সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ কমতে পারবে শেয়ারদর এক দিনে

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ কমতে পারবে শেয়ারদর এক দিনে
বৃহস্পতিবার ● ২৫ এপ্রিল ২০২৪


 ফাইল ছবি

বঙ্গনিউজঃ    দরপতন ঠেকাতে পুরোনো পদ্ধতিতে শেয়ারবাজারে হস্তক্ষেপ করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আজ বৃহস্পতিবার থেকে তালিকাভুক্ত ছয় কোম্পানি বাদে বাকিগুলোর শেয়ারদর নির্দিষ্ট দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না, তবে আগের মতো নির্দিষ্ট দিনে কোনো শেয়ারের দর ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারবে।

গতকাল বুধবার বিকেলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের স্বাক্ষরে জারি করা নতুন এক আদেশে শেয়ারদরে সার্কিট ব্রেকারের ক্ষেত্রে নতুন এ নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বিএসইসির ১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশের ২০এ ধারার ক্ষমতাবলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন সীমা হবে আগের দিনের ক্লোজিং প্রাইসের তুলনায় সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ।

তালিকাভুক্ত ছয় কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেড, বিএসআরএম লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক, খুলনা পাওয়ার, মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং শাহজীবাজার পাওয়ারের ক্ষেত্রে এ নীতি কার্যকর হবে না। এ শেয়ারগুলোর ক্ষেত্রে আগের মতো ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দরসীমা বহাল থাকছে এবং সার্কিট ব্রেকারের ঊর্ধ্বসীমা বহাল রয়েছে, অর্থাৎ অন্য শেয়ারের মতো এগুলোর দর ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে এবং বাড়তে পারবে।

শেয়ারবাজার স্বাভাবিক ধারায় ফেরাতে গত ১৮ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পৃথক তিনটি আদেশে তালিকাভুক্ত প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারদরে ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দর সীমা প্রত্যাহার করেছিল বিএসইসি। এর পর প্রথম সপ্তাহ শেয়ারদর বাড়লেও গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্রমাগত দর হারাচ্ছে সিংহভাগ শেয়ার। ওই দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত ৪৫ কার্যদিবসে ১২ দিন সূচক বৃদ্ধির বিপরীতে ৩৩ দিনই পতন হয়েছে। ১২ দিনে যেখানে ডিএসইএক্স সূচকে ৪০৭ পয়েন্ট যোগ হয়। বিপরীতে ১২৭৫ পয়েন্ট কমেছে। গত আড়াই মাসে সূচকের পতন হয়েছে ৮৬৮ পয়েন্ট বা সাড়ে ১৩ শতাংশ।

গতকাল পর্যন্ত তালিকাভুক্ত ৩৯৬ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৫৯টি কম-বেশি দর হারিয়েছে। এর মধ্যে ২০ থেকে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে ১৬৬ কোম্পানির শেয়ার।

জানা গেছে, গতকালের সার্কিট ব্রেকার সংক্রান্ত সিদ্ধান্তটি কমিশনের নয়, বিএসইসির চেয়ারম্যানের। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি এমন নয়। তবে তিনি নিশ্চিত করেন, গতকাল বিএসইসিতে কোনো কমিশন সভা হয়নি।

বিএসইসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা  বলেন, ইতোপূর্বে শেয়ারদরে ফ্লোর প্রাইস আরোপ এবং প্রত্যাহারসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত কমিশন সভায় হয়নি। গতকালের আদেশটিও তেমন। যদিও এসইসির ১৯৬৯ সালের ২০এ ধারায় ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার শুধু কমিশন সভার অর্থাৎ আগাম নোটিশ দিয়ে ডাকা বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের সভার।

দর পতন রুখতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পুনরায় শেয়ারবাজারে সরাসরি হস্তক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ। তিনি সমকালকে বলেন, ‘‘এটা অদ্ভুত সিদ্ধান্ত। সূচক বা শেয়ারদর ‘ম্যানেজমেন্ট’ করা কোনো অবস্থাতেই বিএসইসির কাজ হতে পারে না। পৃথিবীর কোনো দেশে এভাবে শেয়ারবাজারে হস্তক্ষেপ করা হয় না।’’

শেয়ারদর তিন শতাংশের বেশি পড়তে পারবে না– এমন সিদ্ধান্ত দেওয়ার ফলে কী দরপতন বন্ধ হয়ে যাবে– এমন প্রশ্ন তুলে আবু আহমেদ বলেন, অতীতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কাজ হয়নি। ২০২২ সালে ১৬৮ শেয়ারের দরে নিচের সার্কিট ব্রেকার ২ শতাংশে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এতে এসব শেয়ারের লেনদেন শূন্যের কোঠায় নেমেছিল। পরে ওইসব শেয়ারদরে ফের ফ্লোর প্রাইস বহাল করেছিল। কমিশন কী আবারও সে পথে হাঁটবে প্রশ্ন করে তিনি বলেন, বাজারের মূল সমস্যার সমাধান না করে এভাবে দর পতন ঠেকানো যাবে না ।

শেয়ারবাজারের অন্যতম প্রধান ব্রোকারেজ হাউস ইবিএল সিকিউরিটিজের এমডি ছায়েদুর রহমান বলেন, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর সূচক ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমবে বলে প্রত্যাশিত ছিল। গত আড়াই মাসের দর পতনে সূচক প্রায় ওই পরিমাণ কমেছে। এখন বাজার নিজে থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা। এ অবস্থায় কমিশনের নতুন সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীরা কীভাবে নেন, তা দেখার বিষয়। তবে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কমিশনের এ সিদ্ধান্তে শেয়ার লেনদেন কমে যেতে পারে এবং শেয়ারবাজারের সমস্যা দীর্ঘায়িত হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ৮:২৮:০৬ ● ১৬৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ