বঙ্গনিউজঃ ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলার পর ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে যখন ইরান ড্রোন ও ক্ষেপনাস্ত্র হামলা করে, তখন বেশিরভাগ আরব দেশ ইরানের পক্ষ নিলেও জর্ডান ইসরায়েলের পক্ষ নেয়। জর্ডানের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় ধ্বংস করে দেওয়া হয় ইরানের ক্ষেপনাস্ত্রগুলো। এতে খোদ জর্ডানেই শুরু হয়েছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে গিয়ে কেন জর্ডানের এই ইসরায়েলপন্থী পদক্ষেপ?
বিগত বছরগুলোতে ধীরে ধীরে ফিলিস্তিন ও আরব বিশ্বের মতবাদ থেকে সরে এসেছে ফিলিস্তিন। গত বছরের ৫ নভেম্বরেই জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ গাজায় জর্ডানের হাসপাতালে চিকিৎসা সহায়তা পাঠাতে সফল হয়েছেন বলে বক্তব্য দেন। কিন্তু এদিকে ইসরায়েলের দিকে ছোঁড়া ইরানের ক্ষেপনাস্ত্র আটকাতে সক্রিয় হয়ে ওঠে জর্ডানের বিমানবাহিনী।
জর্ডান সরকার এক বিবৃতিতে বলে, আত্মরক্ষার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো (ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র) আমাদের জনগণ ও জনবহুল এলাকার জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল।
এরপর নিজেদেরকে নিরপেক্ষ প্রমাণ করতে জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, ইরানি হোক আর ইসরায়েলি, জর্ডানের আকাশসীমায় প্রবেশ করা যে কোনো ক্ষেপনাস্ত্র বা ড্রোন প্রতিহত করা হবে।
এই বিবৃতির নিন্দা জানিয়েছে জর্ডানের সরকারবিরোধীরা। তারা দাবি করে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান এর আগেও জর্ডানের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে- বিশেষ করে সিরিয়ায় অভিযান চালানোর সময়ে। তখন জর্ডান কোনো বাধা দেয়নি।
ইরান থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপনাস্ত্র ছোঁড়ার সময়েও নিজেদের আকাশসীমায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান প্রবেশে বাধা দেয়নি জর্ডান।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান জর্ডান এবং সিরিয়ার আকাশসীমানায় প্রবেশ করে এবং সেখানে ইরান থেকে ছোঁড়া ক্ষেপনাস্ত্র এবং ড্রোন ধ্বংস করে। এমনকি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি তাদের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানও এক্ষেত্রে জর্ডানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে থাকতে পারে।
আরব বিশ্বের সাথে বেঈমানি করে ইসরায়েলের সাথে হাত মেলানো জর্ডানের জন্য নতুন কিছু নয়।
১৯৪৮ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত ইসরায়েলের সাথে জর্ডানের চারটি যুদ্ধ হয়। ১৯৯৪ সালে এক শান্তি চুক্তি হওয়ার পর থেকে এই দুই দেশের মধ্যে আর কোনো সংঘর্ষ হয়নি। এমনকি তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা চুক্তিও হয়েছে।
জর্ডানের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ ফিলিস্তিনি এবং তাদের বংশধর। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর এসব ফিলিস্তিনি ভূমিহীন হয়ে পড়ে এবং জর্ডানে আশ্রয় নেয়। ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক ভালো হয়ে আসার সুবাদে ১৯৭০ সালে একবার ফিলিস্তিনিদের উৎখাতের চেষ্টাও করে জর্ডান। সে সময়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে প্রায় ১৫ হাজার ফিলিস্তিনিদের হত্যার কারণ হয়ে দাঁড়ান তৎকালীন জর্ডান রাজা হুসেইন বিন তালাল।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে জর্ডানে, যেখান থেকে তারা নিয়মিতই ইসরায়েলকে সহায়তা করে থাকে এবং সিরিয়া, ইরাক, লেবানন ও ইরানে আড়ি পাতার কাজ করে থাকে।
জর্ডানের এমন বেঈমানিতে চুপ করে নেই ইরান। ইরানের সামরিক বাহিনীর এক সুত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদ সংস্থা মেহর জানায়, জর্ডানের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করবে ইরান। যদি তারা ইসরায়েলের সাথে হাত মেলায়, তবে জর্ডান হয়ে উঠবে ইরানের পরবর্তী লক্ষ্য।
জর্ডানের সরকারের ওপর এর নাগরিকরাও বিরক্ত। কয়েক সপ্তাহ ধরে আম্মানে ইসরায়েলের দূতাবাসের সামনে জড়ো হয়ে কয়েক হাজার স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। তারা ১৯৯৪ সালে ইসরায়েল ও জর্ডানের মধ্যে সই হওয়া শান্তি চুক্তি বাতিলেরও আহ্বান জানান।
এমন অবস্থায় আরব বিশ্ব জর্ডানকে একঘরে করে ফেলবে, এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তবে জর্ডান যদি ইসরায়েল-ইরানের এই সংঘর্ষে আগ বাড়িয়ে আর কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তাদের ঘরে বাইরে দুই জায়গাতেই শান্তি বজায় থাকবে।