রক্ষক যখন ভক্ষক

Home Page » জাতীয় » রক্ষক যখন ভক্ষক
সোমবার ● ১ এপ্রিল ২০২৪


 ফাইল ছবি

 বঙ্গনিউজঃ    দীর্ঘ পাঁচ যুগ আগে মহৎ উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান (বাইগাম)। প্রবীণদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও নিবাস নিশ্চিত করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ৬৩ বছর পর দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশাসক নিয়োগ করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এখন সেই প্রশাসকের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন প্রতিষ্ঠানের জীবন সদস্যরা। তারা বলছেন, প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার পর দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার বদলে নিজেই জড়িয়ে পড়েছেন সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে। তাঁর বিরুদ্ধে ডজনের বেশি অনিয়মের অভিযোগ তুলে একটি পত্র দেওয়া হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।

চিকিৎসাবিদ অধ্যাপক এ কে এম আবদুল ওয়াহেদ ১৯৬০ সালে ধানমন্ডিতে তাঁর বাসভবনে বাইগাম প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে আগারগাঁওয়ের প্রবীণ ভবনে ৫০ শয্যার প্রবীণ হাসপাতাল ও ৫০ শয্যার প্রবীণ নিবাস রয়েছে। এ ছাড়া সারাদেশের পাঁচটি বিভাগীয় শহরে প্রবীণ চিকিৎসা ক্লিনিকসহ ৯২টি শাখা রয়েছে।

অভিযোগকারীরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটির তিনটি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন প্রশাসক ড. মোকতার হোসেন। নিজের পছন্দের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি দিয়ে একটি বলয় তৈরি করেছেন। উপসচিব থাকা অবস্থায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে তাঁকে প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে তিনি পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব হন। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কার্যনির্বাহী কমিটির কাছে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হস্তান্তর করার শর্তে তাঁকে নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু এক বছরের বেশি সময়ে তিনি নির্বাচন আয়োজন করতে পারেননি। এ ছাড়া তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা ঠিকমতো পরিশোধ করা হয়নি।

প্রশাসকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, প্রশাসনিক অনিয়ম, অদক্ষতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয় উল্লেখ করে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন সংগঠনের জীবন সদস্যরা। তারা সেখানে বলেছেন, গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনের চার দিন আগে গঠনতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে নির্বাচন বন্ধ করে দেয় সরকারবিরোধী চক্র। এদিকে ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে পরিচালনার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে মোকতার হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির সাংগঠনিক কাঠামো, চাকরিবিধির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন।

বাইগামের এক জীবন সদস্য বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে সদস্যদের চাঁদা ও সরকারি অনুদানে পরিচালিত হয়ে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি। প্রতি বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বার্ষিক ৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২২-২০২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বরাদ্দ ছাড়াতে পারেননি। এতে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়া সারাদেশের ৯২টি শাখার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

ওই সদস্য বলেন, প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী কমিটি ছাড়া কেউ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত টাকা ছাড়াতে পারেন না। বর্তমান প্রশাসক নিজে সুযোগ-সুবিধা নিলেও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কিছু করেননি। তিনি পদোন্নতি কমিটি ছাড়াই তাঁর একক সিদ্ধান্তে চার কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে পদোন্নতিও দিয়েছেন। তারা হলেন– ফিজিওথেরাপি পরিদর্শক মহসিন কবির মিলন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রীর বোন তত্ত্বাবধায়কের সহকারী আঞ্জুমান জাহিদ, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক আমান উল্লাহ ও খণ্ডকালীন শিক্ষক কারিমা আক্তার। পদোন্নতি পাওয়া মহসিন কবিরকে বাইগামের উপপরিচালক (প্রশাসন) হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া প্রতিষ্ঠানটির চাকরি প্রবিধানমালা পরিপন্থি। এ ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রতিষ্ঠানের ২৪ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানের ৪০ জন জীবন সদস্য এক চিঠিতে মন্ত্রীকে জানিয়েছেন, বাইগামের স্বার্থে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্বভার হস্তান্তর করতে শিগগির নির্বাচনের ব্যবস্থা করা দরকার। এ ছাড়া বর্তমান প্রশাসককে সরিয়ে তাঁর স্থানে একজন সৎ ও নিরপেক্ষ প্রশাসক নিয়োগ করে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

তারা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী, জনপ্রশাসন মন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছেন।

সংগঠনের ২০২০-২২ কার্যনির্বাহী কমিটির কয়েক সদস্যের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন স্থগিত করে। ওই কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ বাসেদ আলী, যুগ্ম মহাসচিব সুলতান হোসেন ও নির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী একেএম আলী আজমের সদস্য পদ খারিজ করে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে যুগ্ম সচিব মোকতার হোসেন  বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় চলে প্রতিষ্ঠানটি। তবে গত অর্থবছরে সেই টাকা আসেনি। এখন নির্বাচন করতে হলে বেশ টাকার দরকার। ওই টাকা পেলে নির্বাচন দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে বাইগামের সদস্য তালিকা হালনাগাদ করতে কমিটি গঠন হয়েছে। ঈদের পরই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বরাদ্দের অর্থ দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিত আগের কমিটি। এ বিষয়ে প্রশাসক বলেন, ওই অর্থ আসে মূলত প্রবীণদের কল্যাণে ব্যয়ের জন্য। তা দিয়ে বেতন দেওয়াসহ গত কমিটির বিরুদ্ধে ৪-৫ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ৪৮ লাখ টাকা দিয়ে বার্ষিক বনভোজন ও ৩০ লাখ টাকা দিয়ে প্রবীণ দিবস পালনের অভিযোগে বরাদ্দ আসা বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ এ অর্থবছরের টাকা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রউফকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁর প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই অর্থ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩:০৫:৩৯ ● ৩৭১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ