বঙ্গনিউজঃ ঈদের পর কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম ফের ছুটেছে। ভোজ্যতেল, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ কিছু পণ্যের দাম আবার বেড়েছে। এর মধ্যে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে সরকারি সিদ্ধান্তে। তবে অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া মুরগির দর কমেছে কিছুটা।
খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, পণ্যের সরবরাহে টান নেই। তবে পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার কারণে খুচরায় এর প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া অনেক ব্যবসায়ী এখনও গ্রাম থেকে ফেরেননি। দাম বাড়ার ক্ষেত্রে এটিও একটি কারণ।
রোজার দেড় থেকে দুই মাস আগে থেকেই বাজারে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দর বেড়েছিল। তবে রোজার মাঝামাঝি সময়ে বেশ কয়েকটির দর কমে। ঈদ শেষ হওয়ার পর থেকেই আবারও দামের ঘূর্ণি বইতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এসেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু সয়াবিন তেলের নতুন দাম ঘোষণা করেন। তাতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৪ টাকা বাড়ানো হলেও খোলা সয়াবিন লিটারে কমানো হয়েছে ২ টাকা। পাঁচ লিটার বোতলে দর বেড়েছে ১৮ টাকা। ফলে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের নতুন দাম হবে ১৬৭ টাকা, পাঁচ লিটারের দর হবে ৮১৮ এবং খোলা সয়াবিনের লিটার হবে ১৪৭ টাকা। অন্যদিকে সুপার পামঅয়েলের লিটার নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৫ টাকা। তবে সুপার পামঅয়েল বাজারে এর চেয়ে বেশি অর্থাৎ লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দরে। গত ১৫ এপ্রিল ভ্যাট অব্যাহতির সময় শেষ হওয়ার পর ১৬ এপ্রিল থেকে আবারও ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে আগের দামে বিক্রির উদ্যোগ নেন মালিকরা। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জরুরি ব্যবস্থা নিয়ে মালিকদের সেই তৎপরতা রুখে দেয়। কয়েক দফা বৈঠক শেষে এ দাম নির্ধারিত হয়।
ভোজ্যতেল ছাড়াও বাজারে কয়েকটি পণ্যের দর নতুন করে বেড়েছে। গতকাল ঢাকার কারওয়ান বাজার, মালিবাগ ও তেজকুনিপাড়া বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা দরে। কোথাও কোথাও কেজি ৬০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। ঈদের চার-পাঁচ দিন আগে আলুর কেজি ছিল ৪৫ টাকার আশপাশে। সেই হিসাবে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকার বেশি।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, ঈদের আগে থেকেই আলুর দাম বাড়তে শুরু করেছে। আলুর মৌসুম এখন শেষ। আমদানি না হলে আলুর দর কমার সম্ভাবনা নেই।
ঈদের আগে ভারত থেকে সরকারি উদ্যোগে প্রায় দেড় হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়, যা সরকারি সংস্থা টিসিবির মাধ্যমে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। বাজারে এর কিছুটা প্রভাব পড়েছিল। তখন দেশি পেঁয়াজের কেজি নেমেছিল ৫০ টাকার ঘরে। কেজি কেনা গেছে ৫০ থেকে ৫২ টাকার মধ্যে। তবে ঈদের পর চড়তে থাকে দাম। কয়েক দফা বেড়ে এখন কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। সেই হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৩ টাকা।
পেঁয়াজের মতো দর বেড়েছে আদা-রসুনেরও। বাজারে এখন আমদানি করা প্রতি কেজি চায়না রসুন ২২০ থেকে ২৩০ এবং দেশি রসুন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে চায়না রসুন ১৯০ থেকে ২১০ টাকা এবং দেশি রসুন ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ গত আট-দশ দিনের ব্যবধানে আমদানি করা রসুন কেজিতে ২০ থেকে ৩০ এবং দেশি রসুন ৩০ টাকা বেড়েছে। এদিকে চায়না আদা কেজিতে ২০ টাকার মতো বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা দরে।
তেজকুনিপাড়ার মায়ের দোয়া স্টোরের স্বত্বাধিকারী হেলাল উদ্দিন বলেন, তিন-চার দিন ধরে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ-রসুনসহ বেশ কয়েকটি জিনিসের দর বেড়েছে। সে জন্য খুচরায়ও কিছুটা বাড়তি।
আটার বাজারেও দেখা গেছে ঊর্ধ্বগতি। টিসিবির প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, প্রতি কেজি খোলা আটা ৪৫ থেকে ৫০ এবং প্যাকেটজাত আটা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে খোলা আটার কেজি ৪২ থেকে ৪৫ এবং প্যাকেট আটার কেজি ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় কেনা গেছে। সেই হিসাবে আটা কেজিতে বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা। আগে থেকে চড়ে থাকা চালের দর এখনও নামেনি। টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক মাসে সব ধরনের সিদ্ধ চাল কেজিতে ২ থেকে প্রায় ৫ টাকা বেড়েছে।
রোজার মধ্যে ডিমের দাম বেশ কমেছিল। প্রতি ডজন নেমেছিল ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। এখন বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। আর ফার্মের সাদা ডিমের ডজন কিনতে হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। তবে ঈদের আগে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া মুরগির দর কিছুটা কমেছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২২০ থেকে ২৩০ এবং সোনালি জাতের মুরগি ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে ব্রয়লারের কেজি ২৫০ থেকে ২৫৫ এবং সোনালি জাতের মুরগির কেজি ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।