বঙ্গনিউজ ডেস্ক : পৃথিবীতে মানুষকে মর্যাদাবান করে পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি মানুষই মর্যাদা চায়, মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চায়। সৃষ্টিগতভাবেই প্রতিটি মানুষ মর্যাদাবান; তবে তাদের মধ্যেও আছে বিশেষ কিছু মর্যাদার অধিকারী। মানুষের কর্তব্য হচ্ছে, এ মর্যাদা রক্ষা করা। যে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলবে সে মর্যাদাবান আর যে অমান্য করবে সে নিকৃষ্ট বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহর কাছে মর্যাদার অন্যতম মাপকাঠি হচ্ছে তাকওয়া। যে যত বেশি আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহর দরবারে সে তত বেশি মর্যাদাবান। এদের মধ্যেও কিছু মানুষকে ইসলামে শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
কোরআনের শিক্ষক-শিক্ষার্থী: কোরআন সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির হেদায়েতের জন্য প্রেরিত কিতাব। যারা এ কিতাব শেখে ও শেখানোর কাজে মশগুল থাকবে, নিশ্চয়ই তারা সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষদের অন্তর্ভুক্ত হবে। হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ওই ব্যক্তি, যে নিজে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়।’ (বোখারি : ৫০২৭)
পাওনা পরিশোধে উদার: কারও কাছ থেকে ঋণ করলে, কেউ আমানত রাখলে বা অন্য কোনোভাবে কেউ পাওনা থাকলে তা সঠিক সময়ে সঠিকভাবে আদায় করা শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.)-এর কাছে কোনো এক ব্যক্তির একটি বিশেষ বয়সের উট পাওনা ছিল। সেই পাওনার জন্য এলে তিনি সাহাবিদের বললেন, তার পাওনা দিয়ে দাও। তারা সেই উটের সমবয়সী উট অনেক খোঁজাখুঁজি করলেন, কিন্তু পেলেন না। অবশ্য তা থেকে বেশি বয়সের উট পেলেন। তখন নবী (সা.) বললেন, তাই দিয়ে দাও। তখন লোকটি বলল, আপনি আমার প্রাপ্য পুরোপুরি আদায় করেছেন; আল্লাহ আপনাকেও পুরোপুরি প্রতিদান দিন। তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘যে পরিশোধ করার বেলায় উদার, সেই তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি।’ (বোখারি : ২৩০৫)
স্ত্রীর আদালতে উত্তীর্ণ: পৃথিবীতে কোনো মানুষই দোষত্রুটি মুক্ত নয়। মানবীয় অপূর্ণতা নিয়েও চরিত্রগুণে মর্যাদা, নিষ্কলুষতা ও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা মানুষের পক্ষে সম্ভব। একজন মানুষের মানবীয় দুর্বলতা ও অসংগতি সবচেয়ে বেশি জানে ঘরের লোকজন। বিশেষত স্ত্রীর দৃষ্টিতে প্রকাশ্য-গোপন সবরকম পরিচয় উন্মোচিত থাকে। তাই কোনো ব্যক্তির ব্যাপারে যদি স্ত্রীর পক্ষ থেকে উত্তম গুণাবলির সনদ পাওয়া যায় তাহলে সে উত্তম বলে বিবেচিত হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, ইমানদারদের ভেতর সবচেয়ে পরিপূর্ণ মুমিন ওই ব্যক্তি, যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম। আর তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ওই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীদের দৃষ্টিতে উত্তম।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২/৪৭২)
মানুষের উপকারে নিবেদিত: যে ব্যক্তি অন্যের ক্ষতি করে না বরং উপকার করে ও কল্যাণের কারণ হয়, এমন ব্যক্তির জন্যও রয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যার কাছ থেকে সবাই কল্যাণ আশা করে; অনিষ্টের আশঙ্কা না করে।’ (তিরমিজি : ২২৬৩)। আরও বলেন, ‘ওই ব্যক্তি সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠ, যে মানুষের জন্য অধিক কল্যাণকর ও উপকারী।’ (মুজামু তাবরানি : ৫৭৮৭)।
আল্লাহ বোঝার ও আমল করার তওফিক দিন।
লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক