বঙ্গনিউজঃ ১৯৫২ সালের এ সময়টাতে সবার চোখ তখন একুশে ফেব্রুয়ারির দিকে। ঘোষিত কর্মসূচি কিভাবে সফল করা যায়, তা নিয়েই ছাত্রসমাজের মধ্যে উত্তেজনা।
১৮ ফেব্রুয়ারি এসে সেই উত্তেজনা আরেকটু বৃদ্ধি পায়। ইতোমধ্যে দেশের নানা জায়গায় এ আন্দোলন ও কর্মসূচির খবর পৌঁছে গেছে। জাতীয়তাবাদী নেতারাও দেশের নানা জায়গায় ঘুরে ভাষা আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ভাষার এ আন্দোলন ঘিরে বাড়ছিল রাজনৈতিক সচেতনতা।
‘একুশের দিনলিপি’ গ্রন্থে ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক বলেন, সভা-সমাবেশ, মিছিলে রাজবন্দিদের মুক্তি দাবির পাশাপাশি একুশে ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রস্তুতিও চলতে থাকে।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয়-মওলানা ভাসানী ও শামসুল হক এ সময় আওয়ামী মুসলিম লীগকে তৃণমূল স্তরে সংগঠিত করতে প্রদেশের সর্বত্র ঘুরে সভা করছিলেন।
এ সাংগঠনিক তৎপরতাও দেশের সর্বত্র ভাষা আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে দিতে সাহায্য করেছিল। সাপ্তাহিক ইত্তেফাক তখন গুরুত্বের সঙ্গে মজলুম জননেতা ভাসানীর এসব তৎপরতার সংবাদ নিয়মিত ছেপে চলেছে।
এভাবে নানা রাজনৈতিক ঘটনার প্রসঙ্গ অনুষঙ্গ নিয়ে বায়ান্নর ফেব্রুয়ারির দিনগুলো এক একটি পাতা ঝরার মতো পার হতে থাকে। এগিয়ে আসতে থাকে একুশে ফেব্রুয়ারির মাহেন্দ্রক্ষণ। অপেক্ষা, কখন শেষ হবে ‘কাউন্টডাউন’। সবকিছু নিয়ে ক্রমশ টেনশনবিদ্ধ রাজনৈতিক অঙ্গন, বিশেষ করে ছাত্রসমাজ। ছাত্রাবাসগুলোয় চাপা উত্তেজনা আসন্ন একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে।
এটি মূলত ছাত্র আন্দোলন হলেও একে ঘিরে দেশব্যাপী জনসাধারণের মধ্যে এক ধরনের রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি হয়। ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য অঞ্চলের শিল্পকারখানার শ্রমিকদের মধ্যে রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রতি সুস্পষ্ট সমর্থন দেখা দিতে থাকে। একুশ উপলক্ষ্যে তাদের উপস্থিতি ছিল মাঠে-ময়দানে, কখনো রাজপথে ঘোষিত কর্মসূচি সফল করতে।
১৭, ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি একইভাবে চলে। ছাত্রসমাজে উত্তেজনা, অস্থিরতা কিছুটা বেড়েছে-এই যা এবং তা ছাত্র-যুব নেতাকর্মীদের মধ্যে। আগেই বলা হয়েছে, এ সময় একুশের প্রস্তুতির পাশাপাশি রাজবন্দিদের মুক্তির দাবি ছাত্রসমাজে বেশ প্রাধান্য পায়।
তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই, ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উদ্যোগে রাজবন্দি মুক্তি আন্দোলন কমিটি গঠিত হয়।