বঙ্গনিউজ ডেস্ক : ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এনায়েতপুর ইউনিয়ন। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৭-১৮ কিলোমিটার দূরের এক গ্রামীণ জনপদ। পাকা সড়ক ধরে ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে একের পর এক লেবুর বাগান। ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামে এখন কৃষকদের অন্যতম কাজ লেবুর আবাদ।
শুধু সবুজ বাগান চোখে পড়ে না, বাতাসে ভেসে আসে লেবুর টাটকা সুগন্ধও। এনায়েতপুরের পরিচিতি এখন লেবুর গ্রাম হিসেবেই। কৃষি বিভাগের ভাষ্য মতে, এই ইউনিয়নের কৃষকরা বছরে প্রায় ৬০ কোটি টাকার লেবু বিক্রি করে থাকেন।
বছর পনেরো আগে এনায়েতপুর ইউনিয়নের কৃষকরা আশপাশের এলাকাগুলোর মতো মূলত ধান, পাট, সরিষার মতো কিছু ফসল আর শাক-সবজিই চাষ করতেন।
ধীরে ধীরে তাঁরা লেবুর বাগানের দিকে ঝোঁকেন। এলাকাটির লাল মাটিতে লেবুর আশাতীত ফলন দেখে ধীরে ধীরে লেবু চাষির সংখ্যা বাড়তে থাকে। এখন লেবুই এই এলাকার প্রধান অর্থকরী ফসল।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এনায়েতপুর, ভবানীপুর, কালাদহ ও রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের ৮১৫ হেক্টর জমিতে লেবুর আবাদ হয়েছে।
এর মধ্যে বেশির ভাগ (৭৩০ হেক্টর) লেবুর আবাদই হয়েছে এনায়েতপুর ইউনিয়নে। সিডলেস ও কলম্বো—এ দুই জাতের লেবুর বাগান বেশি। মাঝেমধ্যে কাগজি লেবুর বাগানও রয়েছে।
স্থানীয় একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় এক যুগ আগে এনায়েতপুর গ্রামের আট-দশ জন কৃষক তাঁদের পতিত জমির ঝোপজঙ্গল পরিষ্কার করে বাণিজ্যিকভাবে লেবুবাগান করেন। এতে বেশ ভালো আর্থিক লাভ হয় তাঁদের।
ওই কৃষকদের দেখাদেখি এনায়েতপুর ছাড়াও আশপাশের গোপীনাথপুর, সোয়াইতপুর, বেতবাড়ী, কাহালগাঁও ও দুলমা গ্রামের বহু কৃষক মসলা ও সবজি জাতীয় ফসলের আবাদ ছেড়ে লেবুবাগান করা শুরু করেন। এখনো প্রতিবছরই এলাকার গ্রামগুলোতে লেবুবাগান বাড়ছে।
এনায়েতপুর গ্রামে লেবুবাগান পরিচর্যা করার সময় কথা হয় আব্দুল মতিন ও শহিদুল ইসলাম নামের দুজন কৃষকের সঙ্গে। তাঁরা সহোদর ভাই। চার একর জমিতে এক হাজার ২০০ লেবু গাছের বাগান করেছেন। বাগানে প্রচুর লেবু ধরেছে। ফলের ভারের কারণে প্রতিটি ডালে বাঁশের খুঁটি দেওয়া। প্রতি সপ্তাহে এই বাগান থেকে ১৫ থেকে ১৬ বস্তা (প্রতি বস্তায় এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ লেবু) উত্তোলন করেন দুই ভাই। বাগানটির বয়স প্রায় চার বছর। কলমের চারা লাগানোর এক বছরের মধ্যে তাঁদের বাগানে লেবু আসতে শুরু হয়। প্রথম দুই বছরে সব কিছু মিলে বাগানে খরচ হয় ছয় লাখ টাকা, লেবু বিক্রি করে সেই খরচ উঠে যায়। পরের বছর খরচ বাদে লাভ হয় প্রায় চার লাখ টাকা। এ বছরও দাম শুরুতে ভালোই পেয়েছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ছয় লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেছেন। আশা করছেন, আরো আট লাখ থেকে ৯ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করতে পারবেন।
কথা হয় এনায়েতপুর গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন শহিদের সঙ্গে। তিনি পাঁচ একর জমিতে সিডলেস ও এক একর জমিতে কলম্বো জাতের লেবুর বাগান করেছেন। গত বছর তিনি ১০ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করছেন। গত তিন বছরের তুলনায় এ বছর লেবুর বাজারদর ভালো। চাষিরা প্রতি বস্তা লেবু দুই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি করছেন পাইকারি বাজারে। এ বছর প্রায় ১৮ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করার আশা করছেন জাকির হোসেন।
লেবু চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকদের অনেক লেবু পচে নষ্ট হয়ে যায়। তিন বছর আগেও এনায়েতপুরের লেবু ইউরোপে রপ্তানি হয়েছে। গ্রামের কৃষকের এখন দাবি, তাঁদের উৎপাদিত লেবু সংরক্ষণ করার জন্য সরকারিভাবে একটি হিমাগার স্থাপন করা হোক।
ফুলবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নূর মোহাম্মদ এ বিষয়ে বললেন, সারা দেশেই এনায়েতপুরের লেবু পরিচিতি পেয়েছে। এলাকার প্রায় সব কৃষক বাণিজ্যিকভাবে কমবেশি লেবুর বাগান করেছেন।