বঙ্গনিউজঃ রপ্তানি খাতের সুবিধার্থে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও সচেতন হওয়া উচিত। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির কার্যকারিতা ভূমিকা রাখতে না পারায় পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘এলডিসি পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের প্রস্তুতি’ শীর্ষক সেমিনারে শনিবার এসব কথা বলেন তারা। ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।
প্রবন্ধে ড. সেলিম বলেন, ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সুযোগও তৈরি হবে। তবে সেগুলো মোকাবিলার জন্য এখনই যথাযথ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন একান্ত অপরিহার্য। চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- নীতি সহায়তা ও সংস্কার, অর্থায়ন, লজিস্টিক খাতের উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি এবং অর্থ খাত।
তিনি বলেন, ৫ দশকে রপ্তানি বাড়লেও পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে, যেখানে প্রতিযোগী দেশগুলোর অগ্রগতি লক্ষ্যণীয়। মুদ্রানীতি ও অর্থবিষয়ক নীতিমালার সমন্বয়, সরকারি সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো, খেলাপি ঋণ হ্রাস এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজারের নির্ভরতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো এলডিসি-পরবর্তী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির কার্যকর উদ্যোগে এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণে আরও সচেতন।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন বিজিএমইএ পরিচালক ও ঊর্মি গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ এবং সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারি। আসিফ আশরাফ বলেন, কোনো আলোচনা ছাড়াই পোশাক খাতের প্রণোদনা প্রত্যাহার করা হলো- যদিও এ খাতে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। শিল্পের স্বার্থে প্রণোদনা সুবিধা ২০২৬ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সহায়ক এক্সচেঞ্জ রেট থাকা দরকার বলে মত-প্রকাশ করেন।
মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, তৈরি পোশাক ছাড়া পাট, চামড়া ও চা প্রভৃতি পণ্যে রপ্তানি তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। কারণ নীতি সহায়তা ও সক্ষমতার অপ্রতুলতা। প্রতিযোগী দেশগুলো কিভাবে তাদের রপ্তানিকারকদের সহায়তা দিচ্ছে তা অনুসরণ করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বৈদেশিক মুদ্রার একক বিনিময় হার নির্ধারণের ওপর জোরারোপ করে তিনি বলেন, ব্যবসা পরিচালন ব্যয় কমাতে না পারলে উদ্যোক্তারা সক্ষমতা হারাবেন। দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আশ্বাস বাড়ালে দেশি বিনিয়োগ বাড়বে বলে তিনি মত-প্রকাশ করেন।