জোর প্রস্তুতির তাগিদ বাণিজ্য সুবিধা আদায়ে

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » জোর প্রস্তুতির তাগিদ বাণিজ্য সুবিধা আদায়ে
শনিবার ● ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪


জোর প্রস্তুতির তাগিদ বাণিজ্য সুবিধা আদায়ে

বঙ্গনিউজঃ   বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় করতে এখনই প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সুবিধা ধরে রাখতে সম্মিলিত প্রস্তুতির প্রয়োজন। বিশেষ করে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের আলোচনায় স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণ পর্যায়ে সুবিধা আদায় এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়নশীল দেশের সুবিধার দিকে নজর দিতে হবে বাংলাদেশকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন: বাংলাদেশের ভাগ্যে কী থাকছে?’ শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‍্যাপিড) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেছে এফসিডিও। র‍্যাপিড চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।
ড. মসিউর রহমান বলেন, ডব্লিউটিও মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ত্রিমাত্রিক দিক থেকে নজর দিতে হবে এটা সত্যি। তবে বাংলাদেশ যে অবস্থানে পৌঁছেছে, সেখান থেকে পেছনে হটার সুযোগ নেই। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে জায়গা করে নিতে হবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। এমনকি আরও আগে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল। এর জন্য সময় নিলে পিছিয়ে পড়তে হবে। বিশ্ববাণিজ্যে সামনে এগিয়ে যেতে সবাই মিলে কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাবেক সচিব শরিফা খান বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ পর্যায়ে তিন বছর বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও যুক্তরাজ্য। তবে ২০২৯ সাল থেকে এ সুবিধা থাকবে না। এ জন্য এখনই ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় জোরালো অবস্থান রাখতে প্রস্তুতি নিতে হবে। যাতে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে গেলে তখন প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যে জিএসপি প্লাসের মতো বাণিজ্য সুবিধা নেওয়া যায়। তা ছাড়া ট্রিপস সুবিধা থাকবে না। এ জন্যও প্রস্তুত হতে হবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশকে তিনটি স্বার্থ নিয়ে কাজ করতে হবে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এলডিসির কাতারের সুবিধা পাওয়া, এরপর আরও তিন বছর এলডিসি থেকে উত্তরণ পর্যায়ে সুবিধা পাওয়া এবং ভবিষ্যতে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার ক্ষেত্রে এখন প্রস্তুতি নেওয়া। মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় খেয়াল রাখতে হবে উন্নয়নশীল দেশের জন্য কী কী সুবিধা আসছে।
তিনি বলেন, ২০২৬ সালের পর ট্রিপস সুবিধা থাকবে না। ফলে দেশে মোট উৎপাদিত ওষুধের অন্তত ২০ শতাংশে পেটেন্ট ফি দিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এতে বাজারে দাম বেড়ে যাবে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এর কারণে দেশে বেশি ব্যবহৃত ইনসুলিন তৈরিতে আট গুণ পর্যন্ত খরচ বেড়ে যাবে।

প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তাফা আবিদ খান বলেন, মৎস্য খাতে ভর্তুকির ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। ইলিশ বেশির ভাগ নদীতে উৎপাদন হচ্ছে– এটা দেখানো উচিত। এতে সুমদ্রে মৎস্য খাতের ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকবে না। শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ বা এর কম সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও ভর্তুকি দেওয়া যাবে। তবে ইলিশকে সামুদ্রিক হিসেবে দেখালে বাংলাদেশে এটি ১ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। তখন সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে সহায়তা দেওয়া যাবে না। তাই এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর কৃষি ও মৎস্য খাতে ভর্তুকি নিয়ে চাপ থাকবে। বিশেষ করে সমুদ্রে মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে। তবে কৃষি ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্যের ১০ শতাংশ দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ২ শতাংশের কম দিচ্ছে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রী পর্যায়ের ত্রয়োদশ সম্মেলন আগামী ২৬ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় কয়েক দফা স্থগিত থাকা দ্বাদশ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন ২০২২ সালের জুনে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন মাসুম, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের প্ল্যানিং এডিটর আসজাদুল কিবরিয়া, র‍্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:২৮:১৭ ● ১৬৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ