বঙ্গনিউজঃ অ্যান্ড দ্য উইনার ইজ…। ফিফা দ্য বেস্টের গালা অনুষ্ঠানই হোক কিংবা উয়েফার বর্ষসেরা পুরস্কার। যে কণ্ঠের সঙ্গে ভীষণভাবে পরিচিত ফুটবলবিশ্ব, সেই রেশমিন চৌধুরীর শেকড় যে বাংলাদেশে, তা অনেকেরই জানা। এটাও জানা, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ ক্রীড়া আইটিএন, ব্লুমবার্গ, রিয়াল মাদ্রিদ টিভি, বিবিসি স্পোর্ট, বেন স্পোর্ট, টিএনটি স্পোর্টস হয়ে বর্তমানে কাজ করছেন টক স্পোর্টে। প্রয়াত বাবা শাহাব উদ্দিন চৌধুরীর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক একটা বইয়ের প্রকাশনী অনুষ্ঠান করতে ১৮ বছর পর মাকে নিয়ে এসেছেন দেশে। আনন্দিত তিনি প্রিয় ঢাকার কসমোপলিটনের রূপান্তর দেখে। খুশি তিনি নারী ক্রিকেট ও ফুটবলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা দেখে। আফসোস তাঁর পদ্মা সেতু দিয়ে বাবাকে নিয়ে একবার ফরিদপুরের ভাঙ্গায় গ্রামের বাড়িতে যেতে না পারার। লন্ডন থেকে ঢাকায় সংক্ষিপ্ত সফরে এসে এক সন্ধ্যায় মনের জানালা খুলে দিয়েছেন রেশমিন। শুনিয়েছেন একজন বাংলাদেশি মুসলিম পরিবারের মেয়ে হয়ে কীভাবে, কতটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি আজ খেলাধুলার বিশ্ব মিডিয়ায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পরিবারের সমর্থন, নিজের বিশ্বাস আর ইচ্ছাশক্তির প্রতি প্রবল আস্থা থাকলে, বিভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে আপনভাবে মিশলে একজন রেশমিন চৌধুরী হওয়া যায় সেই গল্পও বলেছেন। শুনিয়েছেন বছর চার আগে কীভাবে উয়েফার অনুষ্ঠানে মেসি আর রোনালদোকে পাশাপাশি বসিয়ে তাদের নীরব বন্ধুত্বের কথা আবিষ্কার করেছিলেন, কীভাবে ইংলিশের পাশাপাশি ফ্রান্সের একটি ছোট্ট শহরে গিয়ে ফ্রেঞ্চ আর সেভিয়া গিয়ে স্প্যানিশ রপ্ত করেছেন। জিদান, বেকহাম, বেনজামাদের সঙ্গে তাঁর পারিবারিক বন্ধুত্বের কথাও শুনিয়েছেন এবং অবশ্য সে কথাটিও জোর দিয়ে বলেছেন- আমার জন্ম ১৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কটা তো তাঁর শুধু রক্তের নয়, আত্মারও।
চোস্ত স্প্যানিশ বলে মেসিকে হাসানো কিংবা ফ্রেঞ্চ বলে জিদানের প্রশংসা কুড়ানো সে তো আর চাট্টিখানি কথা না। এএফসি অ্যাওয়ার্ডজয়ী সেই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ক্রীড়া সাংবাদিক রেশমিন চৌধুরী যখন জানালেন ছেলেবেলায় হারমোনিয়াম বাজিয়ে রবীন্দ্রসংগীত আর নজরুল গীতি গাইতেন, তখন আর তা জেনে অবাক হওয়ার কিছু থাকে না। জন্ম, পড়ালেখা, বেড়ে ওঠা- সব লন্ডনে হলেও বিশুদ্ধ এক বাংলাদেশি পরিবারে বাঙালিয়ানার সবটুকু স্পর্শই লালিত করেন রেশমিন। তাই লন্ডনে কমিউনিটির কেউ যখন তাঁকে ‘ফরেনার’ বলেন, তখন ভীষণ কষ্ট পান তিনি। গান আর মঞ্চ নাটক থেকে কীভাবে কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ব ফুটবলের বিখ্যাত সব চ্যানেলে ব্রডকাস্ট জার্নালিজম করছেন, ফিফা-উয়েফার অনুষ্ঠানগুলোতে কীভাবে উপস্থাপনা করেছেন, মেসি-রোনালদো থেকে শুরু করে বেকহাম-জিদানের এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার কীভাবে নিয়েছেন- সব গল্প করলেন রেশমিন বনানীতে তাঁর খালার ফ্ল্যাটে বসে। মাঝে মোবাইল স্ক্রিনে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যালার্ট দেখে চোখ বুলিয়েই মিষ্টি হেসে নিলেন ‘যাক, লিগ কাপটা লিভারপুলই পেল। ক্লপ এটা ডিজার্ভ করেন।’ কথা ছিল ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় নেওয়ার। কিন্তু কোথা দিয়ে রেকর্ডিং ৫৩ মিনিট হয়ে গেল, তা টেরই পেলেন না সঞ্জয় সাহা পিয়াল।