বঙ্গনিউজ ডেস্ক : পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কৃত্রিম বস্তুগুলোর মধ্যে প্রথম দিকেই রয়েছে পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন উপায় বের হলেও নানা কারণে সেগুলোর ততটা প্রসার ঘেটেনি। তবে এ নিয়ে দেশ-বিদেশে গবেষণা থেমে নেই। তৎপর রয়েছে আজকের নবীন হবু বিজ্ঞানীরাও।
এই নবীন উদ্ভাবকদেরই একজন মৌলভীবাজারের খুদে বিজ্ঞানী সাজ্জাদুল ইসলাম। পরিত্যক্ত পচা ও অব্যবহৃত সবজির শ্বেতসার থেকে পরিবেশবান্ধব পলিথিন উদ্ভাবন করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, কলাগাছের তন্তু থেকে তৈরি করেছেন টাইলস।
শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম।
তিনি জানিয়েছেন, কলাগাছের তন্তু থেকে তাঁর উৎপাদিত উপকরণ দিয়ে প্লাস্টিক, টিন ও কার্বনের তৈরি গাড়ির যন্ত্রাংশসহ নানা বিকল্প দ্রব্য তৈরি করা সম্ভব। তাঁর পদ্ধতিতে কলাগাছের কাণ্ড থেকে কঠিন যৌগ তৈরি করতে সর্বোচ্চ ৬৫ শতাংশ তন্তু দিতে হয়। তার সঙ্গে বিশেষ রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে টাইলস তৈরি করা হয়। অন্যদিকে পলিথিনের বিকল্প সামগ্রী তৈরিতে পরিত্যক্ত সবজির শ্বেতসার, অ্যাসিটিক এসিড ও গ্লিসারল ব্যবহৃত হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রায় দুই কোটি টন শাক ও সবজি উৎপাদিত হয়। এসব সবজির ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট হয়। সাজ্জাদুল মনে করেন, এই নষ্ট হওয়া সবজির বড় একটি অংশ দিয়ে পরিবেশবান্ধব পলিথিন তৈরি করা গেলে পরিবেশদূষণ যেমন কমবে, তেমনি বিপুল পরিমাণ পরিত্যক্ত সবজি কাজে লাগানো সম্ভব হবে।
সাজ্জাদুল কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁর আবিষ্কৃত প্লাস্টিক পণ্য উচ্চ তাপে গলিয়ে সহজেই তা থেকে রাসায়নিক দ্রব্য ও কলাগাছের তন্তু আলাদা করা যায়। আর সবজির শ্বেতসার থেকে তৈরি পলিথিন মাটিতে এক মাসে ও পানিতে তিন মাসে পচে যাবে।
ফলে তা হবে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। এখন শুধু প্রয়োজন উচ্চতর গবেষণার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা। তাহলেই তাঁর পক্ষে ভালো কিছু করা সম্ভব হবে।
কলাগাছের তন্তু ও বাতিল সবজি দিয়ে এ রকম সম্ভাবনাময় পরিবেশ অনুকূল বস্তু তৈরি করায় এলাকায় খুদে বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন সাজ্জাদুল।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক হৃদয় কুমার ভৌমিক বলেন, ‘কলাগাছের সেলুলোজসমৃদ্ধ তন্তুর সঙ্গে হাইড্রোক্সাইড ও রেজিন ব্যবহার করে টাইলস তৈরি করেছে সাজ্জাদুল। এ ছাড়া আলুর শ্বেতসার থেকে তৈরি করেছে পলিথিনজাতীয় সামগ্রী। এ দুটি উদ্ভাবন দেখে আমরা তাকে উৎসাহিত করি। কলেজের ল্যাবে তাকে এটি করে দেখাতে বলা হয়। কলেজের ল্যাবেও তা করে দেখায় সে। সাজ্জাদুল যেসব কাঁচামাল ব্যবহার করেছে তা পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আরো গবেষণার মাধ্যমে এটি ভালো কোনো আবিষ্কার হতে পারে। কলাগাছ আমাদের প্রকৃতিতে সহজলভ্য। তাই এর বহুল ব্যবহার করা গেলে কৃত্রিম গ্লাস ফাইবার ও কার্বন ফাইবারের প্রয়োগ কমবে।’