বঙ্গনিউজঃ শুরুতে সর্বজনীন পেনশনে যেভাবে মানুষের সাড়া পাওয়া গিয়েছিল, পরবর্তী সময়ে তা কিছুটা কমে গেছে। তাই এ স্কিমে কাঙ্ক্ষিত গতি আনতে দেশব্যাপী প্রচার বাড়ানোর পাশাপাশি গ্রামগঞ্জে সর্বজনীন পেনশন নিবন্ধন কার্যক্রম সহজ করাসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি দপ্তরকে এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগও রয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রত্যেক বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সম্প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যলায়।
গত বছরের ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেন। দেশের অন্তত ১০ কোটি মানুষ এ পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আসবে– এমন প্রত্যাশা সরকারের রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, স্কিম চালুর পর প্রথম মাসে ১২ হাজার ৮৮৯ জন গ্রাহক চাঁদা পরিশোধ করেছিলেন। কিন্তু এর পরের মাসগুলোতে এ সংখ্যা দেড় থেকে দুই হাজারের মধ্যে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের নিবন্ধনের জন্য উপযুক্ত করতে হবে। সেন্টার থেকেই যেন জনগণ বিভিন্ন স্কিমে নিবন্ধন করতে পারেন তার সব ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রয়োজনে স্কিম সম্পর্কিত আলাদা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। একই সঙ্গে ডাক বিভাগের ডিজিটাল পোস্ট অফিসের আউটলেটের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন নিবন্ধন কার্যক্রমের উদ্যোগ নিতে হবে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাংকগুলোর শাখাগুলো থেকে ফ্রন্ট অফিস হিসেবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের নিবন্ধন ও অর্থ জমা গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অর্থ জমা প্রদান প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। নিবন্ধন কার্যক্রম জোরদার করতে সময়ে সময়ে বিশেষ ক্যাম্পেইন ও ভ্রাম্যমাণ বুথের মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। নিবন্ধনসংক্রান্ত যে কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে তা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে হবে।
উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, সর্বজনীন পেনশন স্কিম সম্পর্কে জনগণকে সম্যকভাবে অবহিত ও আগ্রহী করতে বিভিন্ন পর্যায়ে সভা-সমাবেশ, র্যালি, উদ্বুদ্ধকরণ মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি আয়োজন করতে হবে। এরূপ কার্যক্রমে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যম কর্মী ইত্যাদি কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে জেলা ও উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়ন অগ্রগতি’ শীর্ষক এজেন্ডা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
অধিক জনসমাগম হয় এমন স্থান যেমন: হাটবাজার, গ্রোথ সেন্টার, গ্রামীণ মেলা ইত্যাদি জায়গায় জেলা ও উপজেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিজ্ঞাপন, জিঙ্গেল, ভিডিও নিয়মিত প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। সম্ভাব্য টার্গেট জনগোষ্ঠীর মাঝে সর্বজনীন পেনশন স্কিমসংক্রান্ত লিফলেট, বুকলেট, ফ্লায়ার ইত্যাদি বিতরণ করা এবং এ স্কিমের সুফল সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে।
এতে বলা হয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়সহ জেলা-উপজেলার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে হেল্পডেস্ক স্থাপন করতে হবে। বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দাপ্তরিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম’ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব এনজিওকে এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি দপ্তরকে এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে। উঠান বৈঠক, তথ্য আপা, কমিউনিটি ক্লিনিক ইত্যাদি মাধ্যমে প্রচারণার উদ্যোগ নিতে হবে।
স্থানীয় কেবল টিভি নেটওয়ার্কে সর্বজনীন পেনশন স্কিম সম্পর্কে টিভি স্কুল প্রদর্শনের উদ্যোগ নিতে হবে। সিনেমা হলগুলোতে শো শুরু হওয়ার আগে এবং মধ্যবিরতিতে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ভিডিও প্রদর্শনের নির্দেশনা দিতে হবে। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিম সম্পর্কে সচেতন করে তাদের মাধ্যমে অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রচনা লিখন প্রতিযোগিতা ইত্যাদির আয়োজন করতে হবে।
ইমাম ও পুরোহিতদের মাধ্যমে মসজিদ এবং উপাসনালয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিম সম্পর্কে খুতবা বা বয়ান কিংবা আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম সম্পর্কে জনগণকে সম্যকভাবে অবহিত ও আগ্রহী করার লক্ষ্যে বহুমুখী প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
মনিটরিং কার্যক্রম
সর্বজনীন পেনশন স্কিম মাঠ পর্যায়ে সুষ্ঠু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গঠিত বিভাগীয় কমিটি, জেলা কমিটি ও উপজেলা কমিটি কর্তৃক নিয়মিতভাবে পরিবীক্ষণ করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোথাও কোনো সমস্যা দেখা দিলে জাতীয় বাস্তবায়ন ও সমন্বয় কমিটির পরামর্শ নিতে হবে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ নিজস্ব সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনায় যথা পদ্ধতিতে সার্বিক মনিটরিং করবে। যথাযথভাবে মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে যথোপযুক্ত ডিজিটাল পরিকাঠামো চালু করাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
কর্মসূচির অগ্রগতি
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় প্রগতি, প্রবাস, সুরক্ষা ও সমতা স্কিম চালু করার ৭ মাস ১০ দিন পার হয়েছে গতকাল বুধবার। এ সময়ের মধ্যে দেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশি মিলিয়ে সর্বজনীন পেনশনের গ্রাহক হয়েছেন ৪০ হাজার ৭৭১ জন, যা আশানুরূপ নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চাঁদা জমা হয়েছে ৩৮ কোটি ৯৬ লাখ ৯০ টাকা। সবচেয়ে বেশি গ্রাহক হয়েছেন সুরক্ষা কর্মসূচিতে ১২ হাজার ৪৭৫ জন। এ ছাড়া প্রগতিতে ৯ হাজার ২৪১, সমতায় ১৮ হাজার ৪৯৭ এবং প্রবাসে ৫৫৮ জন গ্রাহক হয়েছেন।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, গত মাসে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা দেড় থেকে দুই হাজার হলেও চলতি মাসে এ সংখ্যা বেশ বেড়েছে। প্রচার বাড়লে এ কর্মসূচিতে আরও গতি আসবে।