স্বাধীনতা ও ব্যাংক শাখা সৃষ্টির আগে মৃতদের নামেও কৃষিঋণ

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » স্বাধীনতা ও ব্যাংক শাখা সৃষ্টির আগে মৃতদের নামেও কৃষিঋণ
বুধবার ● ১২ জুন ২০২৪


বিকেবি কেশবপুর শাখা বাউফল

বঙ্গ-নিউজ: স্বাধীনতার আগেই মারা গেছেন অন্তত চারজন। কেউ থাকেন ঢাকায়, কোনোদিন এলাকার ব্যাংকে যাননি। এমন ১৪ জনের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে ২০১৪ সালে তোলা হয়েছে কৃষিঋণ। সম্প্রতি সেই ঋণ পরিশোধের জন্য ওই সব ব্যক্তিদের ঠিকানায় নোটিশ দিয়েছে ব্যাংক। এমন নোটিশ পেয়ে হতভম্ব ওই সব ব্যক্তির বংশোধর ও পরিবারের সদস্যরা।

নজিরবিহীন এ ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখায়। ভুক্তভোগীদের ১২ জনের বাড়ি বাউফলের সূর্য্যমনি ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে। তবে এমন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, বাউফলে ১৯৮৪ সালের ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখা চালু হয়। ব্যাংকের পাঠানো নোটিশের তথ্য অনুযায়ী, বাউফলের কালিকাপুর গ্রামের কেতাব উদ্দিন হাওলাদারের তিন ছেলে হযরত আলী, রহম আলী ও জবেদ আলী ২০১৪ সালে কৃষিব্যাংকের কেশবপুর শাখা থেকে কৃষিঋণ নিয়েছেন।

তাদের মধ্যে জবেদ আলী ২৫ হাজার ও ৩০ হাজার টাকার দুটি ঋণ, হযরত আলী ৪৫ হাজার টাকা ও রহম আলী ৫০ হাজার টাকার ঋণ নিয়েছেন। অথচ জবেদ আলী ১৯৬০ সালে, হযরত আলী ১৯৬৫ সালে এবং রহম আলী ১৯৬৬ সালে মারা গেছেন।

জবেদ আলীর নাতি ফকরুল ইসলাম বলেন, ১৯৬৭ সালের ১ জুন আমার জন্ম। আমি আমার দাদাকে দেখিনি। অথচ সেই দাদার নামে ২০১৪ সালে নেওয়া ঋণ পরিশোধের নোটিশ এসেছে। এতে আমরা হতবাক হয়ে গেছি।

কালিকাপুর গ্রামের সবচেয়ে প্রবীণ বাসিন্দা আবুল মৃধা (৭৫) ও গোঞ্জর আলী হাওলাদার (৮২) জানান, জবেদ, রহম ও হযরত আলী বয়সে তাদের চেয়েও বড় ছিলেন। তারা মারা গেছেন দেশ স্বাধীন হওয়ারও অনেক আগে। আর তারা কিনা ২০১৪ সালে ঋণ নিয়েছেন!

কালিকাপুর গ্রামের মো. জয়নাল হাওলাদার মারা গেছেন ১৯৬৯ সালে। অথচ তার নামেও ২০১৪ সালে কৃষিঋণ তোলা হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। জয়নাল হাওলাদারের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আবুল বাশার (৬৪) বলেন, আমার বাবার মৃত্যুর সময় ব্যাংকের ওই শাখারই জন্ম হয়নি। ঋণ পরিশোধের নোটিশ পাওয়ার পরই আমরা জানতে পারি, ২০১৪ সালে ঋণ তোলা হয়েছে বাবার নামে।

এছাড়াও কালিকাপুর গ্রামের মো. বাবুল মৃধা (৪৪), তার ছোট ভাই ফারুক হোসেন মৃধার (৪২) নামে ঋণ তোলা হয়েছে কয়েক দফায়। অথচ বাবুল মৃধা ঢাকায় থাকেন দীর্ঘ বছর ধরে। তিনি ওই কৃষি ব্যাংকের শাখা থেকে ঋণ নেওয়া তো দুরের কথা সেখানে কোনোদিন যাননি।

আরেক ভুক্তভোগী আবদুল করিম মৃধার নামে ৩৫ হাজার টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। গ্রাম কালিকাপুর থাকলেও তার বাবার নাম উল্লেখ রয়েছে রুস্তম আলী মৃধা। অথচ ওই নামের কেউ কালিকাপুর গ্রামে নেই। তাছাড়া ঠিকানা ঠিক থাকলেও ছবি ও স্বাক্ষর করিম মৃধার নয়।

ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিধি অনুযায়ী যে কোনো ঋণ অনুমোদনের আগে ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি ও তার নথিপত্র যাচাই-বাছাই করেন ব্যাংকের কোনো মাঠ কর্মকর্তা। কাগজপত্র সব ঠিকঠাক থাকলে শাখা ম্যানেজারের কাছে ঋণের সুপারিশ করেন ওই মাঠ কর্মকর্তা। এরপর ম্যানেজার ফের যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সশরীরে উপস্থিত ঋণগ্রহীতার স্বাক্ষর বা টিপসই নিয়ে ঋণের অর্থ অনুমোদন করে থাকেন।

এদিকে নোটিশ পাওয়ার পর ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনরা কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখায় যোগাযোগ করেছেন। অভিযোগের পর ব্যাংকটির শাখা কর্তৃপক্ষ ২০১৪ সালে কর্মরত মাঠ কর্মকর্তাকে তলব করেছেন, যদিও ওই কর্মকর্তা এখন অবসরে রয়েছেন। আর তৎকালীন শাখা ম্যানেজারও দেশের বাইরে চলে গেছেন।

কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখার বর্তমান ম্যানেজার হুসাইন মো. তাইফ আলম বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন এসে বিষয়টি জানিয়েছেন। তাতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঋণগুলো অনুমোদন করা হয়েছে ২০১৪ সালে। তৎকালীন দায়িত্বে থাকা মাঠ কর্মকর্তাকে আমরা তলব করেছি। ওই সময় যিনি ম্যানেজার ছিলেন, তিনি সম্ভবত এখন আর দেশে নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালে কেশবপুর কৃষি ব্যাংক শাখার মাঠ কর্মকর্তা ছিলেন শফিউর রহমান। বছর পাঁচেক আগে তিনি অবসরে গেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শফিউর বলেন, আমি ২০১৯ সালে অবসরে গেছি। আমার সময়ে কোনো মৃত ব্যক্তি কিংবা নামে-বেনামে ঠিকানা ব্যবহার করে কোনো ঋণ দেওয়ার সুপারিশ আমি করিনি।

এ বিষয়ে সূর্য্যমনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিসহ সবাই জানেন, জবেদ আলীসহ ওই চার ব্যক্তি স্বাধীনতার আগেই মারা গেছেন। তাহলে তারা কীভাবে ঋণ নিলেন! এমন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

সূত্র: প্রথম আলো

বাংলাদেশ সময়: ২০:৪৯:০৩ ● ৮০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ