শ্রমিক পাথর ভাঙছেন ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে

Home Page » সংবাদ শিরোনাম » শ্রমিক পাথর ভাঙছেন ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে
রবিবার ● ২৪ মার্চ ২০২৪


মেশিনে ভাঙা হচ্ছে পাথর, উড়ছে কণা ও ধুলাবালু। এর মাঝেই মাস্ক ছাড়া কাজ করছেন শ্রমিকরা। পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকায়।

 বঙ্গনিউজঃ  জীবন সংগ্রামী মমেনা বেগম। জটিল রোগে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও পাথর ভাঙার কাজ করে জীবন গড়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া এলাকায়। কাজ করেন তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকায় পাথরের সাইটে। ৪৫০ টাকা হাজিরায় সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। দীর্ঘদিন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করায় শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। জটিল সিলিকোসিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত মমেনা মাঝে মধ্যেই হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান পাথরের স্তূপে।

ষাটোর্ধ্ব মমেনার ছেলেসন্তান নেই, স্বামী কিডনি রোগে শয্যাশায়ী। তিন মেয়েকে লালন-পালন করতে হয়। এখন নিজেই অসুস্থ। ১১ বছর ধরে পাথর ভাঙার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি।
এদিকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকায় অবাধে চলছে অবৈধ পাথর ভাঙার মেশিন। তিন শতাধিক ট্রাকে চলে পাথর ওঠানামা। চার শতাধিক মেশিনে উৎপাদিত পাথরের গুঁড়া আর বালুকণায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে গোটা এলাকা। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে প্রকৃতি ও পরিবেশ। নষ্ট হচ্ছে ফসলের ক্ষেত, ফল-ফুলের মুকুল। শ্রমিকদের পাশাপাশি স্থানীয়রা আক্রান্ত হচ্ছেন জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ মরণব্যাধি সিলিকোসিসে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ভুটান, নেপাল ও ভারত থেকে প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪০০ ট্রাকে বোল্ডার পাথর আমদানি হয়। দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মেশিনে চলছে পাথর ভাঙার কাজ। এসব গুঁড়া পাথর বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে এখানে কাজ করেন বিভিন্ন এলাকার নারী-শিশুসহ পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক। সকাল থেকে শুরু হয় মেশিনের উচ্চ শব্দ। শ্রমিকের নাক, মুখ, শরীরসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর, ফসলের ক্ষেতেও জমে থাকে ধুলার স্তূপ। শ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহার করার উপায় নেই। কারণ মাস্ক পরলে তাতে ধুলা জমে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এই এলাকায় ‘স্টোন ক্রাশিং জোন’ করার দাবি দীর্ঘদিন থেকেই উপেক্ষিত। শ্রমিকদের ন্যূনতম স্বাস্থ্য সচেতনতায় কারও কোনো উদ্যোগ নেই।

সরেজমিন কথা হলো দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার এলাকার তোহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। কাজ ছাড়া কী করে খাব। আমার হাঁটুতে ব্যথা, মাথা ঘোরে, শরীরে নানা রোগ। শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। সর্দি জ্বর হয়। কাজ না করলে কী খেয়ে বাঁচব। একই এলাকার শ্রমিক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘পাথর ভাঙার কাজ করে শরীরে অনেক ব্যথা হয়।’ শিশু চয়ন জানাল, ‘বাবা-মা এই কাজ করতেন। এর পর শ্বাসকষ্টে মা মারা যান। এক দিন বাবাও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পর থেকে আমিও কাজ শুরু করি।’

পাথর ভাঙা মেশিনের মালিক আব্দুল্লাহ রহমান মামুন বলেন, তেঁতুলিয়ার ভজনপুর থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত ৮০০ মেশিনে পাথর ভাঙা হয়।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এস এম মাহবুব উল আলম বলেন, সিলিকোসিস রোগ হয় মূলত বালু ও পাথরের ধূলিকণা থেকে। এই রোগের উপসর্গ বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, মাথা ঘোরা। রোগীর শরীর নীলাভ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খোদা মিলন বলেন, পাথর ভাঙার ফলে প্রতিটি বাড়িতে ধুলার স্তূপ হয়। গাছে ফল ধরে না। আলাদা একটি ‘স্টোন ক্রাশিং জোন’ করার চিন্তা ছিল।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বী বলেন, গত মাসে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ মেশিন মালিক ও শ্রমিকদের সতর্ক করা হয়েছিল। স্থলবন্দরের আশপাশে কোনো স্টোন ক্রাশিং জোন করা যায় কিনা, এ নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২:১১:০৩ ● ১৫৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ