কিম-পুতিন সামরিক চুক্তি,পশ্চিমা বিশ্বের উত্তেজনা আরও বাড়ল

Home Page » জাতীয় » কিম-পুতিন সামরিক চুক্তি,পশ্চিমা বিশ্বের উত্তেজনা আরও বাড়ল
বুধবার ● ১৯ জুন ২০২৪


রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম

বঙ্গ-নিউজ: পিয়ংইয়ংয়ে অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন একটি ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এর লক্ষ্য হলো তাদের অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ মোর্চা গড়ে তোলা।

পুতিনের এই সফরের মধ্য দিয়ে মস্কোর ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র সরবরাহের বিনিময়ে উত্তর কোরিয়াকে অর্থনৈতিক সহায়তা ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের একটি সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে উদ্বেগ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রযুক্তি হস্তান্তর কিমের পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির হুমকিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, পুতিন এবং কিম মূলত এক ঘণ্টার জন্য নির্ধারিত বৈঠকে প্রায় দুই ঘণ্টা মুখোমুখি আলোচনা করেছেন।

বুধবারের আলোচনার শুরুতে পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সমর্থনের জন্য কিমকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এটি ‘রাশিয়ান ফেডারেশনের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের’ একটি অংশ।

তিনি এই চুক্তিকে ‘দীর্ঘমেয়াদে আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করবে এমন একটি নতুন মৌলিক দলিল’ হিসেবে অভিহিত করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ মুহূর্তে কোরিয়ান উপদ্বীপে জাপানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সোভিয়েত সেনাবাহিনীর লড়াই এবং কোরিয়ান যুদ্ধের সময় মস্কোর পিয়ংইয়ং সমর্থনের ইতিহাস স্মরণ করেন তিনি।

কিম বলেন, মস্কো এবং পিয়ংইয়ংয়ের ‘জ্বলন্ত বন্ধুত্ব’ এখন সোভিয়েত আমলের চেয়েও ঘনিষ্ঠ। তিনি ইউক্রেনে ‘সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা স্বার্থ এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনায় রাশিয়ার সরকার, সেনাবাহিনী ও জনগণকে পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি’ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন।

কিম এর আগেও একই ধরনের ভাষা ব্যবহার করেছেন। তিনি রাশিয়ার স্বার্থ রক্ষার ন্যায়সঙ্গত পদক্ষেপ হিসেবে একে বর্ণনা করেছেন এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমাদের ‘আধিপত্যবাদী নীতিকে’ এই সংকটের জন্য দায়ী করেছেন।

এই সমর্থন কী রকম হতে পারে, তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার হয়নি এবং চুক্তির কোনো বিবরণ প্রাথমিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।

উত্তর কোরিয়া তার অস্ত্র কর্মসূচির জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে। একই সময়ে, ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য রাশিয়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা অংশীদারদের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছে।

রাশিয়ার গণমাধ্যম জানিয়েছে, কিম একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন এবং পুতিনের বুধবার সন্ধ্যায় ভিয়েতনামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার কথা রয়েছে।

আলোচনার আগে কিম শহরের প্রধান চত্বরে একটি জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুতিনকে স্বাগত জানান। সেখানে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী চোই সন হুই, শীর্ষ সহযোগী ও ক্ষমতাসীন দলের সম্পাদক জো ইয়ং ওন এবং নেতার শক্তিশালী বোন কিম ইয়ো জং সহ উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন।

পুতিনের মোটর শোভাযাত্রাকে স্বাগত জানাতে রাস্তায় বিপুল সংখ্যক জনতা ‘স্বাগতম পুতিন’ স্লোগান দিয়ে এবং ফুল ও উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার পতাকা নিয়ে সারিবদ্ধ হয়।

পুতিনের সঙ্গে উপ প্রধানমন্ত্রী ডেনিস মন্তুরভ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসভ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন বলে জানান তার পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ।

মার্কিন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা উত্তর কোরিয়াকে ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য রাশিয়াকে গোলাবারুদ, ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের অভিযোগ করেছেন। এর বিনিময়ে সম্ভবত মস্কো গুরুত্বপূর্ণ সামরিক প্রযুক্তি এবং সহায়তা দিচ্ছে। তবে পিয়ংইয়ং এবং মস্কো উভয়ই উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র হস্তান্তরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে, যা রাশিয়া পূর্বে সমর্থন করেছিল এমন একাধিক জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করবে।

চীনের পাশাপাশি রাশিয়াও উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে আসছে। জাতিসংঘে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞার প্রচেষ্টা বারবার রুশ ভেটোর কারণে ব্যর্থ হয়েছে।

গত মার্চে জাতিসংঘে রাশিয়ার ভেটোর কারণে উত্তর কোরিয়ার ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণ বন্ধ হয়ে যায়। পশ্চিমা বিশ্বের অভিযোগ, ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য পিয়ংইয়ং থেকে অস্ত্র কেনার সময় মস্কো নজরদারি এড়াতে চাইছে। উত্তর কোরিয়ার ওপর নতুন করে নজরদারির প্রক্রিয়া নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া আলোচনা করছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্লেষকদের মতে, কিম সম্ভবত রাশিয়া থেকে শক্তিশালী অর্থনৈতিক সুবিধা এবং উন্নত সামরিক প্রযুক্তি চাইবেন। তবে পুতিনের সঙ্গে তার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাগুলো সম্ভবত প্রকাশ্যে আসবে না।

উত্তর কোরিয়ার সামরিক পারমাণবিক কর্মসূচিতে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছাতে সক্ষম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) রয়েছে। তবে এই কর্মসূচির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির জন্য কিমের বাইরের প্রযুক্তি সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে। রাশিয়া ইতোমধ্যে মহাকাশ রকেট এবং সামরিক নজরদারি উপগ্রহ সংক্রান্ত প্রযুক্তিতে উত্তর কোরিয়াকে সহায়তা করছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কিম দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর নজরদারি এবং তার পারমাণবিক-সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি বাড়াতে এসব প্রযুক্তিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য রাশিয়া ও অন্যান্য দেশে শ্রম রফতানি বাড়াতে এবং অন্যান্য অবৈধ কার্যকলাপ চালাতে পারে। এছাড়াও কৃষি, মৎস্য ও খনি খাতে সহযোগিতা বাড়ানো এবং রাশিয়ান পর্যটকদের উত্তর কোরিয়া ভ্রমণে উৎসাহিত করার বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।

ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, পুতিনের উত্তর কোরিয়া সফর প্রমাণ করে যে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে শুরু করা আগ্রাসী যুদ্ধ চালিয়ে যেতে রাশিয়া কীভাবে ‘হতাশার মধ্যে’ সম্পর্ক জোরদার করতে চায়।

ব্লিঙ্কেন মঙ্গলবার ন্যাটো প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘উত্তর কোরিয়া ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য রাশিয়াকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গোলাবারুদ… এবং অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহ করছে। ইরান বেসামরিক নাগরিক এবং অবকাঠামোর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত ড্রোনসহ অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহ করছে।’

কিমের অস্ত্র পরীক্ষা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সম্মিলিত সামরিক মহড়ার গতি বৃদ্ধির কারণে কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা বহু বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।

উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া শীতল যুদ্ধের আদলে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধেও লিপ্ত হয়েছে। উত্তর কোরিয়া বেলুনের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রচুর পরিমাণে আবর্জনা ফেলেছে। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া লাউডস্পিকারের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়াবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১:০৭:০৫ ● ৯৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ