকরা আসতেন তার পাঠাগারে।