বঙ্গনিউজঃ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি আরও কিছুটা স্থবির হয়ে পড়েছে। চলতি অর্থবছর শেষ হতে আর মাত্র চার মাস বাকি। অথচ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপির বাস্তবায়নের সার্বিক হার এক-তৃতীয়াংশেরও কম। সব মিলিয়ে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৩১ দশমিক ১৭ শতাংশ, যা গত ১৪ অর্থবছরের একই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কম।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। গতকাল বুধবার আইএমইডির ওয়েবসাইটে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে খরচ হয়েছে মাত্র ৮৫ হাজার ৬০২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৮২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের এডিপিতে ১ হাজার ৩৯২টি প্রকল্পের বিপরীতে মোট বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ বাদ দিয়ে এ অর্থবছর এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) অনুমোদিত সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ মূল এডিপির ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ কমে গেছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, এডিপি বাস্তবায়ন হার কম হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ঠিকমতো অর্থছাড় না হওয়া। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় কিছু উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ ছাড় কমেছে। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হচ্ছে।
বিগত বিভিন্ন অর্থবছরের আট মাসের এডিপি বাস্তবায়ন চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়ন হয় ২০১২-১৩ অর্থবছরে। আট মাসে বাস্তবায়নের হার ছিল মোট বরাদ্দের ৪৪ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ হার ছিল ৩৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৩৮ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১৫-১৬ এবং ২০২০-২১ সালে ছিল ৩২ শতাংশের ওপরে। এ তিন অর্থবছর ছাড়া বাকি বছরগুলোতে আট মাসে ৩৭ শতাংশের ওপরে ছিল এডিপি বাস্তবায়নের হার।
অবশ্য আট মাসের সার্বিক চিত্র নেতিবাচক হলেও একক মাসের হিসাবে গেল ফেব্রুয়ারি মাসে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে এডিপি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ১১ হাজার ১৩৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। গড় বাস্তবায়নের হার ৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই মাসে খরচ হয়েছিল ১০ হাজার ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৩০ শতাংশেরও কম– এমন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে ২০টি। সর্বোচ্চ বরাদ্দের ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। মোট বরাদ্দের মাত্র ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ খরচ করেছে মন্ত্রণালয়টি। এডিপিতে এই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৯ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। আট মাসে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৩৭৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকার সারিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। আট মাসে তাদের বাস্তবায়ন ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। তৃতীয় সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয়টির বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ২০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
অন্যদিকে সর্বোচ্চ বরাদ্দের মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের মধ্যে এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে এগিয়ে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। বাস্তবায়নের হার প্রায় ৪৭ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হারে বাস্তবায়ন হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে। বাস্তবায়নের হার ৪৬ দশমিক ৪১ শতাংশ। অবশ্য অর্থের বিবেচনায় বেশি খরচ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিভাগটি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে খরচ করেছে ১৭ হাজার ৭৮৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ৪৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ। সবচেয়ে কম খরচ করেছে বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়। তাদের খরচ ২৪ লাখ টাকা। যদিও তাদের জন্য এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ১ কোটি টাকা।