বঙ্গনিউজ ডেস্ক : রাজধানীর বাজারে গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় সব ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও খাবারের তালিকা সংকুচিত হয়েছে। তার সঙ্গে বেড়েছে পুষ্টিহীনজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। গত রমজানের পর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যেন লাগামহীন হয়ে উঠেছে। ২০-২৫ টাকার সবজি হঠাৎ ৭০-৮০ টাকা হয়ে যাচ্ছে। আবার ১৮০ টাকার ব্রয়লার মুরগি ২৪০-২৮০ টাকা হতে দেখেছে রাজধানীর মানুষ। নিত্যপণ্যের এমন লাগামহীনতার বাজারে যেন অসহায় নগরবাসী।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার, সূত্রাপুর বাজার, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, আসন্ন বাজেট ঘিরে উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল রাজধানীর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতারা বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন। কারওয়ান বাজারে পণ্য কিনতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবী নারী শিপ্রা সাহা। আলুর দাম-দর করে পাঁচ কেজি আলু ৩০০ টাকায় কিনলেন তিনি। তিনি কালবেলাকে বলেন, ঢাকায় সব কিছুর দাম বাড়তি। কখন কোন পণ্যের দাম বেড়ে যায় বলা দায়। চারজনের পরিবারের জন্য সপ্তাহের বাজার করতে ৪ হাজার টাকা নিয়ে এলেও হচ্ছে না। আগে দুই-তিন হাজার টাকায় মোটামুটি সপ্তাহের বাজার সারা যেত; কিন্তু এখন ৪ হাজারেও হচ্ছে না। যে যার মতো করে দাম হাঁকাচ্ছে। ইচ্ছা হলে নিন না হলে বাজার করা বাদ দিন। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এমন পরিস্থিতি এড়াতে প্রয়োজন ছিল পাইকারি বাজার থেকে খুচরা পর্যায় পর্যন্ত নিয়মিত সরকারের মনিটর করা। তারা সেটা করতে না পারার কারণে আজ ৩০ টাকার আলু ৬০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা কেজি দরে, যা নিয়মিত দামের দ্বিগুণ। আলু বিক্রেতা আজিজ মিয়া বলছেন, খুচরা আলুর দাম বেশি কারণ পাইকারি বাজারে আলু ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে মানভেদে। আর পরিবহন খরচ, দোকান ভাড়া ও লাভের অংশ যোগ করে ৫৫-৬০ টাকা মানভেদে বিক্রি করছি।
আসলে গত বছরের মতো এ বছর আলুর জোগান নেই বলছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তাই সব আলুর পাইকারি দাম বেড়েছে। শুধু আলুই নয়, সারা বছর যে কাঁচা পেঁপে বিক্রি হয় ২৫-৩০ টাকায়, সেটির দামও এখন দ্বিগুণের বেশি। বাজারভেদে ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। কয়েকদিন আগে অবশ্য এই দাম ৯০-১০০ টাকায় উঠেছিল। ঝিঙ্গা, বেগুন, বরবটিসহ এ সময়ের বিভিন্ন সবজি ৮০ টাকার কমে খুব একটা পাওয়া যায় না। মূল্য বৃদ্ধির তালিকায় যোগ দিয়েছে পেঁয়াজও; পণ্যটি এখন ৭৫-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রোটিনের সবচেয়ে সস্তা উৎস হিসেবে পরিচিত ব্রয়লার মুরগির মাংস ও এর ডিমের দামও বেড়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে এখন ২১৫-২২০ টাকা কেজি দরে। গত বছরের এ সময়ে এর দাম ছিল ১৯০ টাকার মধ্যে। প্রতি ডজন ডিমের দাম মাসখানেক আগেও ছিল ১২০-১৩০ টাকার মধ্যে, যেটি এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৫-১৬০। অবশ্য হালি কিনলে এর দাম পড়ছে ৫৫ টাকা। প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম এখন ৭৮০-৮০০ টাকা। গরুর মাংস এখন সীমিত আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে।
নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে ব্রয়লার মুরগি কিনতে এসেছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রাব্বি। তিনি বলেন, আসলে এ সময় সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা শিক্ষার্থীদের। আমরা আগে মেসগুলোতে কম খরচে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির মাংস কিনে খেতাম। খাবার খরচও ছিল কম; কিন্তু এখন আর তা হচ্ছে না, গত রমজানের পর থেকে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। আমাদের খাবার খরচও বেড়েছে। বাসা থেকে প্রতি মাসে চলার জন্য ১০ হাজার টাকা এনেও চলছে না। লেখাপড়া-খাওয়া খরচের বাইরে তো আরও আনুষঙ্গিক খরচ আছে; সেগুলো এখন আর করতে পারছি না। টিউশন করেও খরচ সামাল দিতে পারছি না। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় পরিবারের ওপর চাপ বাড়ছে। আর পরিবারের আয় তো আর বাড়ছে না, ফলে অর্থ সংকট ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সংকট সামাল দিতে সকালের নাস্তা, বিকেলের নাস্তা বাদ দিয়ে দিচ্ছি; ডিপার্টমেন্টের ট্যুরসহ বাড়তি ঘোরাঘুরি কমিয়ে দিচ্ছি।