বঙ্গনিউজ ডেস্ক : মন হরণ করা সৌন্দর্যের কারণে বাংলা কবিতায় স্থান করে নিয়েছে জারুল। প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশও জারুলের প্রেমে পড়ে কবিতায় জারুলকে তুলে এনেছেন এভাবে, ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে- সবচেয়ে সুন্দর করুণ/ সেখানে সবুজ ডাঙা ভরে আছে মধুকূপী ঘাসে অবিরল; সেখানে গাছের নাম: কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল; সেখানে ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জাগিছে অরুণ।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘ভিজে হয়ে আসে মেঘ দুপুরের চিল একা নদীটির পাশে, জারুল গাছের ডালে বসে বসে চেয়ে থাকে ওপারের দিকে।’
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে সবুজ প্রকৃতিতে গ্রীষ্মের এ খরতাপের মধ্যেই গাঢ় বেগুনি রঙে মনমাতানো ফুলে পসরা সাজিয়েছে জারুল। পথের ধারে ও বাগানে জারুল ফুলের নয়নাভিরাম এ দৃশ্যে তপ্ত প্রকৃতি যেন নৈসর্গিক সৌন্দর্যে রূপ নিয়েছে। জারুল ছাড়াও সোনালু ও কৃঞ্চচূড়া ফুলে ছেয়ে গেছে প্রকৃতি। বিভিন্ন জাতের বাহারি ফুলের সমারহে সৌন্দর্যের এক অপরূপ সাজে সজ্জিত উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পথ প্রান্তর। এতে করে মুগ্ধ প্রকৃতিপ্রেমি ও এলাকাবাসী।
জারুলের বাকল মসৃণ। এর রং ধূসর। এর ফুল গাঢ় বেগুনি। জারুল কাঠ শক্ত ও মসৃণ। এর কাঠ লালচে রঙের হয়। জারুল কাঠ দিয়ে পানির নিচেও কাজ করা যায়। এ গাছের উচ্চতা ৮০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। জারুলের বৈজ্ঞানিক নাম লেজারস্ট্রমিয়া স্পেসিওজা। বৈজ্ঞানিক এ নামের প্রথমাংশ অন্যতম তরু অনুরাগী সুইডেনের লেজারস্ট্রমের নাম থেকে। আর স্পেসিওজা একটি ল্যাটিন শব্দ, যার অর্থ সুন্দর। এই গাছটির আদি নিবাস চীন, শ্রীলঙ্কা, মালয় ও বাংলা-ভারতের জলাভূমি অঞ্চল। ইংরেজিতে এই গাছকে ‘প্রাইড অব ইন্ডিয়া’ বলা হয়। তবে এটিকে বাংলার চেরিও বলা হয়।
জানা গেছে, ‘অক্সিজেনের রাজ্য গড়ি, হরিরামপুর সবুজে ভরি’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখেই পরিবেশবান্ধব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘হরিরামপুর শ্যামল নিসর্গ’ গঠন করা হয়। সংগঠনটি এখন পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আঙিনা ও বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার দুই পাশ ও উপজেলা দুর্গম চরাঞ্চলসহ সব মিলিয় তিন বছরে প্রায় পঞ্চাশ হাজারের অধিক জাতের ফুল ও ফলজ গাছ লাগিয়েছে। এরমধ্যে বট, নিম, দেবদারু, মেহগনি, জারুল, সেনালু, কৃঞ্চচূড়া, ক্যাসিয়া জাভানিকা, শ্বেত জবা, ডালিয়াসহ বিভিন্ন ফুল ও ফলজ গাছ রয়েছে। তিন বছরেই উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে রোপন করা গাছে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। এতে করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনা রাস্তার ধারে ফুলে ফুলে এক অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমোহিত প্রকৃতি প্রেমিরা। শুধু তাই নয়, রাস্তায় চলাচলকারী পথচারিরাও প্রখর রৌদ্রতাপে শীতলতা উপভোগ করছেন এ বৃক্ষের ছায়াতলে।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক প্রণব পাল বলেন, শ্যামল নিসর্গ প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই পরিবেশ রক্ষায় নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করে আসছে সংগঠনটি। হরিরামপুরের বিভিন্ন এলাকায় আমরা তিন বছরে প্রায় ৫০ হাজারের অধিক বিভিন্নজাতের বৃক্ষরোপন করেছি। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে জারুল ফুল ফুটতে শুরু করেছে। যা ওই প্রতিষ্ঠানের সৌন্দর্যবর্ধনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও বিভিন্ন রাস্তার পাশের গাছগুলো বেশ বড় হয়ে উঠেছে।
সংগঠনটির সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, আমাদের এখানে বিভিন্ন উন্নয়নের কাজে যে গাছগুলো কাটা পড়ছে তা আর লাগানো হচ্ছে না। তাই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই একটা পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। তাই আমরা শ্যামল নিসর্গ সংগঠনের মাধ্যমেই সেই কাজটি করার চেষ্টা করছি। যার সুফল ইতোমধ্যে অনেকটা প্রস্ফুটিত হচ্ছে। আমাদের এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।