বঙ্গনিউজঃ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড অনেকটাই স্থবির হয়ে ছিল। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ভোট নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বন্ধ করে রাখা হয় বিভিন্ন শাখার সম্মেলন ও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কাজ। বড় দুই নির্বাচন শেষে আবারও সাংগঠনিক তৎপরতায় নজর দিচ্ছে দলটি। চলতি মাসেই বিভাগীয় টিমের নেতৃত্বে ধারাবাহিক বৈঠক করে অভ্যন্তরীণ বিভেদ নিরসন ও বিভিন্ন পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের বিষয়ে সার্বিক নির্দেশনা দেওয়া হবে। এরপর শোকের মাস আগস্টে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে চাঙ্গা হবে দলের সব ইউনিট। সেপ্টেম্বর থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূলকে সুসংগঠিত করার কার্যক্রম শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে বছরব্যাপী সারা দেশেই নানা কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। এর মধ্য দিয়ে তৃণমূলকে চাঙ্গা করতে চায় দল। শোকের মাস শেষ হলে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে সমাবেশের আয়োজন করা হবে। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সে কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।
এর আগে জাতীয় নির্বাচনের কারণে শাখা কমিটি গঠন ও সম্মেলনের কাজ সাময়িক বন্ধ রাখে আওয়ামী লীগ। পরে চলতি বছরের শুরুতে দ্রুত সময়ের মধ্যে দল গোছানোর নির্দেশনা দেওয়া হলেও উপজেলা নির্বাচনের কারণে তা সাময়িক স্থগিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পর আবারও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের দিকে নজর দেয় আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা তৃণমূলের কোন্দল ও বিভাজন নিরসন, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নতুন সম্মেলন ও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কাজ শুরু করেছে।
এ বিষয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা সারা বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করব। আমাদের কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করা হবে। আগস্ট মাসের পরে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ হবে। সে সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বক্তব্য দেবেন।’
জানা গেছে, বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কাজ এরই মধ্যে শুরু করেছে বিভিন্ন বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকরা। এরই মধ্যে গত বুধবার দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন জেলার নেতাদের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক করছে বিভাগীয় সাংগঠনিক কমিটি। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলায় বৈঠকের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। গত শনিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে রংপুর বিভাগের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সাত দিনের মধ্যে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ছয়টি শাখার কমিটি দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। আগামীকাল ৪ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগরের নেতাদের সঙ্গে চট্টগ্রামে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন ৫ জুলাই নীলফামারীর সৈয়দপুরে রংপুর বিভাগের সব ইউনিট নিয়ে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের যে কোনো দিন ময়মনসিংহ বিভাগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হবে।
আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল কালবেলাকে বলেন, ‘এ মাসেই বিভিন্ন জেলা উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি চূড়ান্ত করার হবে। সেজন্য তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। সেপ্টেম্বর থেকে কাউন্সিলের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তরের তথ্যমতে, সারা দেশে দলের সাংগঠনিক জেলার সংখ্যা ৭৮। আর উপজেলা, থানা ও পৌর কমিটির সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয়শ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এসব শাখায় তিন বছর পরপর সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের কথা। তবে বেশিরভাগ কমিটিই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্মেলন করে না।
জানা গেছে, এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের ৩৭টি জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর, বরিশাল জেলা, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জে, রংপুর জেলা ও মহানগরে বছরের পর বছর ধরে সম্মেলনই হয় না। আবার কিছু কিছু জেলায় সম্মেলন হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার, নোয়াখালী, চুয়াডাঙ্গাসহ কয়েকটি জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দেওয়া হলেও নানা জটিলতায় এখনো অনুমোদন পায়নি।
আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান কালবেলাকে বলেন, ‘কয়েকটি জেলা কমিটি দপ্তরে জমা রয়েছে। সেগুলো যে কোনো দিন অনুমোদন হয়ে যেতে পারে।’
অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রবল হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিটি জেলা-উপজেলায় দুই বা ততোধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আছে দল। নির্বাচনকে ঘিরে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে বিভিন্ন জেলায়। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল বা অন্তর্দ্বন্দ্বে গত জুন মাসে বিভিন্ন জেলায় ১৯টি সংঘর্ষ হয়েছে। এতে চারজন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন কালবেলাকে বলেন, ‘বড় রাজনৈতিক দলে নানা কারণে তৃণমূলে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এগুলো নিরসনে প্রতিনিয়ত কাজ করতে হয়। সব কাজ বা উদ্যোগ প্রচারিত হয় না। জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের তৃণমূলে বিভেদ বেড়েছে। আমরা রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক মতাদর্শ এবং কৌশল দিয়ে বিভেদ নিরসনের চেষ্টা করছি। তবে বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। তড়িঘড়ি করে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।’