বঙ্গনিউজ ডেস্ক : প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়েছে দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলা। দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টার বেশি এ ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছে ১৪ জন। দেড় লাখের বেশি বাড়িঘর সম্পূর্ণ ও আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে ৩৭ লাখ মানুষ। এ ছাড়া বসতবাড়ি, রাস্তায় উপড়ে পড়েছে গাছ। জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে শতাধিক গ্রাম। ভেসে গেছে হাজার বিঘার চিংড়ি ঘের। দিনভর ভারী বর্ষণে দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ভূমিধসেরও।
ঘূর্ণিঝড় রিমালে মৃত্যুবরণ করেছে ১৪ জন। বরিশালে তিন, ভোলায় তিন, পটুয়াখালীতে তিন এবং চট্টগ্রাম, খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া ও লক্ষ্মীপুরে একজন করে। যদিও সরকারিভাবে গতকাল বিকালে জানানো হয়েছে ১০ জনের মৃত্যুর কথা।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ রবিবার রাত ৮টার দিকে উপকূলে আঘাত হানে। পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার মধ্যবর্তী দিয়ে উপকূল অতিক্রম শুরু করলেও রাতভর শুধু তাণ্ডবই চালায়। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল। ঘূর্ণিঝড়টি ভয়ংকর হয়ে ওঠার কারণে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছিল। সারা রাত তাণ্ডব ঘটিয়ে গতকাল সকালের দিকে দুর্বল হতে থাকে রিমাল। এ অবস্থায় সকালে সমুদ্রবন্দরগুলোয় ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়। এরপর সারা দিনই রিমালের প্রভাবে বিভিন্ন জেলায় হালকা থেকে ভারী বৃষ্টি ঝরতে থাকে। সঙ্গে চলে তীব্র ঝোড়ো বা দমকা হাওয়া।
ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বিকালে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান বলেন, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও চট্টগ্রামে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হচ্ছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭ এবং ইউনিয়ন ও পৌরসভা ৯১৪টি। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬। ৩৫ হাজার ৪৮৩টি সম্পূর্ণ এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় এলাকাগুলোয় ৯ হাজার ৪২৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্র ও স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮ লাখের বেশি লোক আশ্রয় নিয়েছে। গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়াসহ পশুর সংখ্যা ৫২ হাজার ১৪৬। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের অনুকূলে ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৫ জেলায় ৩ কোটি ৮৫ লাখ নগদ টাকা, ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য কেনার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ ও গোখাদ্য কেনার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। উদ্ধার কার্যক্রমসহ দুর্যোগ-পরবর্তী অন্য সব কর্মকাণ্ডেও সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন প্রতিমন্ত্রী।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রাজধানীতে গতকাল সকাল থেকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ আবহাওয়া আজও অব্যাহত থাকবে। আবহাওয়াবিদরা জানান, গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত ঢাকায় ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
বরিশাল : ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে দেয়ালধসে ও গাছের ডাল ভেঙে পড়ে বরিশাল জেলায় তিনজন নিহত হয়েছে। জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম জানান, তিনজন নিহতের মধ্যে বরিশাল নগরের রূপাতলীতে দেয়ালধসে দুজন এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে একজন। গাছের ডাল ভেঙে মৃত জালাল সিকদার (৫৫) বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের চরদাড়িয়ালের বাসিন্দা। দেয়ালধসে নিহতরা হলেন পটুয়াখালীর বড়বিঘাই গ্রামের হোটেল মালিক লোকমান হোসেন ও কর্মচারী মোকছেদুর রহমান। রিমালের কারণে গোটা বরিশাল বিভাগে লন্ডভন্ড হয়েছে অসংখ্য গাছপালা। শহর ও গ্রাম মিলিয়ে পানিবন্দি অনেক মানুষ। ফসলি জমি, রাস্তাঘাট তলিয়ে রয়েছে। গতকাল সকাল ১০টার পর থেকে মোবাইল নেটওয়ার্কও ধীরে ধীরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বিভাগীয় প্রশাসন জানিয়েছে, উপড়ে পড়া গাছপালা অপসারণে কাজ শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস।
ভোলা : ভোলায় ২ হাজারের অধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরচাপা ও গাছচাপায় তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তার মধ্যে একজন নারী, একজন পুরুষ ও শিশু রয়েছে। গতকাল সকালে তাদের মৃত্যু হয়। তারা হলেন লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের মনেজা খাতুন (৫০), বোরহানউদ্দিন উপজেলার চাচড়া ইউনিয়নের জাহাঙ্গির (৫০) ও দৌলতখান পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মনিরের মেয়ে মাইশা (৪)। জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নিহতের পরিবারকে নগদ ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা করা হবে।
পটুয়াখালী : ঝোড়ো বাতাসে গাছ উপড়ে পড়ে পটুয়াখালীর দুমকী ও বাউফলে দুই বৃদ্ধ এবং কলাপাড়ায় এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল বাউফল উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত ঘরে চাপা পড়ে আবদুল করিম (৬৫) নিহত হন। দুমকীর পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে গাছ চাপা পড়ে জয়নাল হাওলাদার (৭০) নিহত হন। জেলার সর্বত্র বিদ্যুৎবিহীন। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সংযোগে দিনভর বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে দফায় দফায় প্লাবিত হয়েছে চরাঞ্চলসহ জেলার শতাধিক গ্রাম। তলিয়ে গেছে পৌরসভাসহ নিম্নাঞ্চল। এ ছাড়া গতকাল কলাপাড়ায় এক যুবক নিহত হয়েছেন। পটুয়াখালীতে মোট তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে বলে জানান ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দেবনাথ।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজীদ থানার টেক্সটাইল আবাসিক এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনের দেয়ালধসে সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৬) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে চন্দননগরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক পেশায় রিকশাচালক।
খুলনা : খুলনার বটিয়াঘাটায় ঘূর্ণিঝড়ে গাছ চাপা পড়ে লালচাঁদ মোড়ল (৩৬) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের গাওঘরা গরিয়ারডাঙ্গা গ্রামের গহর মোড়লের ছেলে। সুরখালী ইউপি চেয়ারম্যান এস কে জাকির হোসেন জানান, ঝড়ের রাতে নিজের ঘরে শুয়ে ছিলেন লালচাঁদ। প্রবল বাতাসে গাছ উপড়ে ঘরের ওপর পড়লে চাপা পড়ে তার মৃত্যু হয়।
রিমালের তাণ্ডবে খুলনার চার উপজেলায় বাঁধ ভেঙে বসতবাড়িসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে কয়েক লাখ গ্রাহক। গ্রীষ্মকালীন সবজি ও মাঠের ফসল নষ্ট হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষক।
সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচতে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকত মোড়ল (৬৫) নামে বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে শ্যামনগর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান। তবে সুন্দরবনের কারণে বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে সাতক্ষীরার উপকূলীয় জনপদের মানুষ। ঝোড়ো হাওয়া ও ভারী বর্ষণে ভোগান্তিতে পড়েছে দেড় লাখের বেশি মানুষ।
লক্ষ্মীপুর : জেলার রামগঞ্জে ঘর চাপা পড়ে ফারিয়া নামে সাত বছরের শিশু মারা গেছে। গতকাল উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সংসার আলী বেপারী বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। জোয়ারের পানিতে জেলার কমলনগর নাসিরগঞ্জে ১০০ মিটারের বেশি বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিবন্দি অনেক পরিবার। বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নোয়াখালী : রিমালের প্রভাবে বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি ঢুকে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের প্রায় ১১ গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। জোয়ারের প্রভাবে হাতিয়ায় নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ থেকে ১০ ফুট বেড়ে গেছে। হাতিয়ার ইউএনও শুভাশিস চাকমা জানান, হাতিয়ার বিভিন্ন নৌরুটে সি-ট্রাক, ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাত্রীদের জানমাল ও নিরাপত্তার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত হাতিয়ার সঙ্গে সব নৌ চলাচল বন্ধ থাকবে।
ফেনী : ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ঝরছে বৃষ্টি। বাতাসে গাছপালা নুইয়ে পড়ছে। তবে গতকাল সন্ধ্যায় কোথাও কোনো হতাহত কিংবা দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
চাঁদপুর : চাঁদপুরে রিমালের প্রভাবে বাতাসের গতি ও বৃষ্টিপাত বেড়েছে। গতকাল ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রবিবার মধ্যরাত থেকে চাঁদপুর-ঢাকাসহ সব রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। জেলার সর্বত্র বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্কে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া মেঘনা নদীর পশ্চিমের চরাঞ্চলে সড়ক ও বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
রাঙামাটি : ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর টানা বৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ে। কখনো হালকা, কখনো মাঝারি ও আবার কখনো ভারী। পাহাড়ধসের আতঙ্কে পাহাড় ছাড়ছে অনেকেই। রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান এরই মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোর মানুষকে নিরাপদে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে মানুষকে সতর্ক করতে মাঠে নেমেছেন জনপ্রতিনিধিরাও। রাঙামাটি পৌরসভার তথ্যমতে, শুধু রাঙামাটি শহর এলাকায় ১ লাখ ২৫ হাজারের অধিক মানুষ পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করে।
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়িতে রিমালের প্রভাবে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। ভারী বর্ষণে পাহাড়ধসের শঙ্কা রয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে ও ওপরে ঝুঁকিতে বাসবাস করছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবার। এরই মধ্যে পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। পাহাড়ধসে সড়ক যোগাযোগ যাতে বিচ্ছিন্ন না হয় সেজন্য কাজ করার কথা জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
গাজীপুর : ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে গাজীপুরে গতকাল ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। বৃষ্টির কারণে এদিন গার্মেন্ট শ্রমিক ও কর্মজীবী লোকজন চরম ভোগান্তিতে পড়ে। রাস্তায় সব ধরনের যানবাহন কম দেখা গেছে।
কক্সবাজার : রিমালের প্রভাবে কক্সবাজারে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সাগরে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে উপকূল ও নিম্নাঞ্চলের অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রবিবার রাত থেকে কক্সবাজারে বজ্রবৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বয়ে গেছে। জেলার কিছু কিছু এলাকায় গাছপালা ও কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের কিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি দ্বীপের কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন ধরেছে। এদিকে ভূমিধসের আশঙ্কায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয় নিতে প্রচার চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা।
নারায়ণগঞ্জ : রিমালের প্রভাবে বৃষ্টিতে পানিবন্দি ডিএনডির প্রায় ২০ লাখ মানুষ। ঝোড়ো বাতাসে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের তারে গাছ পড়ে জেলাজুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। গতকাল দুপুরের পর থেকে প্রায় জেলাজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে, আর যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ আছে সেখানেও আছে লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট। পুরো নারায়ণগঞ্জ মূল শহর ডুবে গেছে হাঁটুপানিতে। শহরতলির অর্ধশতাধিক এলাকা ৩-৪ ফুট পানির নিচে। শহরের প্রধান প্রধান সড়কে হাঁটুপানি জমেছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকাসহ শহরতলির বিভিন্ন এলাকার অলিগলি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় ঘর মেরামতের সময় ঘূর্ণিঝড় রিমালের ধাক্কায় চাল থেকে পড়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম বাদশা মল্লিক (৬০)। তিনি মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া দাসপাড়ার মৃত খবির মল্লিকের ছেলে। গতকাল সকালের দিকে এ ঘটনা ঘটলেও রাতে তা নিশ্চিত করেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবদুর রহমান। তিনি বলেন, নিহতের পরিবারকে ত্রাণ হিসেবে নগদ ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের বাতাস শুরু হওয়ার পর বৃদ্ধ বাদশা মল্লিক ঘর মেরামতের জন্য চালে ওঠেন। কিন্তু বাতাসের ধাক্কায় তিনি পড়ে যান।