
বঙ্গনিউজঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুর চার দিন পার হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাস এখনও উত্তাল। গতকাল মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে অবন্তিকার মৃত্যুর বিচারের দাবিতে প্রশাসনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। এদিকে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।
গতকাল ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে প্রশাসনকে প্রতীকী লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে সংহতি সমাবেশ করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়ামে শোকসভার আয়োজন করে আইন বিভাগ।
লাল কার্ড সমাবেশে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী সামিরা মৌ বলেন, নিপীড়নবিরোধী সেলে শুধু কমিটি করে দিলেই হবে না, একজন আইনজীবীও নিয়োগ দিতে হবে। নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী কিশোর সাম্য বলেন, নিপীড়নবিরোধী সেলে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিয়োগ দিতে হবে। প্রশাসন এখনও অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার করেনি। অতিদ্রুত দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।
মহিলা পরিষদের সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার সংঘটিত যৌন নিপীড়নের ঘটনা শিক্ষাঙ্গনকে চরম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলছে। আজ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত। হাইকোর্টের রায় অনুসারে গঠিত যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটিকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শোকসভায় উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, প্রাক্তন প্রক্টরের কাছে অবন্তিকার দেওয়া অভিযোগ নিয়ে কে কে অবহেলা করেছে, তার তদন্ত হবে। তবে অবন্তিকার বিষয়ে কাউকে রাজনৈতিক খেলা খেলতে দেওয়া হবে না। আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। অবন্তিকার মৃত্যুতে আমি ভীষণভাবে দগ্ধ।
সম্প্রতি আলোচনায় আসা ফারজানা মিমের যৌন হয়রানির প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, ক্যাম্পাসের যৌন নিপীড়ন বাক্সগুলো পরিষ্কার করে নতুন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাক্সগুলোর চাবি আমার কাছে থাকবে। আমি নিজে সেগুলো খুলে চেক করব প্রতিনিয়ত। আমি সব সময় মেয়েদের পক্ষে দাঁড়াব। যৌন হয়রানি ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
ফের কারাগারে দ্বীন ইসলাম
অবন্তিকার আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেননি। এক দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল পুলিশ তাঁকে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে। কিন্তু ঘটনার বিষয়ে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি না হওয়ায় আদালত থেকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত সোমবার একই আদালত এ মামলায় আসামি অবন্তিকার সহপাঠী রায়হান সিদ্দিক আম্মানকে দুই দিনের এবং দ্বীন ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত থেকে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় নেওয়া হয়। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ হোসেন বলেন, সহকারী প্রক্টরকে জিজ্ঞাসাবাদে অবন্তিকার বিষয়ে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কিন্তু তিনি ঘটনার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। এদিকে দুই দিনের রিমান্ডে থাকা অবন্তিকার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিককে আগামীকাল আদালতে হাজির করা হবে।
গত শুক্রবার রাতে কুমিল্লা নগরের উত্তর বাগিচাগাঁও এলাকার ভাড়া বাসায় সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন অবন্তিকা। আত্মহত্যার আগে তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে তাঁর মৃত্যুর জন্য দ্বীন ইসলাম ও আম্মানকে দায়ী করেন।