বঙ্গনিউজঃ খুলনা নগরীতে মধুমতী নদীর পানি পরিশোধন করে পাইপলাইনে সরবরাহ করে ওয়াসা। তবে অনেক এলাকায় ওয়াসার গ্রাহক নয়– এমন বহু মানুষ আছে। বিশুদ্ধ পানির জন্য তাদের ভরসা নলকূপ। সাম্প্রতিক সময়ে ভূগর্ভের পানির স্তর এতটাই নিচে নেমে গেছে যে এসব নলকূপ অকেজো হয়ে পড়তে শুরু করেছে। চলতি খরায় তাই পানির অভাবে ব্যাপক সমস্যায় পড়েছে নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
জানা গেছে, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় খুলনা ওয়াসার মালিকানাধীন প্রায় আট হাজার নলকূপের অধিকাংশেই চলতি মাসে আর পানি উঠছে না। পাশাপাশি গত কয়েক বছরে খুলনায় ওয়াসার প্রায় ১ হাজার ৯০০ নলকূপ স্থায়ীভাবে বিকল হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তিমালিকানাধীন আরও অনেক অগভীর নলকূপেও পানি মিলছে না। ফলে চলতি খরায় নগরীজুড়ে এখন বিশুদ্ধ পানির জন্য চলছে হাহাকার। বাধ্য হয়ে লোকজন যেসব বাড়িতে সাবমার্সিবল পাম্প আছে, সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করছে। সামর্থ্যবানরা বসাচ্ছেন গভীর নলকূপ ও সাবমার্সিবল পাম্প।
খুলনা ওয়াসা সূত্র বলছে, তারা ২০০৮ সালে নগরীতে পানি সরবরাহের দায়িত্ব গ্রহণ করে। এর আগে সড়কের পাশে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বসানো ৯ হাজার ৯০০ নলকূপ তাদের কাছে হস্তান্তর করে খুলনা সিটি করপোরেশন। খুলনা ওয়াসার এমডি মো. আবদুল্লাহ জানান, কয়েক বছর ধরে ঠিকমতো পানি না ওঠাসহ বিভিন্ন কারণে প্রায় ১ হাজার ৯০০টি নলকূপ স্থায়ীভাবে বিকল হয়ে পড়েছে। বাকি আট হাজারের মধ্যে গভীর কিছু নলকূপে পানি উঠলেও বাকিগুলোতে পানি উঠছে না। ফলে নগরীর পানি সংকট মেটাতে ওয়াসা মধুমতী নদীর পানি পরিশোধন করে পাইপলাইনে সরবরাহ করছে।
মো. আবদুল্লাহ বলেন, মূলত ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় প্রতিবছর গ্রীষ্ম মৌসুমে শতাধিক নলকূপ স্থায়ীভাবে বিকল হয়ে পড়ছে। কোনো নলকূপের যন্ত্রাংশে সমস্যা হলে আমরা সংস্কার করে দিই। কিন্তু বিকল হওয়া নলকূপের স্থানে বা আশপাশে আর নতুন করে নলকূপ বসানো হচ্ছে না। আমরা ভূগর্ভের পানি তোলার ব্যাপারে মানুষকে নিরুৎসাহিত করছি। নগরীর সংকট পূরণে পরিশোধন করে মধুমতী নদীর পানির সরবরাহ বাড়ানো হবে।
এদিকে যশোরেও একই অবস্থা। একদিকে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে পানির জন্য হাহাকার। তীব্র তাপপ্রবাহ এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এমন ভোগান্তি বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য, যশোরের আট উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার গভীর ও অগভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে অনেক টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। যশোরের জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ পারভেজ বলেন, প্রতিবছর যশোর অঞ্চলে বর্ষাকালে পানির স্তর ২৭-২৮ ফুট থাকে। তবে মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৩২ থেকে ৩৬ ফুট পর্যন্ত নেমে যায়। গত বছর যশোরে ৩৭ ফুট নেমেছে পানির স্তর।
এ বছর যশোর সদর উপজেলায় পানির স্তরে নেমেছে ৩৪ ফুট। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের অধীনে যশোর অঞ্চলে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার সাবমার্সিবল পাম্পযুক্ত নলকূপ রয়েছে। এর মাধ্যমে জনগণকে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, আমরা খাবার পানি ও সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য সাধারণত ভূগর্ভের পানি ব্যবহার করি। ফলে ভূগর্ভের পানি দিনদিন কমে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানি ভূগর্ভের পানির স্তরকে রিচার্জ করে। সম্প্রতি নদী, খাল, পুকুর ও জলাশয় ভরাটের কারণে পানির স্তর ঠিকভাবে রিচার্জ হচ্ছে না। এখন ভূ-উপরিভাগের পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সে জন্য ভরাট হওয়া দিঘিগুলো পুনর্খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, যশোরে সমস্যা হলো ভূ-উপরিভাগের জলাধার খুব কম। এখানে একমাত্র ভৈরব নদ আছে; তার পানি প্রবাহও কমে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি পুকুরগুলো যাতে নতুন করে ভরাট না হয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে।