জন্মের পরপরই অনেকে শিশুকে গোসল করানোর জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। তাদের ধারণা, যত দ্রুত শিশুর শরীরের ময়লা পরিষ্কার করা যাবে, ততই মঙ্গল। আবার অনেকে মনে করেন, চুল কাটার পর কিংবা নাভি পড়ার পর গোসল করানো উত্তম।
চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে, স্বাভাবিক শিশুদের জন্মের ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর গোসল করানো উচিত। এর আগে গোসল করানো ঠিক নয়। শিশুকে পরিচ্ছন্ন রাখতে নিয়মিত গোসল করাতেই হবে। শীতকালে আবার ঘন ঘন গোসল না করালেও চলে। এ সময় মলত্যাগ ও প্রস্রাবের পর শিশুকে ভালোভাবে পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রস্রাব বা মলত্যাগ করার পর শিশুকে গোসলের উদ্যোগ নিতে হবে। এ সময় ঘর বা বাথরুমের তাপমাত্রা যেন স্বাভাবিক থাকে, তা দেখে নিতে হবে। যিনি গোসল করাবেন, তাঁর হাত ভালোমতো ধুয়ে নিতে হবে। গোসলের জন্য আগে থেকেই বাথটাব বা গামলাতে স্বাভাবিক তাপমাত্রার অথবা শীতকালে কুসুম গরম পানি তৈরি রাখুন। শিশুর গা মোছানো ছাড়াও ভেজা শরীর ধরার জন্য বাড়তি কাপড় বা টাওয়েল পরিধেয় কাপড়ের সঙ্গে রাখুন। গোসলের আগে শিশুর কাপড়চোপড় খুলে মলমূত্র থাকলে তা পরিষ্কার করে তার পর বাথটাবে নামাতে হবে।
অনেকে গোসলের পানিতে সামান্য ডেটল বা স্যাভলন দিয়ে থাকেন। অনেকে আবার বাড়তি সতর্কতা হিসেবে ব্যবহার করেন নিমপাতা।
আসল ব্যাপারটি হলো, পানি হতে হবে স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। নাভি যাতে না ভেজে, সেদিকে বাড়তি খেয়াল রাখা চাই।
মনে রাখবেন, নবজাতক প্রথমবার পানির স্পর্শ পেয়ে কেঁদে উঠতে পারে। শিশুকে তাই ধীরে ধীরে পানির সংস্পর্শে আনুন। কিছুক্ষণ পরেই শিশু পানির সঙ্গে মানিয়ে নেবে। তবে বেশি কান্না করলে পানি থেকে উঠিয়ে নিন। শিশুর জন্য বিশেষভাবে তৈরি কম ক্ষারযুক্ত সাবান, শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। সাবান কেনার সময় তার পিএইচ লেভেল দেখে নিন। এই লেভেল ৭-এর নিচে থাকাই ভালো। গরমে শিশুর মাথা ও ত্বকে তেল মাখাবেন না। এর ফলে শিশুর রোমকূপ বন্ধ হয়ে উল্টো ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। গোসলের সময় শিশুর কান, বগল, কুঁচকি, কানের পেছনটা নরম কাপড় দিয়ে আলতো করে ঘষে দিতে হবে। মাথার ময়লা আলতো করে ঘষে পরিষ্কার করে ফেলুন। পায়খানা-প্রস্রাবের রাস্তা খুব ভালো করে ধুতে হবে। চার-পাঁচ মিনিটে গোসলের পর্ব শেষ করে সঙ্গে সঙ্গে শরীরটা মুছে কাপড় পরিয়ে দেবেন। আসলে গোসল করানোর পুরো প্রক্রিয়াতে নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগ প্রয়োজন।
লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, শিশু বিভাগ, জাতীয় হদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল