বঙ্গনিউজঃ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রবেশ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগে শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় তারা টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জনসহ সব একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন।
পাঁচ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজও তারা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেবেন।
এদিকে পুরো ঘটনা তদন্ত করতে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বুয়েট প্রশাসন। ৮ এপ্রিলের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার দুপুর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।
শনিবার সকাল ৭টা থেকে বুয়েট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান নেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে তারা শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বির স্থায়ী একাডেমিক বহিষ্কার এবং আরও পাঁচ শিক্ষার্থীর স্থায়ী একাডেমিক ও হল বহিষ্কারসহ পাঁচ দফা হালনাগাদ দাবি উপস্থাপন করেন।
দাবিগুলো হলো-শনিবার দুপুর ২টার মধ্যে লিখিতভাবে ইমতিয়াজ রাব্বির স্থায়ী একাডেমিক বহিষ্কার নিশ্চিত করা; বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধানের নিয়ম ভঙ্গের দায়ে এবং বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক অপশক্তি অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করায় এএসএম আনাস ফেরদৌস, মোহাম্মদ হাসিন আরমান নিহাল, অনিরুদ্ধ মজুমদার, জাহিরুল ইসলাম ইমন ও সায়েম মাহমুদ সাজেদিন রিফাতকে স্থায়ী একাডেমিক এবং হল বহিষ্কার।
আরও যারা জড়িত তাদের সবাইকে অনতিবিলম্বে শনাক্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা। বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের ক্যাম্পাসে প্রবেশের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার বিষয়ে প্রশাসনের নোটিশ ও বাস্তবায়ন।
দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) পদত্যাগ; আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো রকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি।
সংবাদ সম্মেলন শেষে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ড. এমএ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে তারা শনিবারের মতো কর্মসূচি স্থগিত করেন।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরতদের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবিসহ উপস্থিত সকলের গণস্বাক্ষর নিয়ে উপাচার্যের কাছে আবেদনপত্র জমা দিয়ে এসেছি। এখনো পর্যন্ত আমাদের দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা দাবি বাস্তবায়ন চাই। এটি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
যা বললেন উপাচার্য : এদিকে দুপুর ১টায় বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্যপ্রসাদ মজুমদার বলেন, পুরো ঘটনা তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ৬ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বর্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা পরীক্ষা স্থগিত করিনি, শিক্ষার্থীরা বর্জন করেছে। তারা পরীক্ষা স্থগিতের আবেদনও করেনি। আবেদন করলে আমরা বিবেচনা করতাম। তারা এখানে ভুল করেছে। পরীক্ষা হয়েছে, কিন্তু তারা পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। পরে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার জন্য আবেদন করলে, একাডেমিক কাউন্সিল তা বিবেচনা করতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের পদত্যাগের দাবি প্রসঙ্গে বুয়েট উপাচার্য বলেন, ডিএসডব্লিউর পদত্যাগের বিষয়ে এখন আমরা চিন্তা করছি না। কারণ, এটা নরমাল একটা প্রসিডিউর। নিয়ম অনুযায়ী যখন হওয়ার হবে। ডিএসডব্লিউ বলেছেন, তার পক্ষ থেকে কোনো গাফিলতি ছিল না। শিক্ষার্থীরা দাবি করতেই পারে, কিন্তু দাবির মুখে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না।
মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতার প্রবেশের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে বলে জানান সত্যপ্রসাদ মজুমদার।
পাঁচ শিক্ষার্থীর অভিযোগ তারা হেনস্তার শিকার : এদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির সঙ্গে থাকায় হেনস্তার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে একদল বুয়েট শিক্ষার্থী।
শনিবার বেলা ৩টায় বুয়েট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন তারা। এতে পাঁচ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আশিক আলম (২০ ব্যাচ), অর্ঘ দাস (২১ ব্যাচ), সাগর বিশ্বাস (২০ ব্যাচ), অরিত্র ঘোষ (২০ ব্যাচ) ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ব্যাচের তানভীর স্বপ্নীল। তারা জানান, তাদের আরও ২০-২৫ শিক্ষার্থী সমর্থন জানিয়েছেন যারা চিহ্নিত হওয়ার ভয়ে উপস্থিত হননি।
লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, বুয়েটের অভ্যন্তরীণ ফেসবুক গ্রুপগুলোতে আমাদের পক্ষে কেউ নিজের কোনো মতামত রাখতে গেলে তাকেও বুলিং এবং নানা ধরনের হুমকির শিকার হতে হয়। আমাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক কিংবা পরিচয় ছিল বিধায় অনেককেই কটাক্ষের শিকার হতে হয়। পারিবারিকভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে (বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তি বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে) পরিচিতি থাকলে তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়। এমনকি পরিবারকে নিয়েও অশালীন মন্তব্য করা হয় অনলাইন ও অফলাইনে।
তারা বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করিনি এবং কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নই। তবে আদর্শের দিক থেকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির সঙ্গে আছি। আমাদেরকে র্যাগার, খুনি, মাদকাসক্তসহ আরও অনেক ন্যক্কারজনক অপবাদ দেওয়া হয়।