বঙ্গনিউজঃ বাজারে কমবেশি সব নিত্যপণ্যের দামই বল্গাহীন। রোজার দিন দশেক বাকি থাকতেই ইফতারের অন্যতম পদ রসালো ফলের দরেও উত্তাপ ছড়াচ্ছে। এতে ফলপ্রেমী ভোক্তাদের কাছে যেন ‘তেতো’ হয়ে উঠছে রকমারি ফল।
ফল আমদানিকারকরা জানান, ডলারের দর অনেক বেড়েছে। আপেল, কমলা, আঙুর– এ জাতীয় ফল দেশে উৎপাদন হয় না। আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হয়। তবে গত মে মাস থেকে এসব পণ্যকে বিলাসী পণ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আরোপ করা হয়েছে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক। চার দিন আগে দুটি ফলে নতুন করে আরও শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া চাহিদাও বেড়েছে। এ কারণে ফলের বাজার কিছুটা অস্থির হয়ে উঠেছে।
ভোক্তাদের দাবি, ডলারের কাহিনি নতুন নয়। রোজা ঘনিয়ে আসায় ব্যবসায়ীরা নানা ছুতোয় ফলের দাম বাড়িয়েছেন। বিদেশি ফলের কারণে দেশি ফলের দামও বেড়েছে। সরকারের উচিত, শুধু মুখে না বলে বাজার তদারকি কার্যক্রম কার্যকর করা। তাতে অন্তত নিম্ন আয়ের মানুষ রমজানে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে থাকতে পারবে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে দেশি-বিদেশি সব ধরনের ফলের দাম। ক্রেতার মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে মালটার দর। পাঁচ-ছয় দিন আগে মালটার কেজি ছিল ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায়। সে হিসাবে কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা। অথচ গত বছর এ সময় মালটার কেজি ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। একইভাবে আফ্রিকান সবুজ আপেলের দর ২৪০ থেকে বেড়ে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে চায়না ফুজি আপেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায়।
সপ্তাহখানেক আগে নাশপাতির কেজি বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা।
একইভাবে কমলার কেজি ছিল মানভেদে ১৯০ থেকে ২২০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৭০ টাকা।
এ ছাড়া আনার ও আঙুর কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়েছে। মাঝারি আকারের আনারের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা, কালো আঙুরের কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ এবং সাদা আঙুরের কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বিদেশি এসব ফলের দাম বাড়ার উত্তাপ লেগেছে দেশি ফলে। বাংলা কলার ডজন আট-দশ দিন আগেও কেনা গেছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এখন ডজনে গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। চম্পা কলা ডজনে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। সবরি কলা ডজনে ১০ থেকে ১৫ টাকার মতো বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাইব্রিড বরই বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা দরে। মাঝারি আকারের আনারসের পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
বাজারে তরমুজের বেচাকেনা শুরু হয়েছে। বিক্রেতারা প্রতিকেজির দর রাখছেন ৬০ থেকে ৭০ টাকা। সেই হিসাবে মাঝারি আকারের একটি তরমুজের দাম পড়ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। পেয়ারার কেজি সপ্তাহ দুয়েক আগে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এখন খরচ করতে হচ্ছে কেজিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
গত এক সপ্তাহে বাদামতলীর পাইকারি বাজারে সব ধরনের ফলের দাম বেড়েছে বলে জানান কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মো. খোরশেদ। তিনি বলেন, ‘দাম বাড়ার কারণে মানুষ ফল কম কিনছে। আগে যিনি দুই-তিন কেজি করে মালটা-আপেল কিনতেন, এখন এক-দেড় কেজির বেশি কিনতে চান না। কেউ কেউ এমনভাবে দর কষাকষি করে, তাতে বিরক্ত হয়ে যাই।’
চার-পাঁচ দিন আগে নতুন করে দুটি ফলে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বাড়ানোর কারণে ফলের বাজারে প্রভাব পড়েছে বলে জানান ফল আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, মে মাসে ফল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসানো হয়েছে, যা এখনও বহাল। চার দিন আগে নাশপাতি ও কমলার কেজিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৪০ সেন্ট থেকে বাড়িয়ে ৭০ সেন্ট করা হয়েছে। তাতে ৯ কেজির নাশপাতির কার্টনে এখন ৫০০ টাকা বেশি শুল্ক দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ কেজিতে ৫৫ টাকার মতো শুল্ক বেড়েছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে দর বাড়ল কেন– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, গত সপ্তাহে বাজার বেশ খারাপ (বিক্রি কম) ছিল। বাজারে এখন নতুন পণ্য ঢুকছে, চাহিদাও বাড়ছে। সে জন্য দামে প্রভাব পড়েছে।
বন্দর থেকে পণ্য খালাস করাই এখন আমদানিকারকদের জন্য বড় কষ্টের বিষয় বলে মনে করেন ফল আমদানিকারক ও বাদামতলীর বাচ্চু অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী বাচ্চু শেখ। তিনি বলেন, আমদানিমূল্যের দ্বিগুণ দর হিসাব করে শুল্ক নিচ্ছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। আমদানিমূল্য দেখালেও কানে তোলেন না তারা। ফল পচনশীল পণ্য, বন্দরে ফেলে রাখা যায় না। বাধ্য হয়ে বেশি শুল্ক দিয়ে ফল খালাস করতে হয়। তাই আমদানিমূল্যের সঙ্গে এ বাড়তি শুল্ক যোগ করেই বিক্রি করতে হয়।
ফলের বাজারে নজরদারি না থাকায় ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, বাজারে যেহেতু সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, সে জন্য ফল ব্যবসায়ীরাও সুযোগ নিচ্ছেন। প্রতিবছর রমজানের সময় ব্যবসায়ীরা ফলের দাম বাড়ান, এবার রমজানের অনেক আগে দাম বাড়ালেন।